তৃপ্ত ঋত্বিক। শনিবার নিজের বাড়িতে। ছবি- শঙ্কর নাগ দাস
২.২-২-০-৬!
ছাপার ভুল নয়। ভুল পড়েনওনি। এটা সত্যিই একটা ক্রিকেট ম্যাচে বোলারের স্পেলের হিসেব। আর বিদেশ নয়, এমন অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটেছে এই শহরে, কলকাতায়!
ঘটিয়েছেন— ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়।
শনিবার দেশবন্ধু পার্কে সিএবি লিগের প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে ভবানীপুর বনাম মহমেডান ম্যাচ ছিল। ভাবা যায়, সেখানে ভবানীপুরের অফ স্পিনার ঋত্বিকের দাপটে মহমেডান কি না ধ্বংস হয়ে গেল ৩৭ রানে! ২৯১ তাড়া করতে নেমে। ভাবা যায়, ঋত্বিকের চোদ্দোটা ডেলিভারির একটাও ছোঁয়াতে পারেনি কোনও ব্যাটসম্যান! একটা এলবিডব্লিউ বাদ দিলে বাকি আউটের ধরনও এক— বোল্ড!
কোনও সন্দেহ নেই, ময়দানে এ দিন রেকর্ড করে গেলেন বঙ্গসন্তান। সিএবি-র স্থানীয় ক্রিকেটে স্মরণকালে কেউ এমন শূন্য রানে ৬ উইকেট নিয়ে চলে গিয়েছেন বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। শোনা গেল, দেশবন্ধু পার্কের উইকেট বোলার-বন্ধু ছিল। কিন্তু এতটাও নয় যে, ব্যাটসম্যান কিছুই করতে পারবে না। মহমেডান শুরু করেওছিল আক্রমাণাত্মক মেজাজে। কিন্তু ঋত্বিক আসার পর স্রেফ উড়ে যায়। ভবানীপুর ম্যাচ জেতে ২৫৩ রানে।
যা ঋত্বিকও বিশ্বাস করতে পেরেছেন বলে মনে হল না। ঋত্বিককে ধরা হলে বললেন, ‘‘আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। কী ভাবে যে সম্ভব হল, এখনও বুঝতে পারছি না। আমি তো নর্ম্যাল বোলিংটাই করছিলাম। কিন্তু যা যা করে উইকেট বার করতে চাইছিলাম, দেখলাম সব ঠিক সে রকম হচ্ছে।’’ যেমন? ‘‘যেমন প্রথম উইকেটের বলটা করার সময় ভাবলাম, স্টাম্পে করি। বলটা ড্রিফট করল আর ব্যাটসম্যান এলবিডব্লিউ হয়ে গেল। সোজাসুজি বললে, আমি আজ যা চেয়েছি, তাই হয়েছে।’’
ঋত্বিকের জীবন কিন্তু তাঁর এ দিনের মতো ইচ্ছে অনুযায়ী এত সহজে চলেনি। এমনিতে অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফস্পিন বোলিংটাও করেন। বাংলার হয়ে রঞ্জি জার্সি গায়ে উঠেছিল। কিন্তু তার পর আবার টিম থেকে হারিয়েও যান। সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসে, তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠে যায়। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে অ্যাকশন শুধরে ফের ময়দানে নামতে হয় ঋত্বিককে। আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ভাবলে কী মনে হয় অভিশপ্ত দিনগুলোর কথা? ‘‘সে এক সময় গিয়েছে। কিন্তু আমি বরাবর ভেবে এসেছি, লড়াইটা কখনও ছাড়ব না,’’ বলে দিচ্ছেন ঋত্বিক। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ছোট ছোট লক্ষ্যগুলো পূর্ণ হচ্ছে এখন। আমার আসল লক্ষ্য আবার রঞ্জি খেলা। কোনও দিন ভারত খেলা।’’ ঋত্বিকের কথাবার্তার শান্ত মেজাজটাও লোকজনকে যতটা অবাক করবে, ঠিক ততটাই অবাক লাগতে পারে আবার তাঁর রেকর্ড-পরবর্তী সময়ের ঘটনাবলীতে।
উৎসব নয়। শূন্য রানে ছ’উইকেট নেওযার দু’ঘণ্টার মধ্যে ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় আবার নেমে গেলেন প্র্যাকটিসে। ময়দান থেকে বারাসতের বাড়িতে ফিরে স্থানীয় অ্যাকাডেমির মাঠে! কেন?
ঋত্বিক সরল উত্তর দেন, ‘‘কী আছে, ম্যাচটা মোটে এক ঘণ্টা হল তো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy