Advertisement
E-Paper

সন্দেশখালি: বিজেপি নেত্রী মাম্পির মুক্তি, গঙ্গাধরের রক্ষাকবচ রইল, হাই কোর্টে দুই ধাক্কা রাজ্য প্রশাসনের

কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছে, সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে জেল থেকে। অন্য দিকে, বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালের রক্ষাকবচও বহাল রেখেছে আদালত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ২২:৫৬
(বাঁ দিকে) সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী পিয়ালি ওরফে মাম্পি দাস।  বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী পিয়ালি ওরফে মাম্পি দাস। বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালিকাণ্ডের জল গড়িয়েছে আদালতের চৌকাঠ পর্যন্ত। সেই আদালতের নির্দেশেই শুক্রবার আপাত স্বস্তি রাজ্যের প্রধান বিরোধী বিজেপি শিবিরে। ওই এলাকার বিজেপি নেত্রী পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলেছে কলকাতা হাই কোর্ট। অন্য দিকে, ভিডিয়োকাণ্ডে বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালের রক্ষাকবচও বহাল রেখেছে আদালত। এর ফলে, সন্দেশখালিকাণ্ডে শুক্রবার আদালতে রাজ্য প্রশাসন জোড়া ধাক্কা খেল, এমনটাই মনে করছে বিজেপি শিবির। তবে, আদালত মুক্তির নির্দেশ দিলেও শুক্রবার জেল থেকে ছাড়া পাননি পিয়ালি। শনিবার দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে তাঁর মুক্তি পাওয়ার কথা।

মাম্পিকে মুক্তির নির্দেশ

সন্দেশখালির ঘটনায় বহু অভিযোগে বার বার উঠে এসেছে পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পির নাম। তার মধ্যে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের অসত্য মামলা রুজু করানোর মতো অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি, সন্দেশখালির এক গৃহবধূও সেই অভিযোগ করেন সন্দেশখালি থানায়। পুলিশকে তিনি জানান, তাঁর গ্রেফতার হওয়া ভাইকে ছাড়ানোর শর্তে ধর্ষণের অসত্য অভিযোগ দায়ের করতে বলেছিলেন এই মাম্পি। পরে অভিযোগ তুলে নিতে চাইলে বিজেপির তরফে তাঁকে শাসানোও হয়। মাম্পি ওরফে পিয়ালির নাম শোনা গিয়েছিল সন্দেশখালির ‘স্টিং’ ভিডিয়োতে, বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের মুখেও। (আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।) একের পর এক অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের নোটিস পেয়ে গ্রেফতারি এড়াতে বসিরহাট আদালতে অগ্রিম জামিন চাইতে গিয়েছিলেন মাম্পি। কিন্তু সেখানে অন্য মামলা দিয়ে তাঁকে বেআইনি ভাবে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ। নিম্ন আদালত তাঁকে সাত দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন মাম্পি। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সেনগুপ্তের এজলাসে। বিচারপতি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত বন্ডে মামলাকারীকে অবিলম্বে হেফাজত থেকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৫এ ধারায় যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা-ও স্থগিত থাকবে। শুনানি চলাকালীন মাম্পির গ্রেফতারি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। মাম্পির গ্রেফতারির ক্ষেত্রে ১৯৫এ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়নি বলে অভিযোগ। বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘ম্যাজিস্ট্রেট কী করেছেন? ১৯৫এ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। তার পরেও তিনি কী ভাবে এই নির্দেশ দিলেন? এমন গ্রেফতারের নেপথ্যে মাস্টারমাইন্ড কে? এই মামলাটি কোন অফিসার দেখছেন?’’ রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি সেনগুপ্ত জানান, এ ভাবে কাউকে গ্রেফতার করাই যায় না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আপনারা হয়তো এই কোর্টকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশগুলি অন্তত মেনে চলুন।’’ পাশাপাশি, মাম্পিকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করে আদালত। শুক্রবার মাম্পির আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার আদালতে সওয়ালে জানান, গত ৭ মে তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় এফআইআর দায়ের হয়। তার দু’দিন পরে ৪১এ ধারায় নোটিস দেয় পুলিশ। গত ১৪ মে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনযোগ্য ধারায় জামিন নিতে গেলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ১২ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে নিম্ন আদালত। প্রথম দিন পুলিশের কেস ডায়েরি না দেখেই হেফাজতে পাঠিয়েছিল নিম্ন আদালত। আগামী ১৯ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

রক্ষাকবচ বহাল গঙ্গাধরের

বিজেপি অভিযোগ করেছিল, সন্দেশখালির তৃণমূল নেতারা সাধারণ মানুষের জমি কেড়ে নেওয়াই শুধু নয়, নিয়মিত ভাবে যৌন নির্যাতন চালাতেন এলাকার মহিলাদের উপর। রাতবিরেতে ডেকে পাঠানো হত তৃণমূলের পার্টি অফিসে। সেখানে চলত অত্যাচার, নিপীড়ন। এই অভিযোগে সরব হয়েছিল বিজেপি। এলাকার অনেক মহিলা থানায় গিয়ে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। এই ঘটনায় যখন কোণঠাসা তৃণমূল, তখনই প্রকাশ্যে আসে একটি ভিডিয়ো। স্টিং অপারেশন সম্বলিত সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। যদিও সেই ভিডিয়োর বিষয়বস্তু চমকে দেওয়ার মতো। ওই ভিডিয়োতেই সন্দেশখালি ২-এর বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা যায়, ধর্ষণের অভিযোগগুলি ‘সাজানো’। আসলে এমন কোনও কাণ্ডই ঘটেনি, কিন্তু রাজনৈতিক ‘মাইলেজ’-এর আশায় এগুলি সাজানো হয়েছে। স্টিং ভিডিয়োয় গঙ্গাধরকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নামও করতে শোনা গিয়েছে। হুল-বিদ্ধ হয়ে রাতারাতি কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিজেপি। বেপাত্তা হয়ে যান গঙ্গাধর। সেই অবস্থাতেই তাঁর ছবি ব্যবহার করে ভুয়ো ভিডিয়ো বানিয়ে ছড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন গঙ্গাধর। মামলাটি শুনছিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। গত মঙ্গলবার বিচারপতি জানিয়েছিলেন যে, সুপ্রিম কোর্টে সন্দেশখালি মামলার শুনানির পরেই তিনি মামলাটি শুনবেন। এই সময়ের মধ্যে গঙ্গাধরের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও পদক্ষেপও করতে পারবে না বলে জানিয়েছিলেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। কিন্তু শুক্রবার বিচারপতি জানিয়ে দেন যে, তিনি আর মামলাটি শুনবেন না। যে হেতু হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চেও সন্দেশখালির ঘটনা সংক্রান্ত মামলার শুনানি হচ্ছে, তাই গঙ্গাধরের মামলাটিও সেই বেঞ্চে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সন্দেশখালির মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ওই বেঞ্চই সন্দেশখালির ঘটনায় সিবিআইকে তদন্তভার দিয়েছে। তাই এখন গঙ্গাধর কয়ালের বিষয়টিরও ওই বেঞ্চে শুনানি হওয়া উচিত। মামলাটি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হল। পরবর্তী শুনানি কবে হবে, তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

Calcutta High Court BJP TMC CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy