Advertisement
০৫ মে ২০২৪
নাটক বঙ্গ ক্রিকেটে

জাতীয় দলে ব্রাত্য, ম্যাচই খেলতে চাননি মনোজ

জাতীয় দল নির্বাচনের ঢেউ যে বাংলা ক্রিকেটেও এ ভাবে আছড়ে পড়বে, কে জানত? শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ দুটো ওয়ান ডে ম্যাচের টিমে বিভিন্ন বদল ঘোষণার পর ঋদ্ধিমান সাহার কয়েক দিনের বিশ্রাম যদি বাংলা টিমের জন্য সুখবর হয়, তা হলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বঙ্গ ক্রিকেটে তীব্র ঝড় তুলে দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের এক ব্যাটসম্যান! তিনি কেদার যাদব। যাঁর জন্য আর একটু হলে মঙ্গলবারের ঝাড়খণ্ড ম্যাচ থেকে মনোজ তিওয়ারিকে হারাতে চলেছিল বাংলা!

প্র্যাকটিসে মনোজ। তখনও জানেন না ভারতীয় দলে তাঁর নাম নেই। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

প্র্যাকটিসে মনোজ। তখনও জানেন না ভারতীয় দলে তাঁর নাম নেই। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

জাতীয় দল নির্বাচনের ঢেউ যে বাংলা ক্রিকেটেও এ ভাবে আছড়ে পড়বে, কে জানত?

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ দুটো ওয়ান ডে ম্যাচের টিমে বিভিন্ন বদল ঘোষণার পর ঋদ্ধিমান সাহার কয়েক দিনের বিশ্রাম যদি বাংলা টিমের জন্য সুখবর হয়, তা হলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বঙ্গ ক্রিকেটে তীব্র ঝড় তুলে দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের এক ব্যাটসম্যান!

তিনি কেদার যাদব। যাঁর জন্য আর একটু হলে মঙ্গলবারের ঝাড়খণ্ড ম্যাচ থেকে মনোজ তিওয়ারিকে হারাতে চলেছিল বাংলা!

টিম ইন্ডিয়ায় কোন যুক্তিতে কেদার ডাক পান আর তিনি ব্রাত্য থাকেন এই অভিযোগে মনোজ নাকি সোমবার বিকেল নাগাদই ঠিক করে ফেলেছিলেন, মঙ্গলবার আর মাঠেই আসবেন না। ইন্ডিয়া জার্সি অধরা থাকায় তিনি এতটাই ভেঙে পড়েন যে, কোচ বা ক্যাপ্টেন কাউকে ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটাও নিজে থেকে জানাতে চাননি।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত অবশ্য সবই ঠিকঠাক চলছিল। সকালে সল্টলেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে টিমের সঙ্গে প্র্যাকটিস করেন মনোজ। দুপুর নাগাদ যখন মাঠ ছাড়ছেন মনোজ-সহ বাংলা ক্রিকেটাররা, তখনও টিম ঘোষণা হয়নি। নাটকের সূত্রপাত বিকেলে। বাংলা টিম ম্যানেজমেন্টের এক কর্তা যখন হঠাত্‌ই মনোজের ফোন পান। যাঁকে মনোজ বলে দেন, মঙ্গলবারের ম্যাচে খেলতে চান না। আর সেটা কোচ বা ক্যাপ্টেনকে বলার মতো মানসিক অবস্থাও তাঁর নেই। মনোজ নাকি বলতে থাকেন যে, এত চেষ্টার পরেও যখন কোনও লাভ হচ্ছে না, তখন আর বাংলার হয়ে খেলে কী লাভ? মনোজকে তার পর থেকে শান্ত করার নানারকম চেষ্টা চলে। বলা হয়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সিএবি যুগ্ম-সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে নিতে। অনেক বোঝানোর পর শোনা গেল, মনোজ রাজি হয়েছেন বাংলার হয়ে নামতে। তাঁকে ফোন করা হলে ধরেননি, এসএমএসেরও উত্তর দেননি।

মনোজের অভিযোগ মূলত নাকি ছিল কেদার যাদবকে নিয়ে। ভারত ‘এ’-তে কেদারের অধিনায়ক ছিলেন মনোজ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কেদার টিমে আছেন অথচ তিনি নেই, এটা নাকি মনোজ মানতে পারছিলেন না। যেখানে তিনি দলীপে সেঞ্চুরি করেছেন। মনোজের বদলে কেদারকে ডাকায় বাংলার ক্রিকেটমহলও বেশ অবাক। অনেকেরই মনে হচ্ছে, মনোজের অভিমান ন্যায্য। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক দীপ দাশগুপ্তর মনে হচ্ছে, মনোজকে এ ভাবে ব্রাত্য রাখার সিদ্ধান্তটা দুঃখজনক। বাংলার বর্তমান নির্বাচকদের কেউ কেউ আবার বলে দিলেন, দরকারে কথা বলতে হবে জাতীয় নির্বাচকদের সঙ্গে।

রাতের দিকে মনোজের অভিমান ভাঙার খবরে স্বস্তিতে দেখাচ্ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের কাউকে কাউকে। লক্ষ্মী-মনোজ-শ্রীবত্‌স-দিন্দা-ঋদ্ধিমান, এই পাঁচকে পেয়ে বাংলা যুদ্ধে কিছুটা এগিয়েই থাকল বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ঋদ্ধিমান এ দিন শহরে ঢুকেই বাংলা টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়ে দেন, তিনি মঙ্গলবারের বিজয় হাজারের ম্যাচে নামবেন। এমনিতেই গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষের শক্তি ধরলে ঝাড়খণ্ড বাংলার কঠিনতম গাঁট। যে ম্যাচে নামলে সাম্প্রতিকে বেশ কয়েক বার স্নায়ুর চাপে ভুগেছে বাংলা। গত বার তো বিজয় হাজারে-তে হেরেও গিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের কাছে। শুধু তাই নয়, বৈরিতার ইতিহাসও আছে। যেমন, সদ্যসমাপ্ত দলীপ ট্রফিতে পূর্বাঞ্চল ক্রিকেটারদের জার্সি দেওয়ার কথা ছিল ঝাড়খণ্ডের। কিন্তু সেটা তারা দেয়নি। লক্ষ্মীদের সেই ম্যাচে বাংলার জার্সি পরে নামতে হয়। গত বছর আবার বিজয় হাজারের গ্রুপ পর্ব ঝাড়খণ্ডে খেলতে গিয়ে বাংলাকে ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার স্টেডিয়ামে একটার বেশি ম্যাচ খেলতে দেওয়া হয়নি। বাইরের মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তাই যুদ্ধের আগে এ দিনের সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে সৌরভ তিওয়ারির কাঁধে হাত রেখে লক্ষ্মীরতনের পিচ দেখতে যাওয়া, বা বাংলা অধিনায়কের কাছে ঝাড়খণ্ড ক্যাপ্টেনের ‘আরে, তুমনে ব্যাট নহি ভেজা’ সুলভ কথাবার্তাগুলো আংশিক সত্য। আগুন যেমন থাকার কথা ছিল আছে, ঋদ্ধিমান আসায় আরও বেড়েছে।

শুধু ‘সেমসাইড’-টাই যা হয়ে যাচ্ছিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE