Advertisement
১৮ জুন ২০২৪

কান্তিরাভায় ‘চিতা’ আটকাতে বাগানের আজ ভরসা ‘দুঙ্গা’

চিরবসন্তের শহরে গনগনে বাগান! বেঙ্গালুরুর স্কুলে দিনকয়েক আগেই ঢুকে পড়েছিল চিতাবাঘটা। স্যাটারডে নাইটের কান্তিরাভায় সেই চিতাবাঘের মতোই যদি সুনীল ছেত্রী বাগান রক্ষণে দাপাতে শুরু করেন?

মিশন বেঙ্গালুরুর প্রস্তুতিতে কর্নেল গ্লেন-কাতসুমিরা।

মিশন বেঙ্গালুরুর প্রস্তুতিতে কর্নেল গ্লেন-কাতসুমিরা।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

চিরবসন্তের শহরে গনগনে বাগান!

বেঙ্গালুরুর স্কুলে দিনকয়েক আগেই ঢুকে পড়েছিল চিতাবাঘটা। স্যাটারডে নাইটের কান্তিরাভায় সেই চিতাবাঘের মতোই যদি সুনীল ছেত্রী বাগান রক্ষণে দাপাতে শুরু করেন?

শুক্রবার বেলা বারোটা। প্র্যাকটিস থেকে হোটেলে ফেরার জন্য টিমবাসের দিকে এগোতে গিয়ে প্রশ্নটা শুনে থামলেন ব্যারাকপুরের প্রণয় হালদার— মোহনবাগান মাঝমাঠের ‘দুঙ্গা’। তার পর চোখের কোণ দিয়ে জ্বলন্ত দৃষ্টি হেনে জবাব ছুড়ে দিলেন, ‘‘নব্বই মিনিটের লড়াইয়ে কাউকে ভয় পাই না। আমরাও পাল্টা তাড়া করব।’’

দুপুর পৌনে দুটো। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বেরোনোর সময় মুখোমুখি যুযুধান দুই কোচ। বাগানের সঞ্জয় সেন আর বেঙ্গালুরুর অ্যাশলে ওয়েস্টউড। সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর কর্নেল— গ্লেন। আর অ্যাশলের সঙ্গী পাগ পল পোগবা। বাগান কোচ কোনও রকমে সৌজন্য-করমর্দন সেরেই সরে গেলেন। গ্লেনের হয়তো এখনও বেঙ্গালুরু কোচের স্লেজিং সম্পর্কে পুরো ধারণা নেই। নিচু হয়ে আদর করতে গিয়েছিলেন অ্যাশলের সারমেয়টিকে। তৎক্ষণাৎ নীচু স্বরে গ্লেনের দিকে উড়ে এল সুনীল ছেত্রীদের ব্রিটিশ কোচের টিটকিরি, ‘‘কাল মাঠে কিন্তু আদরের মওকা আসবে না তোমাদের।’’

দুই কোচের বাক্যবাণ? সেখানেও আই লিগের ‘দ্য ম্যাচ’-এর চব্বিশ ঘণ্টা আগে সঞ্জয়-অ্যাশলে গত বছরের ৩১ মে-কে যেন মনে করিয়ে দেয়। বেঙ্গালুরু কোচ যখন বলছেন, ‘‘প্রতিশোধের ম্যাচ আবার কী? আমরা কি সে দিন হেরেছিলাম?’’ যার মিনিট পাঁচেক আগেই বাগান কোচ ঘর ভর্তি সাংবাদিকের সামনে বলে এসেছেন, ‘‘গত বার এখানে পিছিয়ে পড়েও গোল করেছিলাম আমরা। যে গোলে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগানই।’’

পাশাপাশি মেগা লড়াইয়ের আগের দিন সৌজন্য নামক সতর্ক-জ্যাকেটও রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই কোচের গায়ে। সঞ্জয় যেমন বলছেন, ‘‘ওরা সব বিভাগে এগিয়ে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ওদের দলে সুনীল, বিনীতের মতো ফুটবলার রয়েছে।’’ অ্যাশলেই বা তখন পিছিয়ে থাকেন কেন? বলে দিলেন, ‘‘ওদের অ্যাটাকে কাতসুমি-সনি-গ্লেন-জেজে। সঙ্গে দু’টো উইং থেকে ধনচন্দ্র আর রাজুর ও রকম লম্বা থ্রো। বাগান ম্যাচ কিন্তু বেশ টাফ।’’

আশা-আতঙ্কের বারুদে যেন দেশলাইয়ের কাঠি দিচ্ছে কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে প্রতিটা স্ট্যান্ডের গায়ে বড়-বড় হরফে লেখাগুলো। ‘অল অফ ব্লু অন, উই ডোন্ট ব্যাক ডাউন’ কিংবা ‘ডিগ ডিপ, ব্যাটল হার্ড, উই আর দ্য ব্লুজ’। যা দেখেটেখে সবুজ-মেরুনের ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার লুসিয়ানোর প্রশ্ন, ‘‘বেঙ্গালুরু এখানে হারেনি নাকি?’’ সবুজ-মেরুনের ধ্বংসাত্মক মিডিও বিক্রমজিত আবার সে সবের ধার মাড়ালেন না। প্র্যাকটিস দেখতে আসা প্রবাসী মোহনবাগান সমর্থকদের সংগঠন ‘মেরিনার্স অ্যাট বাঙ্গালোর’-এর কেউ একজন তাঁকে বলে বসেছিলেন, ‘‘গত বার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে বেঙ্গালুরুকে হারানোর ম্যাচে আপনার দূরপাল্লার শটে গোলটা এখনও চোখে ভাসে।’’ শুনে পঞ্জাব দা পুত্তর গ্যালারির দিকে তাকিয়ে দিলেন কড়ক জবাব। ‘‘দুয়া করো ভাই। কাল মওকা মিলেগা তো অওর এক মিসাইল ডালেগা।’’

এখানে হোটেল আর মাঠে সঞ্জয়ের দলকে কর্ডন করে চলা বেঙ্গালুরুর আইটি সেক্টর এবং বহুজাতিকে কর্মরত তুহিন, দেবার্ঘ্য, শুভজ্যোতিরা ফুটছেন অবশ্য অন্য কারণে— কার্টুন কাণ্ড! দিন দু’য়েক আগে বেঙ্গালুরু এফসির কয়েক জন সমর্থক একটা বিশেষ ছবি প্রিন্ট করে বিলি করেছেন শহরের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। যেখানে উত্তাল সমুদ্রে একটা পালতোলা নৌকোর উপর বসে একটা ঈগল (বেঙ্গালুরু টিমের প্রতীক) সেটাকে ডোবানোর চেষ্টা করছে। ছবির তলায় লেখা— ‘এ বার আর ফাঁকতালে বাঁচবি না তোরা। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে ভাইরাল হওয়ার পর তা নিয়ে উত্তেজনার চোরাস্রোত বইছে বেঙ্গালুরুর বাগান সমর্থকদের ভেতর। পাল্টা নতুন সবুজ-মেরুন ফেস্টুন শুক্রবারই বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। যাতে লেখা —‘বয়সটা ১২৬ বছর। সংখ্যাতেই আশা করি বুঝে গিয়েছিস...।’’

সাত ম্যাচে সুনীলদের পয়েন্ট ১৫। সনিরা সেখানে দু’ম্যাচ কম খেলে ১১। বাগান শিবির জানে, মুম্বইয়ে দু’পয়েন্ট নষ্টের পরেও যদি বেঙ্গালুরু থেকে পুরো তিন পয়েন্ট নিয়ে ফেরা যায় তা হলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। এক) ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তখন রীতিমতো গরম নিঃশ্বাস ফেলা যাবে বেঙ্গালুরুর ঘাড়ে। ২) বেঙ্গালুরু কোচের ‘আমরা তো ৩১ মে হারিনি’-র প্রশান্তিও ভেঙে চুরমার করে দেওয়া যাবে।

বাগান ড্রেসিংরুম বেঙ্গালুরুর খেলার ময়নাতদন্ত করে দেখেছে, তারা লং বল ফেলে বিপক্ষের মিডল কিংবা ডিফেন্সিভ থার্ডে। সেই বল হেডে কিংবা পাসে গেমমেকারকে ঠেলেন কোরিয়ান কিম। সেখান থেকে দুই উইংয়ে বল পাঠিয়ে বিপক্ষ রক্ষণে ভিড় বাড়ান সুনীলরা। খুলে যায় গোলের দরজা। এ দিন মোহনবাগান অনুশীলনে তাই এ ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব পালন করলেন প্রণয়। উদ্দেশ্য, বেঙ্গালুরু কোনও ভাবে যেন মাঝমাঠে সেকেন্ড বল ধরতে না পারে। মুম্বই এফসি ম্যাচে এই মিডল করিডরে দুই ধ্বংসাত্মক মিডিও প্রণয় আর বিক্রমকে খেলিয়ে ফায়দা তুলতে পারেনি বাগান। তাই শনিবার মিডল করিডরে প্রণয়ের কোবরা ট্যাকলের সঙ্গে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়াতে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ফেরানো হতে পারে কাতসুমিকে।

আর বেঙ্গালুরু? বিকেল পাঁচটায় অনুশীলন শুরু করতে গিয়ে অ্যাশলে যেই না দেখলেন মাঠে কলকাতার সাংবাদিক হাজির, সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলেন, ‘‘আজ ক্লোজড ডোর।’’

আসলে তিনি বুঝে গিয়েছেন সারসত্যটা— কান্তিরাভায় বাগানের ফুল ফোটা আটকাতে না পারলে তাঁর স্লেজিংবাজিতেও চিড়ে ভিজবে না!

—নিজস্ব চিত্র।

শনিবারে আই লিগ

মোহনবাগান: বেঙ্গালুরু এফসি (বেঙ্গালুরু, ৭-০৫)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MohunBagan Bengaluru football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE