Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জোড়া ভোকাল টনিকে মধুর বদলা বাগানের

বত্রিশ দিনের অভিশাপ থেকে মোহনবাগানকে মুক্তি দিলেন কে? সবুজ-মেরুনকে ফের আই লিগ জেতার নতুন অক্সিজেন কে জোগাল? খেলা শেষ হতেই জোড়া প্রশ্নের ধাক্কায় বুধবারের ম্যাচ সেরা প্রীতম কোটাল প্রথমে দেখিয়ে দিলেন কোচকে। তার পর দেখালেন নতুন ফুটবল সচিবকে। বাগানের ঘরের ছেলে ফুটবল সচিব এর পর যা বললেন তা পাল্লা দিতে দিতে পারে ‘চক দে ইন্ডিয়া’র কবির খানকেও। ‘‘আজ মাঠে নামার আগে ওদের বলেছিলাম—তেরো বছর ধরে আই লিগ আর পাঁচ বছর ট্রফি হাতড়াচ্ছি আমরা। লিগটা এলে তোরা ইতিহাসে ঢুকে পড়বি। মোহনবাগান তাঁবুতে এক দিন তোদের ছবিও থাকবে কিংবদন্তিদের সঙ্গে।’’

গোলের ঠিকানা লেখা সনির সেই ফ্রি কিক। বুধবার বারাসত স্টেডিয়ামে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

গোলের ঠিকানা লেখা সনির সেই ফ্রি কিক। বুধবার বারাসত স্টেডিয়ামে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০৪:১৯
Share: Save:

মোহনবাগান-২ (প্রীতম, সনি)

রয়্যাল ওয়াহিংডো-০

বত্রিশ দিনের অভিশাপ থেকে মোহনবাগানকে মুক্তি দিলেন কে? সবুজ-মেরুনকে ফের আই লিগ জেতার নতুন অক্সিজেন কে জোগাল?

খেলা শেষ হতেই জোড়া প্রশ্নের ধাক্কায় বুধবারের ম্যাচ সেরা প্রীতম কোটাল প্রথমে দেখিয়ে দিলেন কোচকে। তার পর দেখালেন নতুন ফুটবল সচিবকে।

বাগানের ঘরের ছেলে ফুটবল সচিব এর পর যা বললেন তা পাল্লা দিতে দিতে পারে ‘চক দে ইন্ডিয়া’র কবির খানকেও। ‘‘আজ মাঠে নামার আগে ওদের বলেছিলাম—তেরো বছর ধরে আই লিগ আর পাঁচ বছর ট্রফি হাতড়াচ্ছি আমরা। লিগটা এলে তোরা ইতিহাসে ঢুকে পড়বি। মোহনবাগান তাঁবুতে এক দিন তোদের ছবিও থাকবে কিংবদন্তিদের সঙ্গে।’’

আর বাগানের বঙ্গসন্তান কোচ? তিনি আবার মাঠে নামার আগে সনিদের বলে দিয়েছিলেন, ‘‘এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে টিমকে নিয়ে এসেছ তোমরা। বিপন্মুক্তও করতে হবে তোমাদেরই।’’

সত্য-সঞ্জয়ের জোড়া ভোকাল টনিকের নিট ফল— বত্রিশ দিন আগে পাহাড়ে উঠে (শিলংয়ে) যাদের কাছে এ বারের আই লিগে প্রথম হারের মুখ দেখতে হয়েছিল বাগানকে, সমতলে (বারাসতে) নেমে তাদেরই অনায়াসে ২-০ হারিয়ে ফের আই লিগ দেখতে শুরু করে দিল সত্য-সঞ্জয়ের দল। ১৮ রাউন্ড শেষে বেঙ্গালুরুর সমান ৩৫ পয়েন্ট হলেও গোলপার্থক্যে লিগ টেবলে শীর্ষে বাগান।

শুধু প্রথম হারের তেতো স্বাদ পাওয়াই তো নয়, এই বত্রিশ দিনেই তো কখনও বকেয়া বেতন নিয়ে দফারফা টিম স্পিরিটের। একটানা অপরাজিত টিমের তিন-তিনটে হারের ধাক্কা। রাত জেগে গোয়ায় অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে গিয়ে হোটেল বুকিংয়েও ‘রহস্যজনক’ বিভ্রাট! বকেয়া বেতনের জেরে বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে টিমের ব্রাজিলীয় ফিজিক্যাল ট্রেনার গার্সিয়ার কান্না। স্বভাবতই ময়দানে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল মোহনবাগান টিমের ভেতরটা কি ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে?

কিন্তু বৈশাখ পেরিয়ে জৈষ্ঠ আসতেই হঠাৎ-ই পরিবর্তন বাগানে। ক্লাবের ভোট পর্ব মিটতেই ফের সেই পুরনো ছন্দে সবুজ-মেরুন। সঙ্গে নতুন ছবিও। না হলে ময়দান কবে দেখেছে বিরতির বাঁশি বাজার পরক্ষণেই টিম ‘হাডল’। যা এ দিন করল প্রীতম-সনিদের বাগান। বিপক্ষ টিম ততক্ষণে টানেল দিয়ে ঢুকে গিয়েছে ড্রেসিংরুমে। কিন্তু মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে গোটা বাগান টিম তখন পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিটের জন্য শপথ নিতে ব্যস্ত। যা দিয়ে যেন গ্যালারিকে পাল্টা জবাব— টিমের সব অসন্তোষ আজ শেষ। আবার ‘মিশন আই লিগ’। ম্যাচ শেষে সঞ্জয়ের টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সনি নর্ডি প্রকাশও করলেন সেই হাডল রহস্য। ‘‘হাফটাইমে তখন আমিই টিমমেটদের বলছিলাম প্রথমার্ধে যেমন কোনও গোল না খেয়ে মাঠ ছাড়ছি, দ্বিতীয়ার্ধেও সে রকম করতে হবে।’’

আগের ম্যাচগুলোতে সঞ্জয়ের দল ৪-৩-৩ বা ৪-২-৩-১ খেলায় বিপক্ষ তার অ্যান্টিডোট নিয়ে মাঠে নামছিল। কিন্তু এ দিন শুরু থেকেই বাগান ৪-৪-২-এ। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বাগান কোচ জানতেন, জ্যাকিচন্দরা আক্রমণে এলে সমান তালে বিপক্ষ রক্ষণে হানা দিতে চলে আসেন তাঁদের দুই সাইডব্যাক নওবা এবং জুয়ালা-ও। সেটা আটকাতে সঞ্জয় তাই এ দিন প্রতি-আক্রমণে বারবার পাঠাচ্ছিলেন তাঁর জোড়া স্ট্রাইকার জেজে এবং বলবন্তকে।

তবে স্কোরিং জোনে বাগানের দাপাদাপি পুরোপুরি সফল হচ্ছিল না গোলের সামনে গিয়ে সনিরা খেই হারিয়ে ফেলায়। বাগানের দু’টো গোলই এ দিন বরং হাফচান্স থেকে। বিপক্ষের লেফট ব্যাক যেখানে দাঁড়ায় সেখান থেকে এ দিনের ম্যাচের সেরা প্রীতম কোটালের গোলমুখী রামধনু শটের সময় জায়গায় ছিলেন না ওয়াহিংডো কিপার। যা দেখে ম্যাচ শেষে সনির রসিকতা, ‘‘মনে হল রোনাল্ডিনহোর ২০০২ বিশ্বকাপের গোলটা আবার দেখলাম।’’ আর স্বয়ং সনির ফ্রিকিকে দ্বিতীয়ার্ধে ২-০ করার সময় তো বেচারা কিপারের কিছু করারই ছিল না। বল ডিফ্লেক্ট হওয়ায়।

উল্লসিত সঞ্জয় তাই বলেই বসলেন, ‘‘ছেলেদের বলে দিয়েছি তোমরা আমাকে স্পোর্টিং ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট এনে দাও। আমি তোমাদের বেঙ্গালুরু থেকে তিন পয়েন্ট দেব।’’

হঠাৎ দূরে সরতে থাকা আই লিগ এ দিন থেকে ফের বাগানের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে দিয়েছে যে!

তবে দরজা খুলে তাকে তাঁবুতে আনতে রক্ষণ আরও একটু আঁটোসাঁটো করা দরকার। এ দিন দুই স্টপার কিংশুক-বেলোর মাঝে তৈরি হওয়া দূরত্বকে কাজে লাগিয়ে দু’তিনবার ওয়াল খেলে গেলেন ওয়াহিংডোর স্ট্রাইকাররা।

ওডাফা, সুনীলরা এই ‘সুইট স্পট’ দেখে হয়তো ঠোঁট চাটছেন বাড়ি বসে!

মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, কিংশুক, বেলো, সুখেন, সৌভিক (বিক্রমজিৎ), শেহনাজ, কাতসুমি, সনি, বলবন্ত (বোয়া), জেজে (পঙ্কজ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE