নজরে: বিশ্বকাপ দলে নিজের দাবি জোরদার করছেন ঋষভ। ফাইল চিত্র
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে বিশ্বকাপে খেলবেনই, এই নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে সিরিজে যা পারফরম্যান্স করলেন, তার পরে ওঁকে বিশ্বকাপ দলে না নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
কিন্তু প্রশ্নটা হল, কোন জায়গায় ব্যাট করবেন ধোনি? চার নম্বরে, না কি পাঁচে? শুক্রবার মেলবোর্নে চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দলকে জেতানোর পর থেকে ধোনিকে নিয়ে এই জল্পনাই চলছে। কাগজে পড়লাম, বিরাট কোহালি নাকি ধোনিকে পাঁচ নম্বরেই চান। কিন্তু ধোনি নিজে বলছেন, দলের প্রয়োজনে তিনি যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে রাজি। এক জন ভাল ও দায়িত্বশীল ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এমনই আশা করে যে কোনও টিম ম্যানেজমেন্ট।
কিন্তু দলের প্রয়োজন কী? সেটাই ভেবে দেখার বিষয়। চার নম্বরে এমন এক জন ব্যাটসম্যান দরকার, ওপেনাররা ব্যর্থ হলে যিনি ঠান্ডা মাথায় সেই চাপ সামলে দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। নিজেও সময় নিয়ে ক্রিজে থিতু হতে পারবেন। এ সবই ধোনির মধ্যে রয়েছে ভরপুর। ঠান্ডা মাথা, চাপ সামলাতে ওস্তাদ, সময় নিয়ে ক্রিজে থিতু হয়ে বোলারদের পাল্টা আক্রমণ করার ব্যাপারে যে তিনি বিশেষজ্ঞ, সেই প্রমাণ বহুবার পাওয়া গিয়েছে। শুক্রবার মেলবোর্নেও তার পুনরাবৃত্তি দেখেছে বিশ্ব। তাই চার নম্বর জায়গায় ধোনিকেই রেখে দেওয়া উচিত।
দলের লক্ষ্য ২৩০-২৪০ হলে ধোনি উইকেটে থিতু হয়ে সেটা তুলে দিতে সমস্যায় পড়বেন না। কিন্তু লক্ষ্য আরও বড় হলে ৩৭ বছর বয়সি ধোনির পক্ষে ক্রিজে নেমেই দুমদাম মেরে দেওয়া হয়তো এখন সম্ভব নয়। উইকেটে থিতু হওয়ার জন্য একটু সময় দিতেই হবে। তাই ওঁকে চার নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানোই ভাল। লক্ষ্যে কী ভাবে সঠিক হিসেব করে পৌঁছনো যায়, তা ধোনির থেকে ভাল আর কেউ বোঝেন না। এক জন বা দু’জন ভাল সঙ্গী পেলে তাঁকে নিয়ে ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারেন তিনি।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতেই পারে, তা হলে তিনি পাঁচ নম্বরে নামলে সমস্যা কোথায়? একটু আগেই যেটা লিখলাম, ক্রিজে নেমেই দুমদাম মেরে দিতে পারেন না তিনি। থিতু হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। পাঁচ নম্বরে নেমে যে সময়টা তিনি হয়তো না-ও পেতে পারেন। চাপ যদি সেই সময় আরও বেশি থাকে, তা হলে সমস্যা হতে পারে তাঁর। তাই ওই জায়গায় বরং কোনও তরুণকে নামানো হোক, যিনি ক্রিজে নেমেই টি-টোয়েন্টি মেজাজে চলে যেতে পারেন।
এই মুহূর্তে ঋষভ পন্থের চেয়ে ভাল আর কেউ পাঁচ নম্বরে উপযুক্ত বলে মনে হয় না। ওঁকে বিশ্বকাপে তো বটেই, তার আগে ভারতের বেশির ভাগ ওয়ান ডে ম্যাচেই খেলানো উচিত। পরিস্থিতি অনুযায়ী চার ও পাঁচে ধোনি ও পন্থকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো উচিত। চাপ বেশি থাকলে চারে ধোনি নামুন, পাঁচে ঋষভ। বেশি চাপ না থাকলে ঋষভ চারে আসুন, ধোনি পাঁচে। দীনেশ কার্তিকের এই দলে কোনও জায়গা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না। ঋষভের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান তিনি নন। দিল্লির এই তরুণের মতো স্বাভাবিক ওয়ান ডে ক্রিকেটার দলে থাকতে দীনেশ কেন?
শুনেছি বিশ্বকাপের ভাবনায় নাকি ভাল রকমই আছেন ঋষভ। তা-ই যদি থাকেন, তা হলে তাঁকে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে কেন ওয়ান ডে সিরিজের দলে রাখাই হল না, এটা আমার মোটেই বোধগম্য হচ্ছে না। কুড়ি বছরের যে ছেলেটিকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় হয়েই গিয়েছে, তাঁকে ভারতের আটটি ওয়ান ডে ম্যাচে বসিয়ে রেখে কি না খেলানো হচ্ছে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে ঘরের মাঠে! এর চেয়ে অযৌক্তিক আমার কাছে আর কিছু মনে হচ্ছে না।
আর অম্বাতি রায়ডুকে যদি চার নম্বরে ঠিকই করে ফেলা হয়, তা হলে তাঁকে দু’ম্যাচ পরে বসিয়ে দেওয়া হল কেন? আসলে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট বোধহয় এখনও অনেক কিছুই ঠিক করে উঠতে পারেনি। এগুলো মাস খানেকের মধ্যে ঠিক করে ফেলতে না পারলে কিন্তু সমস্যায় পড়বেন বিরাট কোহালিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy