নেলো ভিনগাদা। —নিজস্ব চিত্র।
জায়গাটার নাম লোখড়া। ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৭-এর পাশের একটা এলাকা। একের পর এক গাড়ি সমান তালে চলে যাচ্ছে। রাস্তাটার যেন কোনও বিশ্রাম নেই। লোকের ভিড় তেমন না থাকলেও।
কিন্তু লোখড়ার হাইওয়ের পাশেই তো ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়াম। যেখানে এ বারের আইএসএলের জমকালো উদ্বোধন হয়েছিল। আলিয়া ভট্ট-বরুণ ধবন-জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজদের নাচ-গান-লাস্যে। সেই স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারের সামনে আজও মানুষের লম্বা লাইন!
আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই আটলেটিকো দে কলকাতা-র বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে নামছে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড। প্রিয় দলের ম্যাচের সাক্ষী থাকতে সবাই আগেভাগে টিকিট কাটতে ব্যস্ত। স্টেডিয়ামের ঠিক বাইরে সাদা জার্সি গায়ে জন আব্রাহামের ছবি। স্টেডিয়ামের ভেতরের রাস্তাটায় অসংখ্য পোস্টার। কোনওটা কাতসুমি-র তো কোনওটায় দিদিয়ের জোকোরার মুখ।
আইএসএল নিয়ে দেশের উত্তর-পূর্বের আবেগ কী, সেটা টিকিটের লাইনে দাঁড়ানো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্র পরিষ্কার করে দিলেন। ‘‘এ বার আমাদের ট্রফিটা জিততেই হবে। আর কোনও উপায় নেই জানেন। নর্থ-ইস্ট শুরুটাও করেছে ভাল। কিন্তু ধারাবাহিকতা রাখতে পারলে খুশি হবো।’’ জনের টিমের আর এক ভক্ত পেশায় গাড়ির চালক। যিনি কাজের ব্যস্ততার ফাঁকেও ম্যাচ দেখতে ভোলেন না। ‘‘এ বার খুব চাই নর্থ-ইস্ট জিতুক। ট্রফি তুলতেই হবে।’’
এটিকে সমর্থকেরা যখন রবীন্দ্র সরোবর ভরাতে ব্যর্থ, নর্থ-ইস্টে আইএসএল-দীপ জ্বলছে প্রখর ভাবে। যেটা আবার ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান ট্রেন্ড অনুযায়ী খানিকটা স্বাভাবিকও। নর্থ-ইস্টই তো দেশে ফুটবলের নতুন ধাত্রীগৃহ হয়ে উঠেছে। অতীতের ভাইচুং ভুটিয়া থেকে বর্তমানের জেজে লালপেখলুয়া। একের পর এক মণিমানিক্য বেরিয়ে এসেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকেই।
কিন্তু এত দিন আইএসএলের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। প্রথম দু’মরসুমে দুর্দান্ত শুরু করেও শেষমেশ হতাশা জুটেছে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের কপালে। কিন্তু তৃতীয় বারে যে ভাগ্য খুলতে শুরু করেছে দলের। লিগ টেবলের দুই নম্বরে বসে দল। দুর্দান্ত খেলছে। নামী তেমন ফুটবলার ছাড়াই লড়াই করছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে। নর্থ-ইস্টের এই উত্থানের কারণ কী? নেপথ্যের অন্যতম কারিগর হিসেবে বেরিয়ে আসছে ‘দ্য প্রফেসর’ নামটা। আরও পরিষ্কার ভাবে বললে, নর্থ-ইস্ট কোচ নেলো ভিনগাদা। ফুটবল কোচদের পৃথিবীতে যিনি ‘প্রফেসর’ নামে জনপ্রিয়।
উইকিপিডিয়া ঘাঁটলে দেখা যাবে পর্তুগিজ জাতীয় দলকে কোচিং করিয়েছেন ভিনগাদা। সব মিলিয়ে পঁয়ত্রিশ বছরের কোচিং অভিজ্ঞতা। কার্লোস কুইরোজের সহকারী হিসেবে দু’বার পর্তুগালকে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। ইরান, সৌদি আরব জাতীয় দলেরও দায়িত্ব নিয়েছেন। এহেন হাই প্রোফাইল এখন নর্থ-ইস্টকে সেই একই শৃঙ্খলায় মুড়ে দিয়েছেন।
টিমের এক সূত্র এ দিন এখানে জানালেন, ভিনগাদার সবচেয়ে বড় গুণ ম্যান ম্যানেজমেন্ট। কোন ফুটবলারের থেকে কী আশা করেন সেটা পরিষ্কার ভাবে তাকে বলে দেন। বুঝিয়ে দেন। ঠান্ডা মাথায় সব কিছু সামলান। টিমের যে কোনও ফুটবলার তাঁর সমস্যার কথা বলতে এলে শোনেন ভিনগাদা। শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী।। কিন্তু আন্তোনিও হাবাসের মতো চটজলদি রেগে যান না। ঘড়ির কাঁটা ধরে ট্রেনিং শুরু করেন। কোনও ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করেন না। নিজের কোচিং প্রজ্ঞার উপর এতটাই আত্মবিশ্বাস এই পর্তুগিজের।
ভিনগাদা-নীতি হচ্ছে— মাঠের বাইরে ফুটবলাররা যা খুশি করুক না কেন, মাঠের মধ্যে একশো শতাংশ দিতেই হবে। তাঁর পছন্দের স্টাইল বলতে পাসিং ফুটবল। এ দিনও নর্থ-ইস্টের অনুশীলনে সেটার উপর জোর দিচ্ছিলেন কাতসুমিদের কোচ। নর্থ-ইস্টের সংসারে এখন ফুটবলারদের ডায়েট সামলানো কোচিং স্টাফের এক বিরাট কাজ। দলের ফিজিও বলছেন, ফুটবলারদের খুব বেশি তেলের খাবার খাওয়া পছন্দ নয় ভিনগাদার। তাই গ্রিলড চিকেন আর পাস্তা হয়ে উঠেছে অধিকাংশ ফুটবলারের পছন্দের ডিশ।
সব মিলিয়ে নর্থ-ইস্ট নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারেন তাদের সমর্থকেরা। ভক্তরা। ভাইচুং তো দু’লাইনেই বলে দিলেন, ‘‘এই দলটা এখনও উপরের দিকে আছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে ওদের কোচ কতটা ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy