আলিঙ্গন। ছবি: উৎপল সরকার
লিয়েন্ডার পেজের যদি এখন বয়স ৯ অথবা ১০, এমনকী ১৫-ও হতো, চলতি সপ্তাহটা রোজ দিন দিনভর পড়ে থাকতেন দিল্লি লন টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের স্টেডিয়ামে! যার পোশাকি নাম আর কে খন্না টেনিস স্টেডিয়াম।
‘‘আমার তো মনে হয়, ওই বয়সের প্রতিটা শিক্ষার্থী টেনিস প্লেয়ার যারা দিল্লি শহর বা তার বাইরেও এ দেশে এখন রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের এ সপ্তাহে স্পেন-ভারত ডেভিস কাপের প্রতিটা দিন স্টেডিয়াম ভরিয়ে তোলা উচিত। আমার এখন ওই বয়স থাকলে এ সপ্তাহটার প্রতি দিন ডিএলটিএ-তে সকাল থেকে রাত পড়ে থাকতাম,’’ মঙ্গলবার ভারতীয় টেনিস দলের প্র্যাকটিস শেষে সাংবাদিকদের বলেন তেতাল্লিশের লিয়েন্ডার পেজ।
কেন?
‘‘স্পেন শুধু বিশ্ব টেনিসের সবচেয়ে শক্তিশালী টিমই নয়, সবচেয়ে পেশাদার টেনিস দেশ। ভারতের মাটিতে ওদের খেলতে দেখতে পাওয়াটা এ দেশের উঠতি টেনিস প্লেয়ারদের কাছে একটা বিরাট সুযোগ,’’ বলে লিয়েন্ডার সম্ভবত তাঁর বক্তব্যের আসল অংশটা যোগ করেন, ‘‘সবচেয়ে বড় কথা রাফা (রাফায়েল নাদাল) ওদের টিমে রয়েছে। ওর মতো গ্রেট প্লেয়ার কী ভাবে টেনিসটা খেলে সেটাই শুধু দেখার নয়, কী ভাবে সারাক্ষণ নিজেকে কোর্টে গ্রেট হিসেবে রাখে সেটাও আমাদের দেশের প্রতিটা উঠতি প্লেয়ারের দেখা উচিত।’’
ছাব্বিশ বছর ডেভিস কাপ খেলা, ডাবলস-মিক্সড ডাবলস মিলিয়ে আঠারো গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন, ডাবলসে শতাধিক পার্টনার নিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা লিয়েন্ডারের উত্তেজিত মন্তব্য, ‘‘স্পেনের এই দলটা সম্পর্কে আমার কী পরিমাণ বিরাট শ্রদ্ধা সেটা বলে বোঝাতে পারব না। রাফা দিয়ে শুরু করা যাক— টেনিসের সর্বকালের একজন গ্রেট। ডেভিড ফেরার— টেনিসের ম্যারাথন ম্যান। অবিশ্বাস্য ফাইটার। ফেলিসিয়ানো লোপেজ আর মার্ক লোপেজ— এ বারের ফরাসি ওপেন ডাবলস চ্যাম্পিয়ন টিম। কাকে ছেড়ে কার কথা বলব। তা সত্ত্বেও কুড়ি জনের টিম নিয়ে এসেছে। বিরাট সাপোর্ট স্টাফ। কোনও ঝুঁকি নেয়নি। টিমে একজন ডাক্তার, দু’জন ফিজিও, অ্যাওয়ে টাই-তেও একজন হিটিং পার্টনার নিয়ে এসেছে। প্রত্যেক প্লেয়ার এসেছে নিজস্ব ট্রেনার নিয়ে। এমনকী স্প্যানিশ টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত এসেছেন জাতীয় টিমের সঙ্গে। এতটাই পেশাদার!’’
এ রকম একটা টিমের সঙ্গে খেলা মানে নিজেও অনেক কিছু শেখা, মনে করেন লিয়েন্ডার। ‘‘আমার প্রায় তিরিশ বছর হয়ে গেল সার্কিটে। কিন্তু এখনও আমার কাছে চোদ্দোটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন একজন টেনিস প্লেয়ারকে চোখের সামনে খেলতে দেখাটা অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা। আপনি তিরিশ বছর খেলার পরেও রাফার ম্যাচ দেখে অনেক কিছু শিখতে পারেন। ওর ফুটওয়ার্ক, ওর পাওয়ার, শট বাছাই, সেগুলোকে কার্যকর করা, শটের পর ওর ফলো থ্রু, র্যাকেট সুইং, ম্যাচ বা প্র্যাকটিসের পর ওর কুলিং ডাউনের কাজকারবার— গ্রেট প্লেয়ারের সব কিছুই শেখার অন্যদের কাছে। আমি তো এখনও শিখব,’’ বলেছেন লিয়েন্ডার।
এ রকম মেগা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোর্টে নেমে ভারতের হারানোর কিছু নেই, মনে করছেন লিয়েন্ডার। বরং স্পেনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্পষ্ট লিয়েন্ডার। ‘‘আমি জাতীয় দলের জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত। ন’টা প্রজন্মের সঙ্গে খেলা হয়ে গিয়েছে আমার। এই ভারতীয় দলটার কাছে আমি উদাহরণ হতে চাই। এখনও বেশির ভাগ সময় প্র্যাকটিসে আমি সবার আগে ঢুকি, বেরোই সবার শেষে। আশা করি, আমাদের এই দলের তরুণরা সেটা দেখে। আমার ভলি কোনও কালে খারাপ নয় কিন্তু এখনও সেটা নিয়ে আমি কোচের সঙ্গে পড়ে থাকি। নিজের যৌবনের দিনগুলোর মতো এখনও ড্রিল করি। প্র্যাকটিসে কয়েকশো ডাউন দ্য লাইন, ক্রসকোর্ট মেরে থাকি। টেনিস খেলাটা মুখে হয় না, এটা পুরোপুরি অ্যাকশনের ব্যাপার,’’ লিয়েন্ডারের আজকের কথাবার্তা যেন ভারতীয় টেনিসের তরুণ প্রজন্মের জন্য সতর্কবার্তা।
লিয়েন্ডার পরিষ্কার চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন, ‘‘জুনিয়ররা এগিয়ে আসুক। উঠে আসুক। আমাকে টপকে যাক। আমাকে বলুক, লি তোমার জায়গা নেই টিমে। আমি তক্ষুনি সরে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy