Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ছেনি-হাতুড়ির সংসারে স্বপ্ন দেখাচ্ছে সাইকেল

টানাটানির সংসারে অন্যের বাড়িতে একবার পরিচারিকার কাজও করতে হয়েছিল। এহেন মেয়েই সম্প্রতি জাতীয় স্তরের সাইকেল রেসিংয়ে চতুর্থ হয়ে গ্রামের নাম উজ্জ্বল করেছে।

পুণে থেকে ফেরার পরে। স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে তিন জনকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন দেবকুণ্ড এসএআর এম গার্লস হাই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

পুণে থেকে ফেরার পরে। স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে তিন জনকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন দেবকুণ্ড এসএআর এম গার্লস হাই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২৬
Share: Save:

ছেনি আর হাতুড়ি নিয়ে বাবাকে রোজ শক্তপোক্ত ইমারত ভাঙতে দেখত ও। সম্ভবত তা দেখেই নিজের মনটাকে ইস্পাত কঠিন করে তুলেছিল বেলডাঙার সুরজাহান খাতুন। টানাটানির সংসারে অন্যের বাড়িতে একবার পরিচারিকার কাজও করতে হয়েছিল। এহেন মেয়েই সম্প্রতি জাতীয় স্তরের সাইকেল রেসিংয়ে চতুর্থ হয়ে গ্রামের নাম উজ্জ্বল করেছে।

বাবা জাহাঙ্গির শেখ পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা বিড়ি শ্রমিকের কাজ করেন। এমন হতদরিদ্র পরিবারে মেয়ে যখন সাইকেল রেসে নামার কথা বলল, একটু ভয়ই পেয়েছিলেন জাহাঙ্গির। মেয়েকে এর ভাল-মন্দ সবদিকই বোঝানোর চেষ্টা করেন জাহাঙ্গির এবং তাঁর স্ত্রী। তবে দমানো যায়নি সুরজাহানকে। অনুশীলন করার জন্য উপযুক্ত সাইকেল মেলেনি। ছিল না রেসের জুতোও। হার মানেনি দশম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী। আটদিন আগে বন্ধু তাঞ্জিনা খাতুন এবং কোচ মিলনতারা খাতুনের সঙ্গে সে মহারাষ্ট্রের পুনেয় গিয়েছিল। সাইকেল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া আয়োজিত মাউন্টেন বাইকিং বিভাগে যোগ দিতে। একটুর জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছে সুরজাহানের। সাইকেলের চেন পড়ে যাওয়ায় চেন পরে তৃতীয় স্থানাধিকারীর চেয়ে ১৭ সেকেন্ডে পিছিয়ে পড়েছিল সে। সুরজাহান কথায়, ‘‘নিজের সাইকেল ছিল না। তাই অনুশীলনও করতে পারিনি। সাইকেল যেটা দেওয়া হয়েছিল, সেটা আয়োজকদের দিয়েছেন। পুণেয় গিয়ে পায়ের মাপ অনুযায়ী জুতো কেনার কথা ছিল। তা-ও হয়নি। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নেমেছিলাম। কিন্তু সাইকেলের চেন পড়ে যাওয়ায় একটুর জন্য তৃতীয় হতে পারলাম না। খুবই খারাপ লাগছে।’’ আফশোস যাচ্ছেই না তার।

তবে প্রতিকূলতার মধ্যেও চতুর্থ হওয়াকে কম কৃতিত্ব দিচ্ছেন না বেলডাঙার বাসিন্দারা। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক্সে একটুর জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছিল বাঙালি শুটার জয়দীপ কর্মকারের। সুরজাহানকে উৎসাহিত করতে সেই প্রসঙ্গও চেনে আনছেন অনেকে। বুধবার মহারাষ্ট্র থেকে সুরজাহান গ্রামে ফিরেছে। এদিনই তার স্কুল তাকে সংবর্ধনা দেয়। বেলডাঙার দেবকুণ্ড এসএআরএম গার্লস হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন বললেন, ‘‘স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রীই গরিব পরিবারের। অনেকেরই নিজস্ব সাইকেল নেই। তাতেও ওরা থামছে না। স্কু‌লের দুই ছাত্রী সম্প্রতি মহারাস্ট্রে গিয়েছিল। সঙ্গে ওদের কোচ মিলনতারাও ছিলেন। সুরজাহানের কৃতিত্বে আমরা সকলে গর্বিত।’’

এর আগেও সুরজাহান তার স্কুলকে গর্বিত করেছে। পরপর দু’বছর জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় সে একাদশ এবং সপ্তম স্থান পেয়েছিল। এবার চতুর্থ। রেজিনগরের অমরপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গির বেঙ্গালুরুতে। সুরজাহানের মা আফরোজা বিবি বললেন, ‘‘সাইকেল, জুতো কিনে দিতে পারিনি। তার মধ্যেও ও যা করল মা হিসেবে গর্ব হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sports Cycle Racing Beldanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE