Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডেনমার্কে খেলতে যাবে সুন্দরবন, বাধা পাসপোর্ট

ডানা মেলার সুযোগ এসেছে। কিন্তু পায়ে যে শিকল!ডেনমার্কের সবথেকে বড় টুর্নামেন্ট ডানা কাপ শুরু হবে ২৫ জুলাই থেকে। বিশ্ব ফুটবল দুনিয়ায় অন্যতম বড় যুব টুর্নামেন্ট এটি। একটি দেশ থেকে একাধিক দল যোগ দিতে পারে এই প্রতিযোগিতায়।

সুন্দরবনের গৌরব। বাঁ দিকে, জিয়ারুল, ডান দিকে, রাজেশ।

সুন্দরবনের গৌরব। বাঁ দিকে, জিয়ারুল, ডান দিকে, রাজেশ।

সামসুল হুদা
বাসন্তী শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৬:৪৪
Share: Save:

ডানা মেলার সুযোগ এসেছে। কিন্তু পায়ে যে শিকল!

ডেনমার্কের সবথেকে বড় টুর্নামেন্ট ডানা কাপ শুরু হবে ২৫ জুলাই থেকে। বিশ্ব ফুটবল দুনিয়ায় অন্যতম বড় যুব টুর্নামেন্ট এটি। একটি দেশ থেকে একাধিক দল যোগ দিতে পারে এই প্রতিযোগিতায়। এ বার ডানা কাপে সুযোগ পেয়েছে ভারত। ভারতীয় দলের প্রায় সব ফুটবলার দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমির ছাত্র। সেই দলেই সুযোগ পেয়েছে সুন্দরবনের দুই কিশোর জিয়ারুল পাইক ও রাজেশ সর্দার। জিয়ারুল হল স্ট্রাইকার, রাজেশ গোলকিপার। ২০ জুলাই ডেনমার্ক রওনা হওয়ার কথা তাদের। কিন্তু যাবে কী করে? পাসপোর্টই তো নেই! পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলেও এখনও কোনও উত্তর আসেনি। ফলে ডেনমার্কের মাটিতে সুন্দরবনের ছোঁয়া লাগা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ওই দুই কিশোর ফুটবলার যাতে দ্রুত পাসপোর্ট পায় তার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমির সভাপতি সমরজিৎ জানা জানান, যৌনকর্মীদের সন্তানদের ফুটবলের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি জেনে ডানা কাপ কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রায় ৮০টি দল এ বার এই প্রতিযোগিতায় খেলবে। ভারতীয় দলের হয়ে অ্যাকাডেমির ১৬ জন ফুটবলার ডেনমার্ক যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘সমাজে যৌনকর্মীর সন্তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ মিশতে চায় না। আমাদের অ্যাকাডেমি তৈরির পরে অবশ্য সেই ধারণা আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে। এখানে যৌনকর্মীদের সন্তানদের সঙ্গে সাধারণ পরিবারের ছেলেরাও খেলতে আসছে।’’

বাসন্তীর চুনাখালি গ্রামের চা দোকানি মারফত পাইকের ছোট ছেলে জিয়ারুল। তার দুই দাদা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ছোট থেকেই পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলত জিয়ারুল। তখনই এক দিন চুনাখালি বিবেকানন্দ ফুটবল অ্যাকাডেমির সম্পাদক দেবাশিস বৈরাগীর নজরে পড়ে যায়। অন্য ফুটবলার রাজেশ সর্দারের বাড়ি চুনাখালির বড়িয়া গ্রামে। বাবা শুকদেব সর্দার দিনমজুর। মা লতিকা সর্দার অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে। রাজেশকেও গলি থেকে তুলে এনে আধুনিক ফুটবলের অ-আ-ক-খ শিখিয়েছেন দেবাশিসবাবু। গত চার বছর ধরে চুনাখালি বিবেকানন্দ ফুটবল অ্যাকাডেমিতে কোচ অসীম কয়ালের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ওই দু’জন। মে মাসে বারুইপুরে অনূর্ধ্ব ১৬ ভারতীয় দলের দলের জন্য বাছাই শিবির হয়। সেখানে গিয়ে নজর কা়ড়ে ওই দুই কিশোর। ভারতের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্ব ফুটবলের খেলার সুযোগ পায়। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘সুন্দরবনের দুই কিশোরের প্রতিভা দেখেই ওদের অ্যাকাডেমিতে এনেছিলাম। ওরা ডেনমার্কে খেলার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু পাসপোর্ট না পেলে যাবে কী করে? প্রশাসনের এই বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে দেখা উচিত।’’

বিষয়টি জানার পর আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্বার আমাদের অনুমোদিত সংস্থা। ওরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পাসপোর্টের জন্য সহযোগিতা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Denmark Passport' DANA Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE