Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জ্যাভলিন ছেড়ে ক্রিকেটে, অজি বধে ভারতের ভরসা রাজেশ্বরী

দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ স্পিনার একতা বিস্তকে বসিয়ে রাজেশ্বরীকে খেলানোর ফাটকাটা যে এ ভাবে জিতে যাবেন, তা বোধহয় ভাবতেই পারেননি মিতালি রাজ।

রাজীব ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ০৫:২৩
Share: Save:

জ্যাভেলিনের বর্শা ছেড়ে ক্রিকেট বল হাতে তোলা ও দেশকে বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছে দেওয়া — কতটা পথ পেরিয়ে তাঁকে এই জায়গায় আসতে হয়েছে, তা শুধু রাজেশ্বরী গায়কোয়া়ড়ই জানেন।

কারও জানার কথাও নয়। কারণ, কর্নাটকের ঐতিহাসিক শহর বিজাপুরের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের এই মেয়ের লড়াইয়ের খবর এত দিন কে-ই বা রেখেছে? হাফ ডজন ম্যাচে মাঠের বাইরে বসে থাকার পর শনিবার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েই ভারতকে সেমিফাইনালে তোলার যে কৃতিত্ব দেখালেন রাজেশ্বরী, তার পরে এখন সারা দেশ খোঁজ নিচ্ছে তাঁর সম্পর্কে। শনিবারের আগে তো তিনি ছিলেন নিতান্তই অনামী এক মেয়ে।

দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ স্পিনার একতা বিস্তকে বসিয়ে রাজেশ্বরীকে খেলানোর ফাটকাটা যে এ ভাবে জিতে যাবেন, তা বোধহয় ভাবতেই পারেননি মিতালি রাজ। শনিবার রাজ-রাজেশ্বরীর দাপটে জেতার পরও সাধারণ মেয়েটির মুখে ছিল নিতান্ত সাধারণ কথাই। রাজেশ্বরী বলেন, ‘‘এই ক’দিন জল-তোয়ালে নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করে আর যাই হোক ফিটনেসটা কিন্তু রেখেছি। তাই আজ অসুবিধা হয়নি। আর প্র্যাকটিসে তেমন কিছুই বাড়তি করিনি। যা করি তাই করেছি। ম্যাচে ভাল বল করেছি, ফল পেয়েছি। ব্যাস।’’ এর চেয়ে সরল বিবৃতি আর কীই বা হতে পারে?

এই সারল্যই তাঁর শক্তি। বলছেন, রাজেশ্বরীর বোন, রামেশ্বরী। ক্রিকেটার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা যাঁরই ছিল বেশি। রবিবার সন্ধ্যায় ফোনে সেই রামেশ্বরী গায়কোয়াড় বলেন, ‘‘দিদি কোনও কিছু নিয়ে বেশি ভাবে না। খুবই ‘সিধিসাধি’ ও। আগে জ্যাভেলিনে ছিল। বর্শা ছুড়ত। আমিই বরং ছোট থেকে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম।’’

আরও পড়ুন: সামনে আবার সেই অস্ট্রেলিয়া

তা সেই বর্শা ছোড়া থেকে বল ছোড়ায় এলেন কী করে মিতালিদের ‘রাজু’?

রামেশ্বরী বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে একবার এক ট্রায়ালে গিয়েছিল দিদি। সেখানে দু-চারটে বল করার পর ওখানকার কোচ এসে ওকে বলেন, তোমার ক্রিকেটে আসা উচিত। বোলিংটা তো ভালই করো। সেই থেকেই ও ক্রিকেটে উৎসাহ পেয়ে যায়। আর ও উৎসাহ নিয়ে যা করে, তাতেই সফল হয়।’’

সুযোগও পেয়ে যান কর্নাটকের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। তখন রাজেশ্বরী ১৭। পড়তেন ক্লাস ইলেভেনে। মিডিয়াম পেস দিয়েই শুরু করেন। কিন্তু কোচেদের পরামর্শে বদলে নেন বোলিং স্টাইল। ‘‘দিদি নেটে পেস ও স্পিন দুটোই করত। সেই দেখে কোচ স্যর বলেন, পেসের চেয়ে স্পিনটাই ভাল হবে ওর। ও এবার সেটাই শুরু করল। আর দেখুন, সাফল্যও পেল।’’, বললেন রামেশ্বরী।

এর পরে ২০১৪-য় ভারতীয় দলে ডাক পাওয়া। খেলেন সব ফর্ম্যাটেই। ২০১৫-য় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট। ওয়ান ডে-তে ৩.২০-র ইকোনমি রেটে ৫২ উইকেট। তবে এ বারেরটা সেরা। বিশ্বকাপে কোনও ভারতীয় মেয়ের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স। একতা বিস্তের ৫-১৮ ছাপিয়ে গেল তাঁর ৫-১৫। এও যেন আর এক রূপকথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE