Advertisement
E-Paper

বাইশ গজে ‘কারুকাজ’ হচ্ছে শুনে মাঠে শাস্ত্রী

বুধবার প্রথম এ মাঠে এসে দেখা গিয়েছিল উইকেটে বেশ ভাল পরিমাণ সবুজ ঘাস রয়েছে। গত কালও সবুজের আভা একটুও কমেনি। কিন্তু ভারতীয়দের অনুমানকে সত্যি প্রমাণ করে টেস্ট শুরুর একদিন আগে কলম্বোর মতোই এখানেও চলল ঘাস ছাঁটার প্রক্রিয়া।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৭
তৃতীয় টেস্টের স্ট্র্যাটেজি কি হবে? ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিলেন ক্যাপ্টেন কোহালি ও রবি শাস্ত্রী। ছবি: রয়টার্স।

তৃতীয় টেস্টের স্ট্র্যাটেজি কি হবে? ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিলেন ক্যাপ্টেন কোহালি ও রবি শাস্ত্রী। ছবি: রয়টার্স।

বৃষ্টি থামতেই পাহাড়ে ঘেরা পাল্লেকেলের নতুন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠের বাইশ গজের উপর দেখা গেল শ্রীলঙ্কার এক কিংবদন্তিকে। ডেকে নিলেন কিউরেটরকে। দু’জনে মিলে কিছুক্ষণ আলোচনার পরেই দেখা গেল ব্রাশ নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছেন মাঠের কর্মীরা।

পরবর্তী আধ ঘণ্টা ধরে চলল স্বচ্ছ পিচ অভিযান। মানে সবুজ ঘাস ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে যত পারো তুলে দাও। বুধবার প্রথম এ মাঠে এসে দেখা গিয়েছিল উইকেটে বেশ ভাল পরিমাণ সবুজ ঘাস রয়েছে। গত কালও সবুজের আভা একটুও কমেনি। কিন্তু ভারতীয়দের অনুমানকে সত্যি প্রমাণ করে টেস্ট শুরুর একদিন আগে কলম্বোর মতোই এখানেও চলল ঘাস ছাঁটার প্রক্রিয়া।

কিংবদন্তি শ্রীলঙ্কানের নাম?

সনৎ জয়সূর্য। যিনি এখন নির্বাচকদের প্রধান এবং শ্রীলঙ্কার ০-২ হারের জেরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। প্রায় ঘণ্টাখানেকের উপর জয়সূর্য যে ভাবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ঘাস কাটার অভিযান চালালেন, তা তাঁকে ক্রিকেট জীবনেও কখনও করতে দেখা গিয়েছে কি না, সন্দেহ। দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দল তো বটেই। এমনকী, এ দেশের বোর্ড কর্তা বা নির্বাচকেরাও প্রবল চাপে রয়েছেন।

ভারতীয় দল গত কাল সীতা-হরণের অশোক বন আর বীর হনুমানের পায়ের ছাপ দেখতে গিয়েছিল। ঠিক ছিল এ দিন বিরাট কোহালিরা প্র্যাকটিস করতে আসবেন। কিন্তু গত কাল থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় মাঠের অবস্থা প্র্যাকটিসের উপযুক্ত ছিল না। তাই অনুশীলনও বাতিল করে দিতে হল।

দুপুরের দিকে কোহালি-সহ কয়েক জনে এখানকার দক্ষিণ ভারতীয় রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। তখন তাঁদের কাছে খবর পৌঁছায়, পিচে ‘কারুকাজ’ চলছে। হেড কোচ রবি শাস্ত্রী তখন বলেন, পুরো কোচিং টিমকে নিয়ে তিনি মাঠে যাচ্ছেন। পিচের অবস্থা সরেজমিনে দেখে এসে টিমকে তাঁরাই ‘ইনপুট’ দেবেন।

সেই মতো শাস্ত্রী এবং তাঁর তিন সহকারী— ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার, বোলিং কোচ বি. অরুণ এবং ফিল্ডিং কোচ আর. শ্রীধর মিলে পাল্লেকেলের মাঠে ছোটেন। সেখানেও আর এক নাটক। এমনিতে শ্রীলঙ্কায় মাঠের কর্মীরা এমন ভাবে পিচের ‘কারুকাজ’ করছিলেন যাতে ভারতীয়রা তা দেখতে না পায়। কোহালিরা মাঠে আসার আগেই পিচ ঢেকে দেওয়া হচ্ছিল। শ্রীলঙ্কা ০-২ পিছিয়ে পড়ার পর যা নিয়ে রীতিমতো হাসাহাসি শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এ সব ট্যাকটিক্সবাজি না করে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারেরা ভাল খেলায় মন দিক।

যাই হোক, শাস্ত্রী তাঁর টিম নিয়ে মাঠে অতর্কিতে হানা দেওয়ায় পাল্লেকেলের মাঠের কর্মীরা এবং কিউরেটরও থতমত খেয়ে যান। তাঁরা ভাবতে পারেননি, ওই সময় ভারতীয় দলের কেউ পিচ পরিদর্শনে চলে আসতে পারে। তাঁদের মনে হয়েছিল, বৃষ্টিতে প্র্যাকটিস বাতিল করে দিয়ে হোটেলে শুয়ে-বসে কাটাবেন কোহালিরা। কেউ কেউ নাকি এমন মন্তব্যও করেন যে, ২-০ এগিয়ে থাকা টিম খুব একটা পাত্তাই দিচ্ছে না প্রতিপক্ষকে। ওরা একেবারে ম্যাচের দিনই মাঠে এসে পিচ দেখবে। এখন এখানে আসার চান্সই নেই।

তার পরেই তারা আবিষ্কার করে, শাস্ত্রী টিম নিয়ে ঢুকছেন। তবে শ্রীলঙ্কানদের চমকে দিলেও পিচ অভিযানের ফলে ভারতীয় প্রথম একাদশে খুব বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। এমনিতে শনি এবং রবিবার প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে এখানে। তা যদি সত্যি হয়, প্রথম দু’দিনের খেলাই ভেস্তে যেতে পারে। ক্যান্ডি বা পাল্লেকেলে বছরের এই সময়ে প্রায়ই ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার অতীত রেকর্ড রয়েছে।

যদি পূর্বাভাস মিথ্যা হয়ে ঠিক সময়ে খেলা শুরু হয়, ভারতীয় শিবির মনে করছে, দ্বিতীয় দিন থেকে এখানে বল ঘুরতে পারে। একই সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে বলে প্রথম দিকে অন্তত পিচে ভিজে ভাব থাকতে পারে। সেই কারণে দুই পেসার, দুই স্পিনার এবং অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্যকে রেখেই প্রথম একাদশ ভাবা হয়েছে। দুই পেসার হিসেবে আগের দুই টেস্টে খেলা মহম্মদ শামি এবং উমেশ যাদবকেই খেলানোর কথা রয়েছে। অশ্বিনের সঙ্গী হিসেবে সাসপেন্ড হওয়া জাডেজার জায়গায় কুলদীপ যাদবের খেলা কার্যত নিশ্চিত।

অর্থাৎ, ধর্মশালায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত টেস্ট অভিষেকের পর এ বার বিদেশে প্রথম টেস্ট খেলবেন কুলদীপ। যিনি দু’দিন আগেই বলেছেন, পিচ কেমন তা নিয়ে তিনি ভাবেন না। বলেছেন, এখানে পৌঁছনো ইস্তক হেড কোচ রবি শাস্ত্রী তাঁকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। ইতিবাচক কথা বলে যাচ্ছেন। কুলদীপকে অনূর্ধ্ব ষোলো থেকে দেখছেন বোলিং কোচ অরুণ। তাঁর কথাও বলেছেন কুলদীপ যে, ‘‘আমার ক্রিকেট সম্পর্কে ভরত অরুণ স্যার সব কিছু জানেন। এখানে এসে ওঁর সঙ্গে অনেকগুলো বোলিং সেশন করেছি। তাতে দারুণ উপকৃতও হয়েছি।’’

এ দিন কোহালিও বেশ উচ্ছ্বসিত ভাবে বলে গেলেন, ‘‘চায়নাম্যান বোলার সব সময় টিমের কাছে একটা এক্স-ফ্যাক্টর। কুলদীপের আত্মবিশ্বাস খুব ভাল জায়গায় রয়েছে। এই টেস্টে ওর খেলার খুবই ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।’’ এখানেই না থেমে চলল অধিনায়কের প্রশংসা, ‘‘ধর্মশালায় খুব একটা স্পিন-সহায়ক পিচ ছিল না। তা সত্ত্বেও দারুণ বল করে ম্যাচটাকে আমাদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল কুলদীপ। ও এমন এক প্রতিভা, যা চট করে পাওয়া যায় না।’’ অধিনায়কের সমর্থন। কোচের উৎসাহ। টগবগ করে ফুটতে থাকা কুলদীপ ভেল্কি দেখাতেই পারেন।

ওহ্, মনে পড়ে গেল ধর্মশালার মতো এটাও তো পাহাড়ে ঘেরা মাঠ!

Cricket Ravi Shastri Virat Kohli India Vs Sri Lanka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy