জয়োচ্ছ্বাস। ফেডেরার, সানিয়াদের নাচ। ছবি: পিটিআই
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশের সব মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর প্রথম বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলেন না।
রজার ফেডেরার ম্যাচ জিতে কোর্টেই নাচলেন! ডিজে-র বাজনার তালে। রীতিমতো কোমর দুলিয়ে।
দু’টো মেগাঘটনাই রবিবাসরীয় নয়াদিল্লিতে। কয়েক ঘণ্টার আগুপিছু।
এবং সন্ধের রাজধানীতে সামান্য উঁকি মেরে মনে যাচ্ছে, প্রথমটার থেকে দ্বিতীয়টা নিয়ে জনতার যেন বেশি ইন্টারেস্ট। বেশি আলোচনা।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নাদাল বছর ছয়েক আগে উইম্বলডনে তাঁর সামনে দিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি নিয়ে যাওয়ার সময় ফেডেরার কেঁদে ফেলেছিলেন। কোর্টে শশার মতো ঠান্ডা রজারকে প্রকাশ্যে ওই এক বারই আবেগাপ্লুত দেখেছে টেনিসবিশ্ব। আর আজ দেখল। ভারতের মাটিতে রাজা রজার প্রথম বার কোর্টে নামতেই!
আইপিটিএলের দিল্লি পর্বের আজ দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্বের এক নম্বর নোভাক জকোভিচও নেমে পড়েছেন। ডাবলসে। প্রথম ম্যাচে ফেডেরারের আগে এ দেশের কোর্টে প্রথম বার খেললেন আর এক কিংবদন্তি পিট সাম্প্রাস। যাঁর সঙ্গে এক ফ্লাইটে দিল্লি পৌঁছনোর আনন্দে ফেডেরার এ দিন অত ভোরেও টুইট করেছেন—‘হাই ইন্ডিয়া, তোমার কাছে আসার বিমানে আমার পাশের সিটে কে বসেছিল জানো? পিস্তল সাম্প্রাস!’ কিন্তু ভারতে অসংখ্য ফেডেরার সমর্থকদের তাতেও যেন কিছু আসে-যায় না। চুলোয় যাক এ দিন ইন্ডিয়ান এসেসের সহজ জয়, দুবাই রয়্যালসের শেষ মুহূর্তে সুপার শু্যট আউটে হারও।
তারা বুঁদ হয়ে আছে ভারতের কোর্টে প্রথম বার ফেড-এক্স দর্শনে। আজ গ্যালারি যেন মিনি ভারত। দিল্লির জনতার সঙ্গে বসে বেঙ্গালুরুর প্রেমিক-প্রেমিকা। কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের অধ্যাপক। চেন্নাইয়ের ইঞ্জিনিয়ার যুবক। হায়দরাবাদের বাঙালি আইটি এক্সিকিউটিভ। গ্যালারিতে অসংখ্য তো উড়ছেই, কোর্টের প্রায় লাগোয়া পঞ্চাশ হাজার টাকার বক্স সিটেও সুবেশী সুন্দরী তরুণীর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে এমনও লেখা— ‘উইল ইউ ম্যারি মি রজার?’ একটা প্ল্যাকার্ড দেখলাম—‘লাইফ ইজ কমপ্লিট টু ডে। নো রিগ্রেটস!’ আর একটায় লেখা—‘নট ফ্রি ওয়াই-ফাই। লাভ ইউ মোর দ্যান মাই ওয়াইফ!’
সম্প্রতি সাংহাইয়ে ফেডেরার খেলতে গেলে তাঁর চিনাভক্তরা সে দেশে দুর্মূল্য ‘ওয়াই-ফাই’-এর উপমা দিয়েছিলেন। আবার সাংহাইয়ের মতোই দিল্লিতেও ফেডেরারের প্রেস মিটে তিনি ঢুকতেই কর্মরত সাংবাদিকেরা পর্যন্ত উত্তেজনা-আনন্দে চিৎকার করে হাততালি দিয়ে উঠলেন আজ। এমনই মহিমা রজার ফেডেরার নামের।
বিশ্বের যে কোনও অত্যাধুনিক ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সঙ্গে পরিকাঠামো আর গ্ল্যামারে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখা ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোরের ভিভিআইপি এনক্লোজারে এ দিন আগের দিনের চেয়েও মহাতারকার ছড়াছড়ি। সুনীল গাওস্করের কয়েক হাত দূরে অমিতাভ বচ্চন। বিগ বি হাজির টেনিসের বিগেস্ট-কে দেখতে। বচ্চনের সঙ্গী কখনও লারা দত্ত, কখনও মহেশ ভূপতি। হাজির কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী।
সচিন, সচিন তেন্ডুলকর আসেননি? ভারতে প্রথম খেলতে এসে দিল্লির কোন সাতটা দ্রষ্টব্য স্থানে যাবেন-এর মতোই ফেডেরারের ঘোষণা ছিল, এ দেশে তাঁর প্রথম বার খেলতে আসার একটা অন্যতম কারণ হল, সচিনের সঙ্গে দেখা করা। কিন্তু লিটল মাস্টার থাকলেও মাস্টার ব্লাস্টার ছিলেন না। কাল কি আসবেন?
কিন্তু হাজার পনেরো যাঁরা ছিলেন, তাঁরা দেখলেন এবং হয়তো শিখলেনও যে, চ্যাম্পিয়ন বাড়ির ছাদে খেলতে নামলেও হারতে চায় না।
সঙ্গে এটাও জানা হয়ে গেল আমাদের যে, প্রতিযোগিতামূলক হোক কিংবা প্রদর্শনী ম্যাচ— মহাতারকা সব জায়গাতেই সিরিয়াস। নিজের একশো ভাগ দেবে। সেটাই নিয়ম। ‘লাভ’-এ মিক্সড ডাবলস জিতে উঠে কোর্টের ধারে টিভির লাইভ ইন্টারভিউয়ে ফেডেরার বললেন, “এর আগে জীবনে তিন বার মিক্সড ডাবলস খেলেছি। দুই মার্টিনা (নাভ্রাতিলোভা-হিঙ্গিস) আর আমার বৌ মির্কার সঙ্গে!”
অনেক দিন টেনিসের থেকে অনেক দূরে থাকা সাম্প্রাস হয়তো বলবয়দের থেকে একটাই বল চেয়ে নিয়ে সার্ভ করায় কেউ কেউ ভাবতে চাইছিলেন, ফেডেরারও না আইপিটিএলকে সহজ ভঙ্গিতে নেন! কিন্তু সাম্প্রাসের হারে সিঙ্গাপুর স্ল্যামার্সের বিরুদ্ধে শুরুতেই পিছিয়ে পড়া ইন্ডিয়ান এসেসের পরের ম্যাচে (মিক্সড ডাবলস) সানিয়া মির্জাকে নিয়ে ফেডেরার নামতেই গ্যালারি যাকে বলে ‘ইলেকট্রিফাইং’।
পরের তিনটে সেটই খেললেন ফেডেরার। সানিয়ার পরে রোহন বোপান্নাকে নিয়ে ডাবলস। তার পর বিশ্বের সাত নম্বর টমাস বার্ডিচের বিরুদ্ধে সিঙ্গলস। এবং ফেডেরার খেললেন ফেডেরারের মতোই। দু’টো ডাবলস মিলিয়ে ‘টিম রজার’ মাত্র একটা গেম হারল। সেটাও বোপান্না সার্ভিস নষ্ট করায়। সিঙ্গলসে তো নিজে ব্রেক খেয়ে তার পরের সার্ভিসেই বার্ডিচকে ব্রেক করে ৬-৪ সেট জিতেই ফেডেরার সটান ছুট লাগালেন কোর্টের ধারে। টিমমেটদের কাছে। তার পর সানিয়া, ইভানোভিচ, মঁফিস, সাঁতোরোদের মাঝে দাঁড়িয়েই রজারের সেই মহাঅপ্রত্যাশিত কোমর দুলিয়ে নাচ!
ফেডেরারের খেলা তো আজকেরটা ধরে একত্রিশটা দেশের মানুষ স্বচক্ষে দেখল! কিন্তু রজারের আবেগ এ ভাবে ছলকে উঠতে ক’টা দেশ দেখেছে? ক’জন দেখেছে?
ভারত, তুমি সত্যিই ভাগ্যবান!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy