Advertisement
E-Paper

মন্থর উইকেটে শেষ বেলায় আকাশ-দাপটে তরতাজা বাংলা

প্রথম দিনের শেষে পাঁচ উইকেট হারিয়ে সৌরাষ্ট্রের স্কোর ২০৬।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২০ ০২:৪০
উল্লাস: তিন উইকেট নিয়ে ছন্দে আকাশ দীপ। বারোটকে ফেরানোর পরে তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ঋদ্ধিমানদের। সোমবার রাজকোটে রঞ্জি ফাইনালে। ছবি: পিটিআই।

উল্লাস: তিন উইকেট নিয়ে ছন্দে আকাশ দীপ। বারোটকে ফেরানোর পরে তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ঋদ্ধিমানদের। সোমবার রাজকোটে রঞ্জি ফাইনালে। ছবি: পিটিআই।

সব ভাল যার, শেষ ভাল তার।

রঞ্জি ট্রফি ফাইনালের প্রথম দিনের শেষে বাংলার অবস্থাও যেন সে রকম। টস হেরে দিন শুরু হয়েছিল বাংলার। লাঞ্চ পর্যন্ত কোনও উইকেটই ফেলতে পারেনি বাংলার পেস ত্রয়ী। দিনের শেষে পাঁচ উইকেট হারিয়ে সৌরাষ্ট্রের স্কোর ২০৬। ফিরে গিয়েছেন অভি বারোট, হার্ভিস দেশাই, বিশ্বরাজ জাডেজা, শেল্ডন জ্যাকসন ও চেতন সাকারিয়া।

সাধারণত পাঁচ দিনের ম্যাচের প্রথম দিন উইকেট থেকে কিছুটা সাহায্য পান পেসারেরা। এসসিএ স্টেডিয়ামের পিচ সেই ধারণা পাল্টে দিতে বাধ্য। প্রথম দিন থেকেই নিচু হয়ে যাচ্ছে বল। উইকেট থেকে উঠতে শুরু করেছে ধুলো। এসসিএ স্টেডিয়ামের পিচ দেখে ক্ষুব্ধ বাংলার কোচ অরুণ লাল। বলেই দিলেন, ‘‘রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে এ ধরনের পিচ আশা করা যায় না।’’

আরও পড়ুন: অলিম্পিক্সে যাচ্ছেন মেরি কম

ইডেনের বাইশ গজে বল করে আসার পরে এই পিচের সঙ্গে মানাতে সমস্যা হচ্ছিল বাংলার পেসারদের। বিপক্ষ ওপেনিং জুটিও তাই অনায়াসে রান যোগ করছিল বোর্ডে।

বাধ্য হয়ে তিন নম্বর বোলার হিসেবে আকাশ দীপের পরিবর্তে আনা হয় শাহবাজ আহমেদকে। শুরুতে রীতি অনুযায়ী ডান-হাতি ব্যাটসম্যানকে রাউন্ড দ্য উইকেট বল করছিলেন। কিন্তু ঈশানের স্পাইকে পিচে ক্ষত তৈরি হওয়া জায়গা ব্যবহার করার জন্য ওভার দ্য উইকেট বল করতে শুরু করেন শাহবাজ। ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের ‘ব্লাইন্ড স্পট’-এ বল ফেলতে শুরু করেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কী এই ব্লাইন্ড স্পট? ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের সামনের পায়ের বাঁ-দিকে বল পড়লে দেখতে সমস্যা হয়। বাঁ-হাতি স্পিনার অথবা লেগস্পিনার সেই জায়গা ব্যবহার করে রান আটকানোর চেষ্টা করেন। সেই ফাঁদে পড়েই ধৈর্য হারিয়ে উইকেট ছুড়ে দেন ব্যাটসম্যানেরা।

শাহবাজের পরিকল্পনা বিফলে যায়নি। ৩৮তম ওভারে প্রথম উইকেট হারায় সৌরাষ্ট্র। শাহবাজের বল হার্ভিকের ব্যাটে লেগে চলে যায় সিলি পয়েন্টে। ৩৮ রানে ফিরে যান ওপেনার। যদিও ৩৮ রান করতে দু’বার জীবন ফিরে পান তিনি। ২৩ রানের মাথায় আকাশ দীপের বলে বারোটের সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন অনুষ্টুপ মজুমদার। আঙুলে আঘাত পেয়ে সারা দিন মাঠেই নামেননি বাংলার অন্যতম কান্ডারি। কোচ যদিও বললেন, ‘‘ওর মাঠে নামতে সমস্যা হবে না। এখন ব্যথা অনেকটাই কম।’’ দেশাইয়ের দ্বিতীয় ক্যাচ পড়ে ৩৫ রানে। শাহবাজের বলে স্লিপে ক্যাচ ফেলেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। ৫৪ রান করা বারোটেরও ক্যাচ পড়ে শাহবাজের বলে।

দেশাই ফিরতেই গুটি কয়েক সমর্থক চেঁচিয়ে ওঠেন ‘‘পুজারা... পুজারা...’’। ড্রেসিংরুমে প্যাড পরে বসে থাকলেও তাঁর পরিবর্তে খেলতে আসেন বিশ্বরাজ জাডেজা। অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগ থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে একই জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। টি-টোয়েন্টি লিগে জাডেজার সামনেই সেঞ্চুরি করেন তরুণ ডান-হাতি। সেখান থেকেই উত্থান। নিষ্প্রাণ পিচে তিনিই দ্রুত রান যোগ করার দায়িত্ব নেন। কাঁটা হয়ে দাঁড়ান আকাশ দীপ। মরসুমের শুরুতেই অরুণ বলেছিলেন, ‘‘যে উইকেটে বোলাররা কোনও সাহায্য পাবে না, সেখানে উইকেট নিয়ে দেখিয়ে দেবে আকাশ।’’ ঠিক তাই। রিভার্স সুইং শুরু হতেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন তরুণ পেসার। ৪৯তম ওভারে প্রথম বল ইনসুইং ভেবে খেলতে যান বারোট। বাইরের দিকে কাট করে আকাশের ডেলিভারি। বারোটের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় ঋদ্ধিমান সাহার হাতে। ৫৪ রানে ফিরে যান বারোট। আকাশের দ্বিতীয় উইকেট যে কোনও ইনসুইং বোলারের স্বপ্নের ডেলিভারি। ৫৪ রানে ক্রিজে থিতু হয়ে যাওয়া বিশ্বরাজ তখন দ্রুত রান করার চেষ্টায় মগ্ন। ৬৬তম ওভারের তৃতীয় বলে কভারের ফিল্ডার সরিয়ে গালি অঞ্চলে নিয়ে আসেন আকাশ। বিশ্বরাজের জন্য যে সে ফাঁদ তৈরি করবেন হয়তো বোঝেননি তরুণ ব্যাটসম্যান। পায়ের সামনে বল করে তাঁকে কভার ড্রাইভের জন্য প্রলুব্ধ করেন বঙ্গ পেসার। সিমে পড়ে বিশ্বরাজের ব্যাট ও পায়ের ফাঁক দিয়ে স্টাম্পে আছড়ে পড়ে আকাশের ডেলিভারি।

তিন উইকেট পড়লেও পুজারার দেখা পাওয়া যায়নি। পাঁচ নম্বরে শেল্ডন জ্যাকসন দ্রুত রান যোগ করার চেষ্টায় ব্যর্থ। ঈশানের বল নিচু হয়ে প্যাডে লাগে তাঁর। ক্রিজে আসেন পুজারা। ইনিংস শুরু করেন দুরন্ত ফ্লিকে চার রান কুড়িয়ে। কিন্তু দশ ওভার ব্যাট করার পরে মাটিতে বসে পড়েন। চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিলেও অসুস্থবোধ করেন। ফিরে যান ড্রেসিংরুমে (৫)। সৌরাষ্ট্রকে আরও চেপে ধরে বাংলা। দিনের শেষ ওভারে ফিরে যেতে হয় চেতন সাকারিয়াকেও। তিন উইকেট নিয়ে দিন শেষ করেন আকাশ। একটি করে উইকেট ঈশান ও শাহবাজের।এই পরিস্থিতি থেকে কত রানের মধ্যে বিপক্ষকে অলআউট করা সম্ভব? অরুণের উত্তর, ‘‘চেষ্টা করা হবে ২৮০ রানের মধ্যে বিপক্ষকে বাঁধার। পিচের যা অবস্থা, দ্বিতীয় ইনিংসে বল আরও নিচু হলে এই রান করাও কঠিন হতে পারে।’’

স্কোরকার্ড
সৌরাষ্ট্র ২০৬-৫ (৮০.৫)

সৌরাষ্ট্র (্প্রথম ইনিংস)
দেশাই ক পরিবর্ত বো শাহবাজ ৩৮ • ১১১
বারোট ক ঋদ্ধিমান বো আকাশ ৫৪ • ১৪২
বিশ্বরাজ বো আকাশ ৫৪ • ৯২
অর্পিত ন. আ. ২৯ • ৯৪
শেল্ডন এলবিডব্লিউ বো ঈশান ১৪ • ১৫
পুজারা অবসৃত ৫ • ২৪
চেতন ক ঋদ্ধিমান বো আকাশ ৪ • ৮
অতিরিক্ত ৮ মোট ২০৬-৫ (৮০.৫)
পতন: ১-৮২ (দেশাই, ৩৭.৫), ২-১১৩ (বারোট, ৪৮.১), ৩-১৬৩ (বিশ্বরাজ, ৬৫.৩), ৪-১৮২ (শেল্ডন, ৬৮.৬), ৫-২০৬ (চেতন, ৮০.৫)।
বোলিং: ঈশান পোড়েল ১৬-৫-৩৭-১, মুকেশ কুমার ২২-৩-৫৫-০, শাহবাজ আহমেদ ২৩-৬-৫৬-১, আকাশ দীপ ১৪.৫-৩-৪১-৩, অর্ণব নন্দী ৫-১-১১-০।

Cricket Cricketer Ranji Trophy Final Bengal Saurashtra Rajkot Ranji Trophy Akash Deep
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy