Advertisement
E-Paper

স্যরই শেখান জেতার মন্ত্র, মনে পড়ছে ছাত্র আজ্জুর

অধিনায়কত্ব জীবনের ঘোর দুঃসময়ে ওয়াড়েকরকে পাশে পেয়েছিলেন আজহার। কোচ এবং অধিনায়ক মিলে দেশের মাটিতে ঘূর্ণি উইকেটে স্পিনারদের দিয়ে আক্রমণ করিয়ে জয়ের নকশা তৈরি করেছিলেন। তার পরে সব কোচ, অধিনায়কই সেই নকশা অনুসরণ করেছেন

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৯
স্মৃতি: ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে আজহার-ওয়াড়েকর। ফাইল চিত্র

স্মৃতি: ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে আজহার-ওয়াড়েকর। ফাইল চিত্র

ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম চাণক্য-চন্দ্রগুপ্ত জুটি বলা হত তাঁদের। চাণক্যের চিরবিদায়ে তাই কাতর শোনাচ্ছে মহম্মদ আজহারউদ্দিনের গলা। বেঙ্গালুরুতে টি-টোয়েন্টি প্রিমিয়ার লিগের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকেই ফোনে অজিত ওয়াড়েকরের প্রয়াণ নিয়ে বললেন, ‘‘দুঃসংবাদটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার কাছে সারা জীবনই উনি স্যর থাকবেন।’’

অধিনায়কত্ব জীবনের ঘোর দুঃসময়ে ওয়াড়েকরকে পাশে পেয়েছিলেন আজহার। কোচ এবং অধিনায়ক মিলে দেশের মাটিতে ঘূর্ণি উইকেটে স্পিনারদের দিয়ে আক্রমণ করিয়ে জয়ের নকশা তৈরি করেছিলেন। তার পরে সব কোচ, অধিনায়কই সেই নকশা অনুসরণ করেছেন। আজহার কিন্তু মানেন না যে, ওয়াড়েকর শুধু দেশের মাটিতে জেতার দিকেই নজর দিয়েছিলেন। ‘‘উনিই প্রথম আমাদের জেতার জন্য খেলার লক্ষ্য নিতে শেখান,’’ বলছেন আজহার, ‘‘কাউকে অসম্মান না করেই বলছি, তার আগে ড্র করার জন্য খেলা হত বা হার বাঁচানোটাই প্রথম লক্ষ্য থাকত। কিন্তু উনিই প্রথম জেতার জন্য খেলার মন্ত্র আনেন দলের মধ্যে। এবং, শুধু দেশের মাটিতে বলেই নয় বিদেশেও জেতার কথা ভাবতে শিখিয়েছিলেন স্যর। আমাদের বলতেন, জেতার বিশ্বাস তৈরি করতে হবে আগে।’’

ভারতীয় দলে তখন কোচের পদ ছিল না। অজিত ওয়াড়েকর ছিলেন ম্যানেজার। কিন্তু ফুটবলে আলেক্স ফার্গুসনের মতোই পিতৃসম চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন ড্রেসিংরুমে। গাম্ভীর্য এবং ব্যক্তিত্ব নিয়ে চললেও ছেলেদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে ঠাট্টা-ইয়ার্কিতেও মেতে উঠতেন। আজহারের যেমন মনে পড়ছে, ‘‘এক বার আমরা খুব বলতে শুরু করি যে, স্যর, আপনার ব্যাটিং আমরা দেখিনি। তখন কী রকম ব্যাটিং হত আমরা জানি না। আমাদের এক বার নেটে ব্যাটিং করে দেখান। সত্যিই কিন্তু প্যাড পরে নেমে পড়েছিলেন উনি। মুখে নয়, কাজেও তিনি নির্ভীক ছিলেন। না হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে সিরিজ জিততে পারতেন না।’’

অধিনায়ক হিসেবে আজহার এবং বোলার অনিল কুম্বলের উত্থানের পিছনে সব চেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ওয়াড়েকরের। প্রয়াত গুরুর কাছ থেকে পাওয়া সেরা উপদেশ কী? জিজ্ঞেস করায় আজহারের জবাব, ‘‘অনেক ভাল উপদেশই আছে। উনি পিতৃসম ছিলেন, তাই শুধুই যে ক্রিকেট নিয়ে উপদেশ দিতেন এমন নয়। অনেক সময়ে মাঠের বাইরের অনেক অমূল্য পরামর্শও পেয়েছি। তবে যদি একটা জিনিসকে বাছতে হয়, তা হলে বলব, জেতার মন্ত্র তৈরি করাটা। ওঁর অধীনে আমাদের মানসিকতাটাই পাল্টে গিয়েছিল। রক্ষণাত্মক থেকে ভারতীয় দল আক্রমণাত্মক হয়ে জেতার জন্য খেলা শুরু করে ওঁর আমলেই।’’

ম্যানেজার হিসেবে কঠোরও হতে পেরেছিলেন ওয়াড়েকর। তাঁর আমলেই মনোজ প্রভাকর এবং নয়ন মোঙ্গিয়াকে মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য বসিয়ে দেওয়া হয়। শোনা যায়, এক তারকা ক্রিকেটারকে এক বার তিনি মুখের উপরে বলে দিয়েছিলেন, ‘‘তোমাকে তো নেটে বলই করতে দেখছি না। এখন থেকে অন্তত তিন জন ব্যাটসম্যানকে বল করতে হবে।’’ সেই তারকাই এক বার হোটেলে ডাবল রুম চাওয়ায় বলে দেন, ‘‘টিমের সেরা পারফর্মারকে আমি ডাবল রুমের চাবি দিয়ে দিয়েছি। তুমি পরের ম্যাচে সব চেয়ে বেশি উইকেট নাও, তোমাকেও দেব।’’

আজহার পুরনো সব কাহিনির মধ্যে আর ঢুকতে চান না। তবে এটুকু বলে দিচ্ছেন, ‘‘শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনও আপস উনি করতেন না।’’ প্রাক্তন অধিনায়কের মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, ম্যান ম্যানেজমেন্ট স্কিলের দিক থেকে ওয়াড়েকর ছিলেন সবার চেয়ে এগিয়ে। সেই সঙ্গে ধুরন্ধর মস্তিষ্ক। সেই কারণেই যেমন সফল অধিনায়ক ছিলেন, তেমনই দারুণ রেকর্ড ম্যানেজার হিসেবেও।

ওয়াড়েকরের সঙ্গে একই আবাসনে থাকেন রবি শাস্ত্রী। ভারতীয় দলের হেড কোচও নটিংহ্যামে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বললেন, ‘‘খুবই ধুরন্ধর অধিনায়ক ছিলেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক এবং সব চেয়ে সফল ম্যানেজারদের এক জন।’’ যোগ করলেন, ‘‘আমাদের গোটা দলের পক্ষ থেকে ওঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে চাই।’’

Death Ajit Wadekar Memory Mohammad Azharuddin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy