মসনদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও কলঙ্ক-মুকুট হয়তো মাথা থেকে নামাতে পারবেন না সেপ ব্লাটার। বরং দুর্নীতির পঙ্কিল জমিতে তাঁর উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে।
ফিফা প্রধানের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সঙ্কট আরও ঘনীভূত ফিফায়। বুধবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের অনুরোধে ফিফার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাক ওয়ার্নার, প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ কমিটি সদস্য নিকোলাস লিওজ-সহ ছ’জনের নামে রেড কর্নার নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, গোটা তদন্তের আসল লক্ষ্য ঊনআশি বছরের ফিফা প্রধান। ব্লাটারকে কাঠগড়ায় তুলতেই জাল ক্রমশ গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে তাঁর পারিষদদের ঘিরে।
গত সপ্তাহে জুরিখের হোটেল থেকে যে সাত প্রাক্তন ও বর্তমান ফিফা কর্তাকে গ্রেফতার করে সুইস কর্তৃপক্ষ, প্রত্যেকে লাতিন আমেরিকা বা ক্যারিবিয়ান্সের। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই এঁদের প্রত্যর্পন চেয়েছে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মত, সুইৎজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি-প্রত্যর্পন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ধৃতদের অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া সহজ হবে না। এ দিকে মার্কিন প্রচারমাধ্যমের বলছে, এঁদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় এফবিআই। একটি সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে কাগজগুলি লিখেছে, ‘‘আমরা আশাবাদী, ব্লাটারের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহে এঁরা সহযোগিতা করবেন।’’
সরকারি ভাবে, মার্কিন প্রশাসনের চোদ্দো জনের অভিযুক্ত তালিকায় ব্লাটারের নাম নেই। তবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ এটাও জানিয়েছে যে, তিনি সন্দেহের উর্ধ্বে নন। তদন্তের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতেই পারে। ব্লাটার সন্দেহের আওতায় কি না, জানতে চাওয়া হলে, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল লোরেটা লিঞ্চ এ দিন শুধু বলেন, ‘‘মামলা চলছে। যা বলার এখন থেকে আদালতের মাধ্যমেই বলা হবে।’’ এফবিআইয়ের সরকারি বিবৃতি আরও ধন্ধে ফেলা। বলা হয়েছে, ‘‘আমরা হয়তো গোটা সংগঠনটাকে ভাঙতে পারব না। হতে পারে তার প্রয়োজনও পড়বে না।’’
এক দিকে, চব্বিশ বছর ধরে পনেরো কোটি ডলারেরও বেশি অঙ্কের দুর্নীতি, তহবিল তছরুপ আর ধান্দাবাজির অভিযোগ নিয়ে মার্কিন তদন্ত। অন্য দিকে, ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপ ‘পাইয়ে দেওয়া’ নিয়ে সুইস কর্তৃপক্ষের তদন্ত। সঙ্গে কর্তাদের গ্রেফতারির ধাক্কা। পর্যুদস্ত ফিফা অবশ্য চরমতম দুঃসময়েও দক্ষিণ আফ্রিকা আর ফ্রান্সের মতো সদস্য দেশকে পাশে পেয়েছে এ দিন।
এক কোটি মার্কিন ডলার ঘুষের বিনিময়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০০৪ বিশ্বকাপ পাইয়ে দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত জ্যাক ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের নোটিস জারির দিন অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়ামন্ত্রী ফিকিলে মম্বালুলা। গতকাল মার্কিন গোয়েন্দারা দাবি করেন, লেনদেন হয়েছিল ফিফার সেক্রেটারি জেনারেল জেরোম ভালকের নির্দেশে। যার পরেই আসে ব্লাটারের পদত্যাগের ঘোষণা। তবে ভালকে লিখিত প্রতিবাদে অভিযোগ অস্বীকার করার পর মম্বালুলা এ দিন বলেছেন, ‘‘‘ঘুষ নয়, টাকা দেওয়া হয়েছিল ক্যারিবিয়ান্সে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের উন্নতির জন্য। ফিফা বনাম যুক্তরাষ্ট্র লড়াইয়ে এ ভাবে আমাদের নাম জড়ানো বরদাস্ত করা হবে না।’’ ফরাসি ফুটবল সংস্থার প্রধান নোয়েল লে গ্রায়েতও বলেছেন, ‘‘ব্লাটার দুর্নীতি করতে পারেন, এটা বিশ্বাস করি না।’’
ওয়ার্নার এই মুহূর্তে ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোয় এবং গত সপ্তাহে সুইস কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত। ইন্টারপোলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা লিওজ প্যারাগুয়েতে গৃহবন্দি। বাকি চার জন বিভিন্ন স্পোর্টস মার্কেটিং কোম্পানির প্রধান।
এ দিকে, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ফের বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন এফএ চেয়ারম্যান গ্রেগ ডাইক। বলেছেন, ‘‘ফিফা নিরাপত্তা কমিটির সুপারিশের বিরুদ্ধে গিয়ে কাতারকে কী করে বিশ্বকাপ দিল সেটা বিশাল ধাঁধা। যা চলছে, আমি কাতারের সংগঠক হলে দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পারতাম না।’’ যাতে কাতারের পাল্টা, ‘‘ডাইককে অনুরোধ, ২০২২ বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা রাখে এমন ইংল্যান্ড দল গড়ার প্রতিজ্ঞাটা কী করে রাখবেন সেটা ভাবুন। বাকিটা না হয় আইনের পথেই চলুক।’’
ফিফা-নাটক কোন দিকে গড়ায় সেটা সময় বলবে। তবে বিশ্বকাপের গায়ে কলঙ্কের যে কালি লেগে গেল, সেটা মোছা সহজ হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy