Advertisement
১০ মে ২০২৪

তেরো বছর আগেরটা আমার কাছে এগিয়ে থাকবে

মোহনবাগানে আমার আসা উনিশশো ছেচল্লিশ সালে। প্রায় সত্তর বছর আগের কথা। মোহনবাগানের প্রচুর বড় বড় ম্যাচ দেখেছি। বহু ম্যাচে নিজে খেলেওছি। সেখান থেকে আনন্দবাজারের জন্য পাঁচ সেরা জয় বা ট্রফি বাছতে বসে প্রথমেই একটা কথা বলে নিতে চাই। কুড়ি বা তিরিশের দশকে যদি মোহনবাগান কিছু করে থাকে, মার্জনা করবেন। আমার আর এখন মনে নেই।

২০০২-এর সেই চ্যাম্পিয়ন টিম।

২০০২-এর সেই চ্যাম্পিয়ন টিম।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:০৮
Share: Save:

মোহনবাগানে আমার আসা উনিশশো ছেচল্লিশ সালে। প্রায় সত্তর বছর আগের কথা। মোহনবাগানের প্রচুর বড় বড় ম্যাচ দেখেছি। বহু ম্যাচে নিজে খেলেওছি। সেখান থেকে আনন্দবাজারের জন্য পাঁচ সেরা জয় বা ট্রফি বাছতে বসে প্রথমেই একটা কথা বলে নিতে চাই। কুড়ি বা তিরিশের দশকে যদি মোহনবাগান কিছু করে থাকে, মার্জনা করবেন। আমার আর এখন মনে নেই। যতটুকু মনে হচ্ছে, উনিশশো এগারোর ঐতিহাসিক শিল্ড জয়ের পর মোহনবাগানের পরের গর্বলাভ উনিশশো ঊনচল্লিশে। ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম বার কলকাতা লিগ জয়ের দিন। মাঝের সময়ে বড় কোনও সাফল্য বাদ যাচ্ছে বলে মনে হয় না। যা-ই হোক, এক এক করে নীচে মোহনবাগানের সেরা পাঁচ গর্বের দিনকে সাজিয়ে দিলাম।
এক) ১৯১১, প্রথম শিল্ড জয়: সন্দেহ নেই, মোহনবাগানের সর্বশ্রেষ্ঠ সাফল্য। ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে হারিয়ে শিল্ড পাওয়াটা তো শুধু মোহনবাগানের কাছে প্রাপ্তি ছিল না, বিশ্বকে একটা বার্তাও দেওয়া গিয়েছিল যে ভারতও পারে ফুটবল খেলতে। আর শিবদাস ভাদুড়ি, বিজয় দাস ভাদুড়ি, অভিলাষ ঘোষরা সেটা করে দেখিয়েছিলেন খালি পায়ে খেলে। ব্রিটিশদের হারিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, উল্টো দিকে বুট পরা গোরাদের দেখে বাঙালি ভয় পায় না। ওই একটা জয় ভারতীয় ফুটবলকে একটা সম্মানের জায়গায় বসিয়ে দিয়েছিল। কলকাতা, ভারত ছেড়ে দিলাম। ইংল্যান্ডেও শুনেছি মোহনবাগানের শিল্ড জয় নিয়ে তুমুল হইচই হয়েছিল।

দুই) ১৯৫৬, শিল্ড ফাইনাল: এটা আমার ফুটবলজীবনে ঘটতে দেখা। এরিয়ানকে চার গোলে হারিয়ে শিল্ড জিতেছিল মোহনবাগান। শুনলে কেউ কেউ ভাবতে পারেন, ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে জেতেনি। তখন কেন এটাকে ধরছি? আসলে কলকাতা ফুটবলে এরিয়ানও একটা সময় যথেষ্ট বড় নাম ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, তিরিশের দশকে মোহনবাগানকে ওরা ৪-১ উড়িয়ে দিয়েছিল। যে ব্যর্থতার কাঁটা মোহনবাগানকে দিনের পর দিন যন্ত্রণা দিয়েছে। সমর্থকরা এটাও ভাবতে শুরু করেছিলেন যে, আদৌ ওই চার গোলের শোধ কখনও নেওয়া যাবে কি না? তাই ছাপ্পান্নর শিল্ড ফাইনাল শুধু মোহনবাগানের কাছে ট্রফি জয় ছিল না, ছিল শাপমুক্তি। এরিয়ান জিতেছিল ৪-১। জবাবে মোহনবাগান জিতল ৪-০। ক্লিনশিট। মোহনবাগান কর্তা, সমর্থকরা যে ম্যাচের পর নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পেরেছিলেন।

তিন) ১৯৬৪, ডুরান্ড ফাইনাল: জয়টাকে তিন নম্বরে রাখার দু’টো কারণ আছে। ভারতীয় ফুটবলে আই লিগ বলে তখনও কোনও বস্তু ছিল না। ডুরান্ডকেই দেশের শ্রেষ্ঠ টুর্নামেন্ট হিসেবে ধরা হত। তার উপর আবার সামনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল। একে দেশের সেরা টুর্নামেন্ট, তার উপর এমন একটা টুর্নামেন্ট যেখানে কখনও ইস্টবেঙ্গলকে আমরা হারাতে পারিনি। দু’গোলে জেতা ম্যাচটা নিয়ে আলাদা আবেগ তাই ছিল। আরও একটা কারণে ম্যাচটা মনে রাখব। কারণ মোহনবাগান অধিনায়কের নাম তখন চুনী গোস্বামী!

চার) ১৯৬৭, লিগ: ইডেন গার্ডেন্সে প্রথম ফুটবল ম্যাচ আর সেটাও ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতিটা এমন, ওরা ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন। আর আমরা জিতলেও কোনও লাভ নেই। শুধু তখন চ্যাম্পিয়ন হবে মহমেডান। মনে আছে, ম্যাচটার আগে প্রচুর মহমেডান সমর্থক দেখা হলেই বলে যেতেন, এটা আপনারা জিতিয়ে দিন। আমাদের জন্য জিতিয়ে দিন। এক গোলে সে দিন হারিয়েছিলাম ইস্টবেঙ্গলকে। আর গোলটা আমারই ছিল। সন্ধেবেলায় বাড়ি ফিরে আবিষ্কার করেছিলাম কারা যেন বিরিয়ানির প্যাকেট পাঠিয়ে দিয়েছেন!

১৯১১-র শিল্ড জয়ীরা।

পাঁচ) রবিবার নয়, তেরো বছর আগের আই লিগ: ২০০১-’০২ মরসুমের জাতীয় লিগ জয়ের কথা বলছি। রবিবার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তেরো বছর আগেরটা আমার কাছে এগিয়ে থাকবে। চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচটা শুধু উত্তেজক ছিল না, সেই শেষ ম্যাচে মোহনবাগান জিতেছিল। এ বারের জয়কে আমি কোনও ভাবে খাটো করছি না। কিন্তু এটাও ঠিক যে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে আমরা জিতিনি। ড্র করেছি মাত্র।

পুনশ্চ: আমার বাছা সেরা পাঁচে সত্তরের দশকে মোহনবাগানের অত ট্রফি জয়ের একটাও নেই দেখে অনেকে অবাক হতে পারেন। সাতাত্তরে মোহনবাগান শিল্ড-রোভার্স-ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে ত্রিমুকুট পেলেও আমার মতে সেটার ভিত গড়াটা হয়েছিল তার আগের বছর লিগের বড় ম্যাচে আকবরের সেই সতেরো সেকেন্ডের গোলে। সত্তরের দশকের সেকেন্ড হাফে মোহনবাগান প্রচুর ট্রফি জিতেছে ঠিকই। কিন্তু তার চেয়েও আমি মনে করি আমার বাছা পাঁচটা সেরা জয়ের তাৎপর্য একটু অন্য ধরনের। আবেগটা একটু অন্য জায়গায়।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE