Advertisement
১৭ মে ২০২৪
সেঞ্চুরির হাতছানি বিরাটের সামনে, ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা

ফলো-অন না এখন অবলুপ্ত হয়ে যায়

এখনকার ক্রিকেটে টস খুব মুখ্য ভূমিকা নেয় ম্যাচের ফয়সালার ব্যাপারে। অলিখিত স্লোগানই যেন তৈরি হয়ে গিয়েছে— টস জেতো ম্যাচ জেতো। বিশেষ করে উপমহাদেশের স্পিন-বন্ধু উইকেটে টস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। টস জেতা মানে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার ঝক্কি এড়ানো যাবে।

দাপট: প্রথম ইনিংসে রান না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বড় রানের দিকে এগোচ্ছেন বিরাট কোহালি। ছবি: এএফপি।

দাপট: প্রথম ইনিংসে রান না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বড় রানের দিকে এগোচ্ছেন বিরাট কোহালি। ছবি: এএফপি।

সুমিত ঘোষ
গল শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৩
Share: Save:

স্টিভ ওয়-র অস্ট্রেলিয়া হতে চাইল না বিরাট কোহালির ভারত। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে প্রত্যাবর্তনের কোনও সুযোগ দেবে না বলে ফলো-অন না করিয়ে নিজেরা ব্যাট করতে এল।

ইডেনে স্টিভের অস্ট্রেলিয়া ফলো-অন করানোর পরে সারা দিন ধরে ব্যাট করেন ভি ভি এস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়। সিরিজেরই মুখ ঘুরিয়ে দেন তাঁরা। ১৬ বছর আগের সেই ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ হয়তো বাকি প্রজন্মের জন্য নতুন টেমপ্লেট তৈরি করে দিয়ে গিয়েছে। কেউ আর ঝুঁকি নিয়ে ফলো-অন করাতে চায় না এখন। নব্য যুগে নতুন করে তর্ক উঠে পড়েছে, ফলো-অন ব্যাপারটাই বিলুপ্ত হওয়ার পথে কি না?

এখনকার ক্রিকেটে টস খুব মুখ্য ভূমিকা নেয় ম্যাচের ফয়সালার ব্যাপারে। অলিখিত স্লোগানই যেন তৈরি হয়ে গিয়েছে— টস জেতো ম্যাচ জেতো। বিশেষ করে উপমহাদেশের স্পিন-বন্ধু উইকেটে টস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। টস জেতা মানে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার ঝক্কি এড়ানো যাবে। ফলো-অন করালে যেটা সম্ভব নয়। তখন নিজেরাই শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে টস জিতেও।

গলে শুক্রবার যেমন হল। ভারতের প্রথম ইনিংস স্কোর ৬০০ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা শেষ হয়ে গেল ২৯১-তে। তবু কোহালিরা নিজেরা ব্যাট করতে এলেন। তার কারণ, যদি শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে অভাবনীয় ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০০ রানেরও ‘লিড’ নিয়ে নেয়, তা হলে শেষ ইনিংসে গলের খারাপ উইকেটে খেলার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।

বিশেষ করে গলে শেষ ইনিংসে রান তাড়া করতে নেমে সর্বোচ্চ স্কোর যেখানে ৯৯। মোট ১৩বার ১০০ রানের বেশি চতুর্থ ইনিংস টার্গেট দেওয়া হয়েছে গলে। তার মধ্যে ১১বার রান তাড়া করতে নামা টিম হেরেছে। আরও আছে। গল মানে রঙ্গনা হেরাথের প্রিয় মৃগয়া ভূমি। এখানে ১৭তম টেস্ট খেলছেন তিনি। এর মধ্যে ৫বার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত এই মাঠে নিয়েছেন ৯৪টি টেস্ট উইকেট।

শাস্ত্রী-কোহালিদের সিদ্ধান্তের মাঝে একমাত্র বাধা হতে পারত আবহাওয়া। গত কাল রাতে সামান্য বৃষ্টির পরে একটা আশঙ্কা তৈরি হয় যে, ফলো-অন না করালে বৃষ্টি এসে খেলা ভেস্তে দিলে অবধারিত জেতার সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে কি না। এ দিন বৃষ্টিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা খেলা বন্ধও থাকল। কিন্তু ভারতীয় দল খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে, খুব বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। টেস্টের এখনও দু’দিন বাকি। যদি দেখা যায়, আবহাওয়া খুব খারাপ হচ্ছে, তক্ষুনি ডিক্লেয়ার করে দেওয়া যাবে। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস যখন শেষ হয়, ভারত এগিয়ে ছিল ৩০৯ রানে। দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে নেমে দিনের শেষে তারা তুলেছে ১৮৯-৩। অর্থাৎ, এখন এগিয়ে ৪৯৮ রানে। ম্যাচে শ্রীলঙ্কার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা কার্যত মুছে দিতে পেরেছেন তাঁরা।

দলের জন্য আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, কোহালি (১১৪ বলে ৭৬ নট আউট) এবং অভিনব মুকুন্দ (১১৬ বলে ৮১) রান করে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে রাখতে পারলেন। দু’জনের কেউ প্রথম ইনিংসে রান পাননি। মুকুন্দ পরের টেস্টে জায়গা পাবেন কি না জানা নেই। জ্বরে আক্রান্ত কে এল রাহুল সুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে বসতে হতে পারে। কিন্তু কোহালি যে রকম স্ট্রোকের ফুলঝুরি ফুটিয়ে রান করলেন, শ্রীলঙ্কার বোলাররা আরও আতঙ্কিত হয়ে কলম্বো যাবেন। প্রায় অন্ধকারের মধ্যেও ছ’টা পর্যন্ত খেলা চালিয়ে বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়া সময় পুষিয়ে তোলা হল। কোহালিরা অন্ধকারেও রান করে গেলেন। আর শ্রীলঙ্কার জন্য আরও অশনি সঙ্কেত— হেরাথ শেষের দিকে আঙুলের চোট নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

সচিনকে টপকালেন বিরাট

• ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিদেশে দ্রুততম এক হাজার রানে পৌঁছলেন বিরাট।

• ভেঙে দিলেন সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড। ১৭ টেস্টে হাজার রান করলেন বিরাট। সচিন করেছিলেন ১৯ টেস্টে।

• আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরাট থাকবেন চার নম্বরে। তাঁর আগে আছেন গ্যারি সোবার্স (১৩), অ্যালেস্টেয়ার কুক (১৪) এবং ববি সিম্পসন (১৬)।

• বিদেশে টেস্টে একমাত্র ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে ৬০-এর বেশি গড়ে পৌঁছনোর নজির গড়লেন বিরাট (অন্ততপক্ষে ১০০০ রানের হিসেবে)।

• বিদেশে টেস্টে সপ্তম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে ১০০০ বা তার বেশি রান করলেন কোহালি। তাঁর রান এখন ১০২৬। গড় ৬৪.১২। সৌরভ, ধোনি, আজহার, দ্রাবিড়, সচিন এবং সুনীল গাওস্করের পরে।

বৃহত্তর ক্যানভ্যাসে যদিও গলের স্কোরবোর্ড নয়, ফলো-অন নামক পুরাতন এক ক্রিকেট প্রথার অস্তিত্ব সঙ্কটই বেশি করে ধরা পড়বে। ক্রমশ ভুরি ভুরি টিম ফলো-অন না করানোর দিকে ঝুঁকছে। গত বছর পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবা-উল-হক পাঁচ বার ফলো-অন করানোর সুযোগ পেয়ে এক বারও করাননি। অস্ট্রেলিয়া গত এক দশকে ১৭বার মতো ফলো-অন করানোর সুযোগ পেয়েছে। করিয়েছে মাত্র ৫বার।

আশি বা নব্বই দশকেও যেটা ভাবাই যেত না। ইমরান খান যেমন বরাবর ফলো-অনের পক্ষে ছিলেন। একটা সময়ে টানা পাঁচ বারের মধ্যে পাঁচ বারই ফলো-অন করিয়েছিলেন ইমরান। তখন উল্টো ভাবনাটা ছিলই না। এটাও মনে রাখা জরুরি যে, ইমরানের সময়ে ক্রিকেটে ‘রেস্ট ডে’ নামক বস্তুও ছিল। বোলার, ফিল্ডাররা এক দিনের বিশ্রাম নিয়ে তরতাজা হয়ে ফিরতে পারতেন। এখন সে উপায় নেই। এ দিন গলেই বৃষ্টি হলেও সারা দিন খুবই গরম এবং আর্দ্রতা ছিল। এই পরিবেশে টানা দু’বার ফিল্ডিং, বোলিং করার ধকল নেওয়া যেত কি না, সেই প্রশ্ন নিশ্চয়ই ছিল।

ক্রিকেটে ‘রেস্ট ডে’-র অবলুপ্তি ঘটেছে অনেক আগেই। ভারত মহাসাগরে ঘেরা অপূর্ব গলে বসে মনে হচ্ছে, ফলো-অন প্রথাও জাদুঘরে ডাইনোসরদের পাশে স্থান করে নেওয়ার মুখে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket India Vs Sri Lanka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE