বাংলায় কোনও ‘রাহুল মেহরা’-র মতো আইনজীবীর এখনও উদয় হয়নি। যিনি ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবেন।
যদি সেরকম কেউ থাকতেন, তাহলে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) নথিভুক্ত ৪৩টি সংস্থার মধ্যে শতকরা ষাট ভাগেরই দশা হতো সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের মতো বা তার থেকেও খারাপ। সমস্যায় পড়ত বিওএ নিজেরাও। কারণ বাংলার অনেক ক্রীড়া সংস্থাতেই নিয়ম মেনে নির্বাচন হয় না। নিয়মের ফাঁক গলে পদের অদল-বদল করে কর্তারা থেকে যান বছরের পর বছর।
সাঁতার, সাইক্লিং, কুস্তি, বক্সিং, বেসবল, ভলিবলের মতো এমন অনেক সংস্থা আছে যাদের কর্তারা চেয়ারে বসে আছেন কেউ কুড়ি বছর তো কেউ তিরিশ বছর। কখনও সচিব, কখনও প্রেসিডেন্ট পদে থেকে যান ওঁরা। প্রধান খেলাগুলিতে কোনও অগ্রসরই নেই। বেসবল, সাইক্লিং, উশু, ফেন্সিং, তাইকোন্ডো, হ্যান্ডবল— এ সব খেলা কোথায় হয় কেউ জানে না। কু়ড়ি-তিরিশ জনকে নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা করে নিয়মরক্ষা করেন কর্তারা। ওই ছবিটাই তুলে নিয়ে জমা দেন নানা জায়গায়। সরকারি সাহায্যও পেয়ে যান প্রভাব খাটিয়ে। দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান কর্তারা। অথচ ওই খেলাগুলো থেকে এশিয়াড বা অলিম্পিক্সে কেউ সুযোগ তো পায়-ই না, এশীয় স্তরেও এই খেলার কোনও পদক আসে না। বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সত্যি, জাতীয় স্তরে অমনেক খেলায় শুধুই দর্শকের ভূমিকা থাকে বাংলার। ফুটবল কর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ ছিল, নিয়ম না মেনে নির্বাচন করার। রায়ে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা ‘স্পোর্টস কোড’ মেনে নির্বাচন হয়নি। ফে়ডারেশন সূত্রের খবর, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফর্মে সমর্থক ও প্রস্তাবক সংখ্যার গন্ডগোলের জন্যই বাতিল হয়েছে নির্বাচন।
মজার ব্যাপার হল, বাংলায় এ রকম কোনও ‘স্পোর্টস কোড’-ই মানা হয় না সংস্থাগুলোর নির্বাচন নিয়ে। সর্বভারতীয় ‘স্পোর্টস কোড’-এ প্রেসিডেন্ট তিন দফা, সচিব দু’দফা, কোষাধ্যক্ষ দু’দফা থাকতে পারেন পদে। তারপর যেতে হবে ‘কুলিং অফ’-এ। লোঢা কমিটির প্রস্তাবে তিন বছরের একটি মেয়াদের পরেই যেতে হবে বিরতিতে। সর্বোচ্চ ন’বছর থাকা যাবে পদাধিকারী হিসেবে। ‘স্পোর্টস কোড’ তুলনায় লোঢা কমিটির সুপারিশের চেয়ে অনেক হাল্কা।
অলিম্পিক্স বা এশিয়াডের সাঁতারে কেউ ভারতীয় দলে সুযোগ না পেলেও দশকের পর দশক সচিব বা প্রেসিডেন্ট পদে থেকে যান রামানুজ মুখোপাধ্যায়, সাইক্লিং-এর কোনও ভেলোড্রোম না থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর সচিব থেকে যান বাণী ঘোষ, এশিয়াডে কুস্তির কোনও পদক না আসা সত্ত্বেও পঁচিশ বছর ধরে নানা পদে থাকেন অসিত সাহা। বেসবলের জহর দাশ, হ্যান্ডবলের স্বপন রায়, ফেন্সিংয়ের জাভেদ চৌধুরী, উশু-র শম্ভু শেঠ বা বক্সিংয়ের অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়-রাও থেকে যান বছরের পর বছর।
সংস্থার জন্মলগ্ন থেকেই রয়ে গিয়েছেন অনেকে। আজ পর্যন্ত অবশ্য কোনও অ্যাকাডেমি তৈরি করেননি ওঁরা। খেলোয়াড় তুলে আনার কোনও সঠিক পরিকল্পনাও নেননি কেউ।
ক্রিকেট, ফুটবল, টেবল টেনিস জনপ্রিয় খেলা বলে নির্বাচন এলে কিছুটা হইচই হয়। মাঝেমধ্যে দুর্নীতি নিয়েও কেউ কেউ সরবও হন। কিন্তু বাকি অনেক খেলাতেই চলছে অনিয়ম। সরকার বদলালে ওই সব সংস্থার কর্তারা ভোল বদলান। রাজনৈতিক প্রভাবও চলতে থাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে। বাংলার খেলাও তাই পড়ে থাকে অন্ধকারে।