গাওস্করকে নিরাপদ নেতা বলে চিহ্নিত করলেন কারসন ঘাউড়ি।
সদানন্দ বিশ্বনাথ: দুর্দান্ত নেতা। সবার থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারতেন। প্রত্যেকের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স আদায়ের ক্ষমতা ছিল। তরুণদের দারুণ ভাবে গাইড করতেন। সিনিয়র ও জুনিয়রদের একই চোখে দেখতেন। ভেদাভেদ করতেন না। জানতেন কী ভাবে সম্মান করতে হয়, কী ভাবেই বা সম্মান আদায় করতে হয়। দুর্দান্ত ব্যাটিং দক্ষতার জন্য দলের সবার শ্রদ্ধা পেতেন। আমি তো দেখেছি যে, অস্ট্রেলিয়ায় উনি জেতার জন্য ঝুঁকিও নিয়েছেন। দারুণ সব ফিল্ড সাজাতেন। সব সময় স্পিনারদের সঙ্গে কথা বলতেন। তাঁদের মতো করে ফিল্ড সাজাতেন। কখন ফিল্ড ছড়িয়ে দিতে হবে, কখন কাছে আনতে হবে, তা দারুণ ভাবে বুঝতেন। বোলারের আইডিয়াকেও কাজে লাগাতেন। বোলার যে ফিল্ড চাইত, সেটাই দিতেন। বোলারের ভাবনা অনেকেই জানতে চায় না। গাওস্কর তা করতেন না। খুব প্রো-অ্যাকটিভ, উদ্ভাবনী ক্ষমতায় ভরপুর ছিলেন। যাকে আর্ট অফ ক্যাপ্টেন্সি বলাই চলে।
মদন লাল: খুবই ভাল ক্যাপ্টেন ছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে বেশ ভাল। সব সময় বোলারদের পাশে থাকতেন। সাহায্য করতেন ইনপুট দেওয়ার মাধ্যমে। আমি তো অনেক কিছু শিখেছি। এই যে বলা হয় ডিফেন্সিভ ক্যাপ্টেন, আমি এটা একেবারেই মানতে পারি না। বলুন তো, কোন ক্যাপ্টেন হারতে চায়। যখন জয়ের কোনও নিশ্চয়তা নেই, তখন অধিনায়ক তো স্বাভাবিক ভাবেই চেষ্টা করবে যাতে হারতে না হয়। তার মানে গাওস্কর রক্ষণাত্মক ক্যাপ্টেন ছিলেন, এমনটা নয়। যখন জেতার সম্ভাবনা থাকবে, তখনই তো আপনি জয়ের জন্য ঝাঁপাবেন। তাই না? জোর-জবরদস্তি করলে তো গণ্ডগোল হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: ‘মুম্বইয়ে যখন গলি ক্রিকেট খেলত, তখনও কিছুতেই আউট হতে চাইত না’
ডিফেন্সিভ ক্যাপ্টেন?
কারসন ঘাউড়ি: প্রত্যেক পরিস্থিতিতে কাজের ধরন পাল্টে যায়। আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে সময়ের দাবি বদলে যায়। হাতে যদি ৪৫০ রান থাকে, তখন অনেক ঝুঁকি নেওয়া যায়। কিন্তু হাতে যদি ২৫০ রান থাকে, তখন অন্য ভাবে স্ট্র্যাটেজি করতে হয়। কারণ, তখন হাতে পুঁজি কম। ফলে বেহিসেবি ঝুঁকি নেওয়া যায় না। তখন সাবধানী হতে হয়।
এই পরিস্থিতিতেও মনসুর আলি খান পতৌদি কিন্তু ঝুঁকি নিতেন। হাতে আড়াইশো থাকলেও জেতার জন্য ঝাঁপাতেন। অবশ্য টাইগারের হাতে সেই মানের বোলাররাও ছিল। প্রসন্ন, বিষেণ বেদি, চন্দ্রশেখর, ভেঙ্কটরাঘবনের উপর মারাত্মক আস্থাও ছিল পটৌডির। একনাথ সোলকার, আবিদ আলির মতো ফিল্ডারদের উপর ছিল নির্ভরতাও। তাই এই রানটাও পটৌডির কাছে ছিল জেতার মতো। উনি সব সময় ভাবতেন যে ২০০ বা ২২০ রানের মধ্যে বিপক্ষকে আউট করা যাবে। সেই বিশ্বাস ছিল বোলারদের মধ্যে। আসলে বিভিন্ন ক্যাপ্টেনের মধ্যে এই বিষয়টায় তারতম্য ঘটে।
সদানন্দ বিশ্বনাথ: দেখুন, গাওস্করের সময়ে দলের ব্যাটিং গভীরতা তেমন ছিল না। মিডল অর্ডার ব্যাটিং ছিল নড়বড়ে। জমাট ভাব ছিল না। হ্যাঁ, বিশ্বনাথ ও অমরনাথ যদিও ছিলেন। কিন্তু, তখনকার দৃষ্টিকোণে ড্র করাও ছিল দারুণ রেজাল্ট। সানি-ভাই হারতে চাইতেন না। হারতে ঘৃণা করতেন। আমি অস্ট্রেলিয়ায় বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপে খেলেছি গাওস্করের নেতৃত্বে। দেখেছি, কী ভাবে উনি দল চালাতেন। তাই ডিফেন্সিভ ক্যাপ্টেনের ছাপটা একেবারেই মানছি না।
অধিনায়ক গাওস্করের মস্ত বড় গুণ ছিল ম্যান-ম্যানেজমেন্ট। আমার মনে আছে, অস্ট্রেলিয়ায় আমরা আন্ডারগড হিসেবে গিয়েছিলাম। কেউ পাত্তা দেয়নি। তার আগে আমরা ডেভিভ গাওয়ারের ইংল্যান্ডের কাছে হেরেও গিয়েছিলাম। গাওস্কর কিন্তু আমাদের উদ্দীপ্ত করেছিলেন দারুণ ভাবে। আমাদের দলে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার দারুণ মিশেল ছিল। গাওস্করের নেতৃত্বে আমরা একটা পরিবার হয়ে উঠেছিলাম। মনে আছে তার পর শারজায় একটা কনসার্ট দেখতে গিয়েছিলাম সুনীলের আমন্ত্রণে। সঙ্গে ছিল শিবরামকৃষ্ণাণ। এটাই ম্যান ম্যানেজমেন্ট।
মদন লাল: তখন সময় আলাদা ছিল। এমন নয় যে গাওস্করের হাতে খারাপ দল ছিল। তা নয়। ভাল ক্রিকেটার গাওস্করের হাতেও ছিল। আর গাওস্করও তো টেস্ট জিতেছে। বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ জিতেছে। তার পর পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। অনেক পরিবর্তন এসেছে ক্রিকেটেও। তাই এখনকারের দৃষ্টিকোণে গাওস্করের নেতৃত্বকে বিচার করলে ভুল হবে।