সরলেন কলমডী। (ডান দিকে) চৌটালা কী করবেন?
শো-কজ, সমালোচনার সাইক্লোন এবং প্রবল চাপানউতোরে সুরেশ কলমডী নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক আরও জমজমাট।
ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার আজীবন সাম্মানিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যাবর্তনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সমালোচনার প্রবল ঝড়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হলেন কলমডী। কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত জানিয়ে দিলেন, কলঙ্ক থেকে নিজের নাম মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের পদে তিনি আসতে চান না। ‘‘আইওএ-কে ধন্যবাদ আমায় আজীবন প্রেসিডেন্টের সম্মান দেওয়ার জন্য। তবে এই সম্মান গ্রহণ করার জন্য এটা সঠিক সময় নয়। আমি নিশ্চিত, নির্দোষ হিসেবে প্রমাণিত হব। ততদিন এই ধরনের সম্মান থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছি,’’ আইওএ প্রেসিডেন্টকে পাঠানো চিঠিতে এ দিন জানিয়েছেন কলমডী।
অবশ্য কলমডী সরলেও তাতে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের রোষ কমার কোনও লক্ষণ নেই। মঙ্গলবার আইওএ যে ভাবে বার্ষিক সাধারণ সভায় কলমডী ও বিতর্কিত আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অভয়সিংহ চৌটালাকে আজীবন প্রেসিডেন্টের পদে নিয়ে আসে, তার বিরুদ্ধে শো কজ নোটিস দিয়েছে ক্রীড়ামন্ত্রক। বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত না বদলালে ক্রীড়ামন্ত্রক আইওএ-র স্বীকৃতি বাতিল করে দেবে।
ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গোয়েল সাফ বলে দিয়েছেন, ‘‘আইওএ গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করেছে। ক্রীড়ামন্ত্রক এটা কিছুতেই মানবে না।’’ মন্ত্রীর কড়া বার্তা, ‘‘আইওএ-র এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত দুই কর্তা যতক্ষণ না ইস্তফা দিচ্ছেন বা বরখাস্ত হচ্ছেন, আইওএ-র সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রক কোনও আলোচনাতেই যাবে না। সবার আগে আমরা খেলাধুলোয় স্বচ্ছতা চাই।’’
এর কিছু পরেই কলমডী সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। তবে ক্রীড়ামন্ত্রী যতই কড়া অবস্থান নিন, তাতে দমবার পাত্র নন নাটকের আর এক চরিত্র অভয়সিংহ চৌটালা। কলমডীর মতো তিনিও সরে দাঁড়াবেন কি না, রাত পর্যন্ত তা পরিষ্কার নয়। তবে তাঁর উপরও চাপ বাড়ছে।
এ দিন নিজেকে বাঁচাতে চৌটালা পাল্টা ক্রীড়ামন্ত্রীকে তোপ দেগে বলেন, ‘‘মিস্টার গোয়েল তো ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে নিজের দায়িত্বটাই পালন করতে ব্যর্থ। যদি করতে পারতেন তা হলে এ বার অলিম্পিক্সে আমাদের পদক সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারত। কিছু না জেনেই একটা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার থেকে আগে নিজের কাজে মন দেওয়া উচিত ক্রীড়ামন্ত্রীর।’’ সঙ্গে চৌটালা আরও যোগ করেছেন, ‘‘ক্রীড়ামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। উনি বলছেন আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আর দুর্নীতির মামলা রয়েছে। মামলাটা ফৌজদারি নয়, রাজনৈতিক।’’ চৌটালা মনে করেন, তিনি দেশের খেলাধুলোর জন্য যথেষ্ট করেছেন, তাই আজীবন প্রেসিডেন্টের পদ তাঁর প্রাপ্য।
তাতে সমালোচনার আগুন ছড়িয়েছে আরও। প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র বত্রা সবাই সরব আইওএ-র বিরুদ্ধে। বত্রা, যিনি আবার আইওএ-র অ্যাসোসিয়েট ভাইস-প্রেসিডেন্টও, জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রস্তাব ফিরিয়ে না নিলে তিনি আইওএ থেকে পদত্যাগ করবেন।
কলমডীর উপর চাপ আরও বেড়ে গিয়েছিল প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেনের সমালোচনায়। তিনি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলে দেন, ‘‘যা হয়েছে সেটা এ দেশের খেলাধুলো আর ভারতের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়। আমি ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করব এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’’
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুকুল মুদগলও বলেছেন এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। ২০১৩ আইপিএলে দুর্নীতির তদন্তে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটির প্রধান মুদগল বলেছেন, ‘‘কলমডী আর চৌটালা দোষী কি না সেটা বিচারে ঠিক হবে। তবে এই পরিস্থিতিটা এড়ানো যেত। আইওএ-র এটা করা উচিত হয়নি। একটা ক্রীড়াসংস্থা স্বাধীন হলেও, সরকারের কাছ সাহায্য দরকার হয়ই। সরকার আর্থিক সাহায্য বন্ধ করতেই পারে। তাতে ক্ষতি খেলাধুলোরই।’’
ঘটনা হল চৌটালা যাই বলুন না কেন, তাঁর আজীবন প্রেসিডেন্টের পদ পাওয়া নিয়েই আইওএ-র অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কেন না যে সময় চৌটালা আইওএ-র প্রেসিডেন্ট ছিলেন (ডিসেম্বর ২০১২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৪), সে সময় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি তাঁদের স্বীকৃতিই দেয়নি। এক আইওএ কর্তা বলেছেন, ‘‘সবাই ভুলে গিয়েছে আইওএ-কে সাসপেন্ড করার পরের দিনই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চৌটালা আর সচিব ললিত ভানোটের নির্বাচনকে আইওসি স্বীকৃতি দিচ্ছে না জানিয়ে দিয়েছিল। আইওএ-র গঠনতন্ত্রেই আছে, যে প্রেসিডেন্ট পদে ছিল না সে আজীবন প্রেসিডেন্ট হতে পারবে না। তা হলে চৌটালা কী করে আজীবন প্রেসিডেন্ট হন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy