Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ব্যাটিং অস্ত্রাগারের বারুদ বুঝিয়ে দিল সূর্য, বলছে কেকেআর

টানা তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ জেতা নিয়ে বেঙ্কি মাইসোরকে কেউ জিজ্ঞেস করলে, কেকেআর সিইও এখন হাসতে-হাসতে একটা উত্তর দিচ্ছেন। বলছেন যে, টানা তিনটে জিতেছি, খুব ভাল লাগছে।

ম্যাচ জিতিয়েও মন খারাপ নায়কের।

ম্যাচ জিতিয়েও মন খারাপ নায়কের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৫:১২
Share: Save:

টানা তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ জেতা নিয়ে বেঙ্কি মাইসোরকে কেউ জিজ্ঞেস করলে, কেকেআর সিইও এখন হাসতে-হাসতে একটা উত্তর দিচ্ছেন। বলছেন যে, টানা তিনটে জিতেছি, খুব ভাল লাগছে। কিন্তু এটাও মনে রাখবেন যে, আমরা কিন্তু পরপর চোদ্দোটা ম্যাচও জিতেছি!

সুনীল নারিন নাকি মনে করেন কেকেআর ব্যাটিং লাইন আপটা গৌতম গম্ভীরে শুরু হয়ে আন্দ্রে রাসেলে শেষ হয় না। বরং ওটা একেবারে সুনীল নারিন পর্যন্ত চলে! মানে, এক থেকে এগারো। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারেও নাকি এটা বলেছেন নারিন। এবং শুনেটুনে নাইট কর্তারা চমৎকৃত। এটাই টিমের এভারেস্ট-সম আত্মবিশ্বাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ। যেখানে টিমের বিস্ময় বোলার নিজেকে ম্যাচ জেতানো ব্যাটসম্যানও ভাবেন!

সূর্যকুমার যাদবের নাকি একটু মন খারাপ। চিকেন পক্সে আক্রান্ত মণীশ পাণ্ডের জায়গায় নেমে টিমকে চাপের ম্যাচ জিতিয়েছেন, তবু। কেন? কারণ আর কিছুই না। শোনা গেল, সূর্য নাকি প্রবল ভাবে চেয়েছিলেন ম্যাচটা শেষ করে আসতে। সেটা হয়নি, তাই।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস বধের পরের দিন। পুণে থেকে কিংগ খানের শহর মুম্বইয়ে ঢুকে পড়ার দিন। যেখানে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে আন্দ্রে রাসেলের হুঙ্কার থাকল। প্রত্যাবর্তনের নারিন নিয়ে ব্র্যাড হগের তুমুল প্রশংসা থাকল। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বোধহয় থাকল, সূর্যের তেজে পুণের পুড়ে যাওয়ার সুখী ছবি।

কেকেআর ম্যানেজমেন্ট এক কথায় মুগ্ধ। মুম্বই ব্যাটসম্যানের পরিণতিবোধে, ভয়ডরহীন মনোভাবে। মুম্বই থেকে ফোনে এ দিন বেঙ্কি মাইসোর বলছিলেন যে, রবিবার রাতে পুণের মাঠে সূর্যের পুণে বধের ইনিংস তাঁর দেখা অন্যতম সেরা। ‘‘দ্বিতীয় বল থেকে ওকে খেলতে হয়েছে। উইকেটও শুনছিলাম ব্যাটিংয়ের জন্য দুর্দান্ত কিছু ছিল না। সেখানে কী ইনিংসটাই না খেলল!’’ বলে কেকেআর সিইও জুড়ে দেন, ‘‘সবচেয়ে টেনেছে ওর টেম্পারামেন্ট। এই পর্যায়ে ক্ষমতা তো লাগবেই। সেটা না থাকলে কেউ টিকতে পারবে না। কিন্তু ওর টেম্পারামেন্ট দেখে অবাক হয়ে গেলাম। চাপের মধ্যেও সব সময় আস্কিং রেটের চেয়ে বেশি রেখে গেল।’’

সূর্যের প্রশংসায় নেমে কেকেআর বলে দিচ্ছে, তিনি স্বার্থহীন ক্রিকেটার। এক বল খেলা হোক বা একশো বল— টিম যখনই যে কাজের জন্য মুম্বই তরুণকে পাঠিয়েছে, টিমের প্রয়োজনে সে ঝাঁপিয়েছে সব সময়। বলা হচ্ছে, মণীশ পাণ্ডে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তিন নম্বরে যাওয়ার জন্য সূর্যই ছিলেন সেরা বাজি। ‘‘ক্যাপ্টেন আমাকে সেটা বলেও দেয়। আমার কাছে এটা একটা বড় সুযোগ ছিল। গত দু’দিন ধরে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। জানতাম, এই উইকেটে রান করা খুব সহজ হবে না। তাই উইকেটের সোজাসুজি সব স্ট্রোক খেলেছি। রঞ্জিতে এ রকম অনেক খেলেছি। সেটাই কাজে লাগালাম,’’ টিমকে জেতানোর পর বলে দিয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ সূর্য।

টিমও একটা কথা বলে দিচ্ছে। রবিবার সূর্যের তেজ দেখার পর কেকেআর বলে দিচ্ছে, পুণে ম্যাচ বুঝিয়ে গেল নাইটদের ব্যাটিং-অস্ত্রাগার কোথায় দাঁড়িয়ে। বা কতটা ফ্লেক্সিবল তা হতে পারে। কেউ কেউ বললেন, টিমের এমন স্বপ্নের পারফরম্যান্সের নেপথ্যে জাক কালিস-সাইমন কাটিচ-ওয়াসিম আক্রমের মতো ক্রিকেট-চাণক্যদের অবদান আছে যেমন, তেমনই কাজ করছে টিমের পরিবেশ। যা রেজাল্ট নির্বিশেষে রিল্যাক্সড রেখে দিচ্ছে টিমকে। নিরাপত্তা দিচ্ছে।

বলা হল, আজ নয়। সূর্যর উপর অনেক আগে থেকে আস্থা রেখেছিল টিম। রেখেছিল বলেই এক বছর আগে তাঁকে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে। শোনা গেল, রবিবারও ব্যাট করতে যাওয়ার সময় কেকেআর ডাগআউট থেকে ক্রমাগত মুম্বইকরকে বলা হয়েছে, তুমি পারবে। তোমার উপর আমরা বিশ্বাস রাখি। যাও, গিয়ে নিজের খেলাটা খেলে এসো। এ-ও শোনা গেল, স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটের সময়ও নাকি সূর্যকে ফের মানসিক টোটকা দিয়ে এসেছিলেন খোদ আক্রম-কাটিচ।

সূর্য যে ভরসার মর্যাদা রেখেছেন পুরোপুরি। ‘‘চাপ তো ছিলই। কিন্তু একই সঙ্গে দায়িত্ববোধটাও আমার মধ্যে কাজ করেছে যে ওই চাপের মধ্যে থেকে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে,’’ বলে দিয়েছেন পুণে ম্যাচের নায়ক। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘প্রথম বাউন্ডারিটা মারার পরই টের পাই, চাপটা চলে যাচ্ছে। আর উল্টো দিকে ক্যাপ্টেন ছিল বলে অতটা চাপ বুঝতেও পারিনি।’’

সূর্য বললেন, ইউসুফ পাঠানের সঙ্গে বহু দিন ধরেই তিনি কথাবার্তা বলতেন। কী ভাবে ম্যাচ শেষ করা যায় তা নিয়ে। সূর্য বললেন, লোয়ার অর্ডার আজ পর্যন্ত বহু ম্যাচ জিতিয়েছে কেকেআরকে। তাই উমেশ যাদব যখন অ্যালবি মর্কেলের বলটা খেলতে তৈরি হচ্ছিলেন তখন জানতেন যে, যদি বলটা উমেশের রেঞ্জে পড়ে তা হলে এক বা দুই নয়, সোজা মাঠের বাইরে যাবে। প্র্যাকটিস ম্যাচে যা প্রায়ই করে থাকেন উমেশ!

আপাতত দিনদুয়েকের বিশ্রাম। তার পর পরপর তিনটে ম্যাচ। তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচ খেলে ৩ মে শেষ পর্যন্ত নিজেদের শহরে ঢুকে পড়া। আসন্ন প্রতিপক্ষদের নাইটরা আগাম বার্তা দিয়ে রাখছে। হগ যেমন এ দিন মুম্বইয়ে নারিনের বিষক্রিয়া নিয়ে শুনিয়ে গেলেন, ‘‘অ্যাকশন শুধরে ফেরা নারিনকে বোঝা এখন কঠিন নয়, খুব কঠিন।’’

কিন্তু কেকেআরের সার্বিক থিম সেটা নয়। সেখানে টানা জয়ের উচ্ছ্বাস আছে ঠিকই, কিন্তু তার মধ্যে সতর্ক মনোভাবও মিশে আছে। বলা হল, গত বারও এ রকম প্রথম দিকে লিগ টেবলে কখনও এক, কখনও দুই ছিল কেকেআর। কিন্তু পরের অর্ধে বৃষ্টি-সহ নানা উদ্ভট ঘটনায় প্লে অফ যাওয়া হয়নি। এ বার এখন পর্যন্ত ঠিক আছে, তবে পরেও সমান ঠিক রাখতে হবে।

কিন্তু সে সব শুনছে কে? পাঁচ ম্যাচে চার জয়— সোনালি-বেগুনি সমর্থককুল তো পছন্দের ট্যাগলাইন পেয়ে গিয়েছে। টুইটার থেকে ফেসবুক, চলছে যা সর্বত্র।

কেকেআরকে আর থামাবে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IPL 2016 Surya Kumar Yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE