Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সুইপার কিপার এ বার যেন তৃতীয় সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার

আমাদের জার্মান দলে ইলেভেন্থ ম্যান-কে কেমন দেখলে? কথাটা শুনে চমকে উঠেছিলাম! ঠিক দু’বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ঘটনা। তারিখটাও মনে আছে। ১৬ জুন, ২০১৪। সালভাদরের এরিনা ফন্তে নোভাতে তার কিছু আগেই জার্মানি চার গোলে হারিয়েছে রোনাল্ডোর পর্তুগালকে। খেলা দেখে স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম সামনের রেস্তোরাঁয়।

জার্মানির ইলেভেন্থ ম্যান। ন্যয়ার যখন সুইপার থেকে গোলকিপার।

জার্মানির ইলেভেন্থ ম্যান। ন্যয়ার যখন সুইপার থেকে গোলকিপার।

দীপেন্দু বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৯:৫০
Share: Save:

আমাদের জার্মান দলে ইলেভেন্থ ম্যান-কে কেমন দেখলে?

কথাটা শুনে চমকে উঠেছিলাম!

ঠিক দু’বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ঘটনা। তারিখটাও মনে আছে। ১৬ জুন, ২০১৪। সালভাদরের এরিনা ফন্তে নোভাতে তার কিছু আগেই জার্মানি চার গোলে হারিয়েছে রোনাল্ডোর পর্তুগালকে।

খেলা দেখে স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম সামনের রেস্তোরাঁয়। সেখানেই আলাপ এক জার্মান দম্পতির সঙ্গে। ভারত থেকে এত দূরে জার্মানির ম্যাচ দেখতে এসেছি শুনে তাঁরা তো বেজায় খুশি। তার উপর আমি ততক্ষণে বলে ফেলেছি, আমার টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির জীবন থেকেই জার্মানি দলের উপর একটা ‘সফ্ট কর্নার’ আছে। জার্মানিতেও গিয়েছি। বেয়ার লেভারকুসেনের খেলা দেখেছি। শুনেটুনে ওঁরা আমাকে জার্মানির জার্সি উপহার দিয়ে এই লেখার শুরুর ওই কথাটা বলেছিলেন।

জার্মান ডিফেন্সে কে সেই ‘ইলেভেন্থ ম্যান’? আমার ওই দুই জার্মান বন্ধু সে দিনই প্রথম চিনিয়েছিলেন ওদের জাতীয় দলের গোলকিপার ম্যানুয়েল ন্যয়ার কে এবং কী? তার সুইপার-কিপার ভূমিকার জন্য কেন তাকে তখনকার বায়ার্ন কোচ গুয়ার্দিওলা ডিফেন্সে ‘ইলেভেন্থ ম্যান’ বলে ডাকেন। তখনও বিশ্বকাপে ন্যয়ার স্বমূর্তি ধারণ করেনি। তার পর টুর্নামেন্ট যত গড়িয়েছে ততই বুঝতে পেরেছি ওই ডাকের সত্যতা।

রবিবার রাতে ইউরোতেও সেই ‘ইলেভেন্থ ম্যান’-কে দেখতে টিভি খুলেছিলাম। দেখলাম ব্রাজিল বিশ্বকাপে যেখানে শেষ করেছিল ঠিক যেন সেখান থেকেই শুরু করল ইউরো ২০১৬-র ন্যয়ার। শুধু ও-ই নয়। রবিবারের ম্যাচে আমার নজর কেড়েছে আরও এক ফুটবলার। ন্যয়ারের মতো সে-ও গোলকিপার। প্রতিপক্ষ ইউক্রেনের আন্দ্রে পাতভ। জার্মানিতে টনি ক্রুজ, মারিও গোটজে, পরে নেমেই দলকে ২-০ এগিয়ে দেওয়া সোয়াইনস্টাইগার-ও ছিল। সেই অর্থে তারকাদের ছড়াছড়ি। তাও বলব, জার্মানি-ইউক্রেন ম্যাচের হেডিং হতে পারত গোলকিপার বনাম গোলকিপার।

মনে রাখবেন, একজন কিপারের কাছে দু’বছর সময়টা অনেক। তার মধ্যে অনেকের ফর্ম হারিয়ে যায়, রিফ্লেক্স কমে যায়। কিন্তু ইউরোয় প্রথম ম্যাচেই ন্যয়ার দেখিয়ে দিল বিশ্বকাপের ফর্মেই আছে। ওর দাপট দেখে মনে হল, এর আগের ম্যাচটাই ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল!

বিশ্বকাপ প্রি-কোয়ার্টারে জার্মানি-আলজেরিয়া ম্যাচে দেখেছিলাম ন্যয়ার হেড দিয়ে বিপক্ষ ফরোয়ার্ডের সামনে থেকে বল ক্লিয়ার করছে। ইউরোয় ইউক্রেন ম্যাচেও দেখলাম শুরুতে তারা যখন আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিচ্ছে তখন বুক চিতিয়ে গোল আটকাল। আর মুস্তাফি যখন জার্মানিকে ১-০ এগিয়ে দিল, সেই মুহূর্তে ন্যয়ার দাঁড়িয়ে প্রায় সেন্টারলাইনের কাছে। এটাই ওর বিশেষত্ব। এতে নিজেদের অ্যাটাকিং থার্ড-মিডল থার্ড থেকে ডিফেন্সিভ থার্ডের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকে। ইউক্রেন কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর খেলছিল। জার্মানির প্রেসিং ফুটবলের পাশাপাশি ন্যয়ারের এই ট্যাকটিক্সের সামনে বিপক্ষ কাউন্টার অ্যাটাক করার ফাঁকা জায়গা পাচ্ছিল না। আরও বড় ব্যাপার, জার্মানদের এই স্ট্র্যাটেজিকে পিছন থেকে ‘লিড’ করে যাচ্ছিল ওদের সেই ‘ইলেভেন্থ ম্যান’।

এক এক সময় তো ন্যয়ারকে দেখে মনে হচ্ছিল জার্মান ডিফেন্সের থার্ড সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার! ম্যাচের শেষের দিকে ওর দিকে আসা একটা বল ঠিক মতো বুঝতে না পারা ছাড়া আর কোনও ভুল নেই নব্বই মিনিটে। পাঁচটা চমৎকার সেভও রয়েছে সঙ্গে। ম্যাচের তফাত তৈরি হয়েছে ওখানে।

উল্টো প্রান্তের গোলের নীচে পাতভের কথাও বলতে হবে। দু’টো গোল হওয়া ছাড়া গোটা ম্যাচে ওকে সেই অর্থে কোনও বড় ভুল করতে দেখিনি। উল্টে মুলার, খেদিরা, ড্রাক্সলারের শট বাঁচিয়ে ইউক্রেনের হারের ব্যবধান বাড়তে দেয়নি পাতভ।

তবে ইউরোর প্রথম ম্যাচেই যে জার্মানিকে দেখলাম তার পরে বলতে পারি, সোয়াইস্টাইগারের পর হুমেলস-ও চোট সারিয়ে ফিরলে এই টিমকে রোখা খুব কঠিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE