Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফাইনালে আজ তারকা নয়, টিমগেমের লড়াই

যদি চ্যাম্পিয়ন হন তা হলে কি ট্রফিটা ‘বন্ধু’কেই উৎসর্গ করবেন। ‘‘কোন বন্ধু?’’ কোচিতে ফোনের ও প্রান্তে থাকা জোসে মলিনা পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন।

কার হাতে উঠবে ট্রফি? ছবি: আইএসএল।

কার হাতে উঠবে ট্রফি? ছবি: আইএসএল।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

যদি চ্যাম্পিয়ন হন তা হলে কি ট্রফিটা ‘বন্ধু’কেই উৎসর্গ করবেন।

‘‘কোন বন্ধু?’’ কোচিতে ফোনের ও প্রান্তে থাকা জোসে মলিনা পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন।

মানে আন্তোনিও হাবাস।

‘‘হঠাৎ আন্তোনিও কেন?’’

ব্যাখ্যা দিতে হল, কেরল ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলে তো হাবাসের প্রথম আইএসএল জেতার স্মৃতিই ফিরবে কলকাতায়। এ বার গম্ভীর হিউম-পস্টিগাদের কোচের গলা। ‘‘আগে তো চ্যাম্পিয়ন হই। তার পর ও সব ঠিক করা যাবে। এখন অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময় নেই আমার। মাথায় রাখছি শুধু জেতার কথা।’’

মলিনাকে ফোনে ধরার একটু আগেই সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন এটিকে কোচ। যে টিমটা এ বার আইএসএলে ১৬ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দু’টো হেরেছে তার কোচ মলিনাকে ফাইনালের আগের দিন কোচিতে নাকি মাত্র গোটা তিনেক প্রশ্ন করা হয়েছে। কেরলের সংবাদমাধ্যম পড়েছিল স্থানীয় ফাইনালিস্ট দলের কোচ স্টিভ কপেলকে নিয়েই। সেই ‘অবজ্ঞা’র কারণে কি না বোঝা গেল না, কলকাতার স্প্যানিশ কোচের গলায় ঝরে পড়ছে উত্তেজনা। ‘‘সব ম্যাচের আগেই প্র্যাকটিসে আমার ছেলেদের দিয়ে পেনাল্টি কিক মারাই। আজও সেটা করেছি। তবে ফাইনালটা টাইব্রেকারে যাক চাই না। নব্বই মিনিটেই ট্রফি জিততে চাই।’’

আইএসএল ফাইনাল

এটিকে বনাম কেরল ব্লাস্টার্স কোচি, সন্ধে ৭-০০

স্টার স্পোর্টস ওয়ান

আইএসএল থ্রি-র রবিবাসরীয় ফাইনালে গ্যালারিতে থাকবেন সচিন তেন্ডুলকর এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজেদের দলের জার্সি গায়ে। থাকবেন তামিল ছবির সুপারস্টার নাগার্জুন-ও। সঙ্গে থাকবে ষাট হাজারের কেরল-সমর্থক গ্যালারি। সর্ষে ফুলের রঙের জার্সি গায়ে। মলিনার সঙ্গে কথা বলে মনে হল, এ সব ধর্তব্যের মধ্যেই আনতে চান না। ‘‘গ্যালারি তো খেলবে না? এটা অন্য কার কাছে কী জানি না, আমার কাছে কোনও স্পেশ্যাল ম্যাচ নয়। ক্যানসার সারিয়ে মাঠে ফেরার পর সব ম্যাচ আমি উপভোগ করি। মনের আনন্দে থাকি। জীবনে বহু ফাইনাল খেলেছি। স্পেনের বাইরে হংকংয়ে কিটচি টিমকে কোচিং করিয়ে ওদের দেশের দু’টো বড় ট্রফি জিতিয়েছিলাম। কাল ভারতের মাঠে আর একটা টিমকে চ্যাম্পিয়ন করতে হবে। এটাই মাথায় থাকবে। আবার কোচিতে গ্রুপ লিগে জিতেছিলাম বলে ফাইনালেও জিতব, এটা ভাবাও ভুল। তবে আমরা আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলব। কারণ ট্রফিটা আমাদের চাই।’’

মলিনাকে প্রশ্ন করা হল, কেরল মাঝমাঠের তারকা মেহতাব হোসেন বলেছেন, আপনার স্ট্র্যাটেজি নাকি একই! হাবাসের মতো বৈচিত্র নেই। শুনে মলিনা বেশ মজা পেলেন মনে হল। ‘‘বলেছে? ভাল, বেশ ভাল। আমার স্ট্র্যাটেজি বদলায়। কাল ওরা দেখবে কী বদলাল!’’

শনিবার সকালে হায়দরাবাদ থেকে কোচি এসে পৌঁছন হিউম-দ্যুতি-দেবজিতরা। প্রতিপক্ষের হোমে সন্ধেয় স্টেডিয়ামে অনুশীলনের জন্য ঢোকা এবং বেরোনোর সময়েও দর্শক-স্লেজিংয়ের সামনে পড়তে হয়েছে এটিকে-কে। তিন দিন আগেই শেষ ফাইনালের সব টিকিট। কেরল-সমর্থকরা যে ভাবে ফাইনাল নিয়ে তেতে আছেন তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সংগঠকরা। মুম্বইয়ে আইএসএল হেড কোয়ার্টারে ফোন করে জানা যাচ্ছে, মাঠে নামার আগে দু’দলেরই ফুটবলার ও কোচেদের জানিয়ে দেওয়া হবে, ম্যাচে গণ্ডগোল হলে দোষীদের পাঁচ থেকে ছয় ম্যাচ সাসপেন্ড হতে হবে। এবং শাস্তিপ্রাপ্তদের পরের মরসুমে দেশের কোনও ক্লাবে খেলতে দেওয়া হবে না। হয়তো সে জন্য মলিনা বললেন, ‘‘ফাইনালে নামার আগে সবার মধ্যেই উত্তেজনা থাকে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছি। সেটাই মাথায় রাখতে বলছি সবাইকে।’’

কলকাতার মতো কেরল টিমও কোনও একজন তারকা ফুটবলারের উপর নির্ভরশীল নয়। মলিনার টিম যেমন মার্কি পস্টিগাকে ছাড়াও ম্যাচ জিতেছে, তেমনই আবার কেরল কোচ স্টিভ কপেল হেরেছেন তাঁর মার্কি অ্যারন হিউজেসকে দলে রেখেও। মলিনাও স্বীকার করলেন, কেরলও টিমগেম খেলে এবং সেটা তিনি মাথায় রাখবেন ফাইনালে।

সেমিফাইনালের দু’টো ম্যাচে সম্পূর্ণ দু’রকম টিম খেলিয়েছিলেন মলিনা। ফাইনালেও তিনি কাদের প্রথম এগারোয় রাখবেন বুঝতে দেননি আগের দিনের অনুশীলনেও। টিম সূত্রের খবর সে রকমই। আর মলিনা বললেন, ‘‘চব্বিশ জনের মধ্যে যে কেউ ফাইনালে নামতে পারে। আবার বেঞ্চেও থাকতে পারে। সবাইকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত রেখেছি।’’ আর সে কারণে কিছুটা ধন্দে পড়েছে কেরল। সচিনের টিমে খেলা এক বঙ্গসন্তান ফোনে বললেন, ‘‘মলিনা ফাইনালে সেরা টিমই নামাবেন মনে হচ্ছে। হিউম, পস্টিগা, দ্যুতিদের ধরেই স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন আমাদের কোচ।’’ তবে মলিনা বা কপেল যে টিমই নামান ফাইনালে, তাতে অন্তত চল্লিশ শতাংশ বঙ্গসন্তান থাকবেন। আগের দু’টো ফাইনালে যা ছিল না।

মলিনার সামনে হাবাসের মতোই ‘এলাম, খেললাম, জয় করলাম’-এর সুযোগ। সেটা যদি করতে পারেন তা হলে তো কথাই নেই। না পারলেও পরের বার কি তিনি থাকবেন? হাবাসের উত্তরসূরি বললেন, ‘‘পরের বার নিয়ে ভাবিনি। আগে এ বারের ফাইনালটা তো জিতি।’’

শুনে বোধহয় বুঝতে অসুবিধে হওয়ার নয় যে, ট্রফিটা পেলে কাকে উৎসর্গ করবেন সেটা না জানালেও মাদ্রিদের আর এক আইএসএল কোচের কথা মাথায় আছে তাঁর। আন্তোনিও হাবাস নামক মাইলফলক শুধু ছোঁয়ার অপেক্ষা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATK Kerala Blasters ISL 2016 ISL Final
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE