Advertisement
১১ মে ২০২৪
কোহালি-পূজারার হাফ সেঞ্চুরি, ওয়ান্ডারার্সে প্রথম দিনই পড়ল এগারো উইকেট

ভাগ্য পিচ আর বোলারদের হাতে

প্রথম দিনেই পড়েছে এগারো উইকেট। যার সব ক’টাই পেসাররা নিয়েছেন। স্পিনাররা উইকেট নেবেন কী, দু’দলের কেউ-ই প্রথম একাদশে স্পিনার রাখেনি।

ধাক্কা: হাফ সেঞ্চুরি করে ফিরে আসছেন বিরাট কোহালি। ওয়ান্ডারার্সে বুধবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের প্রথম দিনে।  ছবি: রয়টার্স

ধাক্কা: হাফ সেঞ্চুরি করে ফিরে আসছেন বিরাট কোহালি। ওয়ান্ডারার্সে বুধবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের প্রথম দিনে।  ছবি: রয়টার্স

সুমিত ঘোষ
জোহানেসবার্গ শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২৯
Share: Save:

ভারতের ১৮৭ রান কি কম, না এই স্কোরেও লড়াই করা যেতে পারে?

ওয়ান্ডারার্সে ০-৩ হোয়াইটওয়াশ হতে চলেছে ভারত নাকি অন্য রকম কিছু ঘটতে পারে?

সবুজ পিচে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কি ভুল করল বিরাট কোহালির ভারত? নাকি এটাই পরে মাস্টারস্ট্রোক হয়ে দেখা দেবে?

বিরাট কোহালি, চেতেশ্বর পূজারার হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে খুশি হওয়ার কারণ নেই? নাকি সবুজ পিচে তাঁদের ইনিংস সেঞ্চুরির সমান বলে গণ্য হতে চলেছে?

এক রাশ ধাঁধা আর বিভ্রান্তি তৈরি হয়ে গিয়েছে ওয়ান্ডারার্সে তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনেই। আর তার কারণ সবুজ বাইশ গজ। যেখানে বল পড়ে সাপের মতো বাঁক খাচ্ছে। দুরন্ত গতিতে ছুটছে। প্লাস্টিক বলের মতো লাফাচ্ছে। ভারত যেমন দু’শো পেরোতে পারল না, তেমনই দক্ষিণ আফ্রিকা দিনের শেষে ছয় ওভারে এক উইকেট হারিয়ে ৬।

প্রথম দিনেই পড়েছে এগারো উইকেট। যার সব ক’টাই পেসাররা নিয়েছেন। স্পিনাররা উইকেট নেবেন কী, দু’দলের কেউ-ই প্রথম একাদশে স্পিনার রাখেনি। জোহানেসবার্গ থেকে আনন্দবাজার প্রথম রিপোর্ট করেছিল, পিচে ঘাস থেকে গেলে অশ্বিনকে বাইরে বসতে হতে পারে। এ দিন টসের সময় বিরাট কোহালি যে প্রথম একাদশ জমা দিলেন, তাতে অশ্বিন নেই। প্রত্যাশা মতোই তাঁর জায়গা নিয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার।

বাদ গেলেন রোহিত শর্মা-ও। তাঁর জায়গায় এলেন অজিঙ্ক রাহানে। দলের সহ-অধিনায়ককে কেন খেলানো হচ্ছে না, তা নিয়ে সরব হয়েছিল দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম। বিশেষজ্ঞ এবং প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও প্রশ্ন তুলেছেন। সুযোগ পেয়ে রাহানের ২৭ বলের সংগ্রাম শেষ হল ৯ রান নিয়ে। তার মধ্যে এক বার আউট হয়ে বেঁচেছেন ভার্নন ফিল্যান্ডার ‘নো বল’ করায়। ক্রিকেট যে মহান অনিশ্চয়তার খেলা এবং কোনও কিছুরই গ্যারান্টি কার্ড হয় না, আবারও তা প্রমাণ হয়ে গেল।

একটা তর্ক গত কাল অনেক রাত পর্যন্ত চলেছিল ভারতীয় শিবিরে যে, ছয় ব্যাটসম্যানে খেলা হবে নাকি হার্দিক পাণ্ড্য-কে রাখা হবে। শেষ পর্যন্ত হার্দিক-কে রাখার সিদ্ধান্ত হয় কেপ টাউনে তাঁর কাউন্টার অ্যাটাকিং ইনিংসের কথা ভেবে। কিন্তু কপিল দেবের উত্তরসূরি যাঁকে ভাবা হচ্ছে, তিনি এ দিন যে ভাবে ফের বাজে স্ট্রোকে উইকেট উপহার দিয়ে গেলেন, আর কোনও সহানুভূতি তাঁর প্রাপ্য নয়। হার্দিক-কে এ বার কারও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে, কপিল দেবের মতো কিংবদন্তিও দলের স্বার্থ-বিরোধী স্ট্রোক খেলে টেস্ট থেকে বাদ পড়েছিলেন। যিনি সেই সময় কপিলের অধিনায়ক ছিলেন, সেই সুনীল গাওস্কর এ দিন কমেন্ট্রি করছিলেন হার্দিক আউট হওয়ার সময়। ‘‘বলের ধারেকাছেও যাওয়ার ইচ্ছা নেই। স্কোরারকে আর ব্যস্ত করল না হার্দিক,’’ ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে বললেন ঠোঁটকাটা সানি।

আরও পড়ুন: ‘নতুন বলের সুযোগ নিতে হবে ভুবিদের’

দিনের খেলা শেষে চেতেশ্বর পূজারা বেশ আত্মবিশ্বাসের সুরে বলে গেলেন, এই পিচে ১৮৭ আসলে ৩০০ রানের সমান। যদি বোলাররা ঠিক জায়গায় বল করতে পারে, ম্যাচ জমে যাবে। পূজারার বক্তব্য, ম্যাচ থেকে তাঁরা মোটেও হারিয়ে যাননি। পূজারা এ দিন ৫৪ বলে নিয়েছেন প্রথম রান করতে। যা নিয়ে প্রবল হাসাহাসি শুরু হয়ে গিয়েছিল ওয়ান্ডারার্সে। সব চেয়ে বেশি বল খেলে প্রথম রান কে করেছেন, সেই রেকর্ড নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। দেখা গেল, পূজারার আগেও পাঁচ-ছয় জন রয়েছেন। এক বার তিনি কোনও রকমে একটা বল খেলে দৌড় শুরু করলেন। সিঙ্গলস নেওয়ার পরে দর্শকরা হাততালি দিয়ে উঠলেন। তার পরেই আম্পায়ার লেগ বাই দেখালেন। এর পর সত্যিই যখন প্রথম রান করলেন, নন-স্ট্রাইকার কোহালি পর্যন্ত হেসে ফেললেন। ড্রেসিংরুমের ব্যালকনিতে উপস্থিত সব সতীর্থরাও হাততালি দিচ্ছেন!

মাইকেল হোল্ডিংয়ের নিশ্চয়ই এই ক্রিকেট ভাল লাগার কথা নয়। তাঁর টিমে ভিভিয়ান রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিজ, ক্লাইভ লয়েড-রা ছিলেন। তিনি এ দিনও বারবার বললেন, কে কত ভাল ব্যাটসম্যান, সেটা প্রমাণ হবে কঠিন পরিবেশে কে কতটা নিজের স্বভাবসিদ্ধ খেলা খেলতে পারল, তা দিয়ে। কোহালির ইনিংসকে এই কারণে দিনের সেরা আখ্যা দিচ্ছেন হোল্ডিং। ‘‘বিরাট দু’এক বার সুযোগ দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু মনোভাবটা সঠিক ছিল। পাল্টা বুঝিয়ে দেওয়া বোলারদের যে, পরিবেশ যতই কঠিন হোক, যতই তোমরা আক্রমণ শানাও, আমিও চুপচাপ সহ্য করব না।’’

পূজারা দিনের শেষে তাঁর মতো করে ব্যাখ্যা দিলেন, এই পিচ কেপ টাউনের চেয়ে কঠিন। একশো বল খেলার পরেও সেট হওয়া যায় না এই ধরনের পিচে। যে কোনও সময় একটা মারণ ডেলিভারি শেষ করে দিয়ে যেতে পারে। সেটা দেখাও গেল কোহালি এবং তাঁর আউটের ক্ষেত্রে। সারাক্ষণ ধরে বল সুইং এবং সিম করছে। দেখে খেলা ছাড়া উপায় নেই।

এ রকম প্রতিকূল পরিবেশে কোহালির ১০৬ বলে ৫৪ (স্ট্রাইক রেট ৫০.৯৪ এবং ৯টি বাউন্ডারি) বোলারদের জন্য লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়ে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস ব্যাটারিকে পাল্টা আক্রমণ করে মারা তাঁর কয়েকটি কভার ড্রাইভ এবং একটি অফ ড্রাইভ দেখে দক্ষিণ আফ্রিকান সমর্থকেরা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকলেন।

পূজারা ৫০ করলেন ১৭৯ বলে। স্ট্রাইক রেট ২৭.৯৩। টেস্ট ক্রিকেটের আন্দাজেও খুবই কম। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক কেপলার ওয়েসেলস বলছেন, এতটা রক্ষণাত্মক না হলেও চলত। কেপলারের বক্তব্য, তা হলে তো টেস্ট ক্রিকেটে কেউ কোনও রানই করবে না। শুধু ঠুকঠুক করতে হয়!

ঘটনা হচ্ছে, ভারতীয় ব্যাটিংয়ের এমন অবস্থা যে, দিনের শেষে পূজারার স্ট্রাইক রেট দেখার মতো জায়গা নেই। গরিবের সংসারে যে যা কুড়িয়ে আনতে পারে, তাই দিয়েই এখন পেট চলবে। সেঞ্চুরিয়নে একা ১৫৩ করা কোহালি এখানেও সর্বোচ্চ স্কোরার। টেলএন্ডার হিসেবে ভুবনেশ্বর কুমারের অবদান সাহসি ৩০। বাকিরা কেউ দুই অঙ্কেই পৌঁছতে পারেননি। এই দুর্ভিক্ষের মধ্যে পূজারার ঠুকঠুক ব্যাটিংয়ে আসা ৫০ রানকে জীবনদায়ী ত্রাণ মনে হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE