Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার দারিদ্র নিয়ে মুখ খুললেন শেরি‌ংহ্যাম

এটিকে-র কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা গোলদাতা টেডি বলেছেন, ‘‘কলকাতায় থাকার সময় নিজের ছেলেবেলাকে ফিরে দেখতাম।

পর্যবেক্ষণ: অভিজ্ঞতার কথা  বলছেন শেরিংহ্যাম। ফাইল চিত্র

পর্যবেক্ষণ: অভিজ্ঞতার কথা  বলছেন শেরিংহ্যাম। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

লিওনেল মেসির পথেই হাঁটলেন টেডি শরিংহ্যাম।

আইএসএলে তাঁর কোচিংয়ে সাফল্য না পাওয়ায় তিনি তেমন হতাশ বা দুঃখিত নন। পেশাদার কোচ হিসাবেই পুরো ব্যাপারটা মেনে নিয়েছেন তিনি। বরং টেডিকে যন্ত্রণা দিয়েছে কলকাতার মানুষের দুঃখের জীবনযাত্রা। সাত বছর আগে যুবভারতীতে খেলতে এসে লিওনেল মেসিও এ রকম যন্ত্রণা পেয়েছিলেন রাস্তার পাশের পথশিশুদের দেখে।

এটিকে-র কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা গোলদাতা টেডি বলেছেন, ‘‘কলকাতায় থাকার সময় নিজের ছেলেবেলাকে ফিরে দেখতাম। খেলার আধুনিক জিনিসপত্র হয়তো পাইনি। তবুও আমার একটা নিজের বাড়ি ছিল! কলকাতার লোকের তো অনেকেরই তা নেই। ছয় ফুট বাই ছয় ফুটের অস্থায়ী ঘরে থাকেন একই পরিবারের চার জন মিলে। সেটাকে বাড়ি বলা ঠিক নয়। সেটা ছাউনি।’’ রবি কিনদের কোচ থাকার সময় যুবভারতী সংলগ্ন পাঁচ তারা হোটেলে থাকতেন টেডি। সেই হোটেলের সামনে বা আশেপাশে বাইপাসের ধারে প্রচুর টিনের চালের বা টালির ছোট ছোট ঘর বাড়ি আছে। অনুশীলনের সময়টুকু ছাড়া টটেনহ্যাম তারকাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত সেখানকার রাস্তায়। সাক্ষাৎকারে তাঁর প্রতিফলন ঘটেছে। ব্রিটিশ কোচ বলেছেন, ‘‘কলকাতার মতো এমন দারিদ্র আমি অন্তত কোথাও দেখিনি। ওই অস্থায়ী বাড়ির বাসিন্দারা কী ভাবে জামাকাপড় কাচত? কোনও ছোট পুকুরে জামা কেচে সেগুলো রাস্তার মাঝখানে শুকোতে দিয়ে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ত। সারা রাত কাপড় রাস্তায় থাকত। পরের দিন তা তোলা হত। ফুটবলের পাশাপাশি এটা আমার কাছে জীবনের নতুন এক অভিজ্ঞতা। ভারতে না এলে এটা বুঝতে পারতাম না।’’

লিওনেল মেসির আর্জেন্তিনা কলকাতায় প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে এসেছিল ২০১১-তে। টেডি যে হোটেলে থাকতেন সেখানেই উঠেছিলেন মেসি। তিনিও হোটেলের জানালা দিয়ে বা টিম বাসে বিমানবন্দর থেকে আসার সময় বাইপাসের ধারের ঝুপড়ি দেখে অবাক হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘এখনকার শিশুরা যে ভাবে থাকে সেটা আমাকে অবাক করেছে। ওরা দুর্গন্ধযুক্ত খোলা নর্দমার পাশের রাস্তার কলে স্নান করে। পোশাক না পরে ঘুরে বেড়ায় রাস্তার ধুলোয়।’’ আর্জেন্তিনার কাগজে মেসির সেই বক্তব্য বোরোনোর পর হইচই হয়েছিল সেই সময়। কিন্তু মেসি যখন এসেছিলেন, তখন যুবভারতীতে যুব বিশ্বকাপ হয়নি। এত সাজগোজ হয়নি স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকার। এখন তো যুবভারতী ও সংলগ্ন হয়েছে বিশ্বমানের। কিন্তু টেডির চোখ এড়ায়নি বাইপাসের ধারের ওই পিছিয়ে পড়া মানুষের দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করার জীবনযাত্রা। গত ছয় মাস কলকাতায় থাকার সুবাদে সে সব দেখে টেডি তা বলে দিয়েছেন নিজের দেশের সংবাদমাধ্যমে।

দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ও একবারের রানার্স এটিকে-র কোচের দায়িত্ব নিয়ে অবশ্য ব্যর্থ হয়েছেন টেডি। কেন হলেন তারও অবশ্য উত্তর দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘রবি কিনের মতো তারকা ফুটবলার চোট পাওয়ায় প্রথম চার ম্যাচে পাইনি। যাকে নিলাম থেকে প্রথম নিয়েছিলাম সেই ইউজেনসিন লিংডো দুটো ম্যাচের পর বাইরে চলে গেল চোট পেয়ে। তাতে কি আমি ভেঙে পড়েছিলাম? একেবারেই না। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। নতুন কোথাও কোচিং করাতে গেলে এ সব আমার কাজে লাগবে। আমি খুব আশাবাদী মানুষ।’’

এটিকে থেকে ছাঁটাই হয়ে গেলেও পেশাদার বলেই কোনও তোপ দাগেননি। বরং বলে দেন, ‘‘আমি যে ভাবে কোচিং করাতে চেয়েছি তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। শুধু বিদেশিরাই নন, ভারতীয় ফুটবলাররাও খুব দারুণভাবে নিয়েছে আমার অনুশীলন।’’ পাশাপাশি ব্রিটিশ কোচের মন্তব্য, ‘‘কোচিং ব্যাপারটা আমাকে খুব আনন্দিত করেছে। উত্তেজিত করেছে। ওয়েস্ট হ্যামের কোচিং জীবনটাও উপভোগ করেছি আগে। এ বারও করলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teddy Sheringham poverty Kolkata Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE