‘টেনিসের বিশ্বকাপ’ বলা হয় যাকে সেই ডেভিস কাপ এই প্রজন্মের খেলোয়াড়দের কাছে স্রেফ আর একটা প্রতিযোগিতার মতো। ডেভিস কাপের প্রতি সেই ভালবাসা, আবেগটাই নেই। বলছেন রোহন বোপান্না। যিনি কয়েক দিন আগেই ৪৩ বছর ছ’মাস বয়সে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ডাবলসের ফাইনালে উঠে নজির গড়েছেন। মরক্কোর বিরুদ্ধে ভারতের শনি এবং রবিবার ধরে চলা টাইয়ে যাঁকে শেষ বার ডেভিস কাপে খেলতে দেখা যাবে।
‘‘এখন তো এদের কাছে ডেভিস কাপে খেলাটা অন্য রকম হয়ে উঠেছে। এস, খেলো আর চলে যাও,’’ বলেন বোপান্না। অথচ ডেভিস কাপ এমন একটা প্রতিযোগিতা যেখানে বিশ্বজুড়ে মনে করা হয় র্যাঙ্কিংয়ের উপরে সব নির্ভর করে না। অনেক সময়ই দেখা যায় শক্তিশালী দেশকে হারিয়ে দিয়েছে দুর্বল কোনও দেশ। সেই বিশ্বাসটা আসে দলের একতা থেকে। সঙ্গে নিখুঁত পরিকল্পনা এবং রিজার্ভ বেঞ্চের আবেগ, কোর্টের বাইরে থেকে সতীর্থদের সমর্থনে যে কোনও খেলোয়াড়েরই সেরাটা বেরিয়ে আসে। ‘‘একটা সময় দারুণ একটা পরিবেশ ছিল দলে। গত কয়েক বছরে সেই পরিবেশটা হারিয়ে গিয়েছে। সেটা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে,’’ নিজের শেষ ডেভিস কাপের প্রস্তুতির ফাঁকে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন বোপান্না। সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ডেভিস কাপে আসল হল দলগত বন্ধুত্ব। দলের সঙ্গে কাটানো সময়, একসঙ্গে থাকা। সেটাই ফিরিয়ে এনে একটা সফল দল গড়ে তুলতে হবে।’’
মধ্যমণি: জিতে বোপান্নাকে বিদায়ী উপহার দিতে পারবে দল? ছবি: পিটিআই।
২০২২ সালে অভিষেক হওয়া বোপান্না নিজের মতামত জানিয়েছেন বর্তমান ডেভিস কাপ দল নিয়ে। তবে এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হল সেটা তিনি জানেন না। ‘‘কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই এই জায়গাটা তৈরি হওয়ার। এখন তো এটিপি টুরও অন্য রকম। ডেভিস কাপও অন্যরকম,’’ বলেন বোপান্না।
কথা বলতে বলতেই অতীতের কথাও মনে পড়ে যায় তাঁর। কেমন ছিল ভারতীয় টেনিসের দুই কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজ এবং মহেশ ভূপতির সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা? বোপান্না বলেন, ‘‘যাঁর সঙ্গেই যখনই খেলতে হোক না কেন আমাকে মানিয়ে নিতে হয়েছে। দেখতে হয়েছে জুটি হিসেবে নামার পরে আমি কতটা দিতে পারি। তবে একটা ব্যাপার দু’জনের ক্ষেত্রেই যা শিখেছিলাম তা হল, শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত লড়াই করতে হবে। নিজেদের মধ্যে যদি কোনও মতপার্থক্য থাকেও সেটা ভুলে দেশের জন্য দুশো শতাংশ উজাড় করে দিতে হবে।’’ তবে বোপান্না এমনও মনে করেন না এখন দেশের হয়ে ‘খেলব না’ কথাটা বলা সহজ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এমনটা বলব না। তবে ডেভিস কাপে খেলাব সেই ভালবাসাটা আর নেই। ওরা এটাকে আর পাঁচটা প্রতিযোগিতার মতোই দেখছে। এই কারণেই ৪৩ বছর বয়সেও আমাকে খেলতে হচ্ছে।’’
ভারতীয় দলের বাকি সদস্যরা বোপান্নাকে এই ‘ওয়ার্ল্ড গ্রুপ টু’-এর টাই জিতে বিদায়ী উপহার দিতে পারবেন? তাতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ খাতায়-কলমে ভারতই এই টাইয়ে এগিয়ে। ভারতের এক নম্বর সিঙ্গলস খেলোয়াড় সুমিত নাগাল ছন্দে আছেন। অস্ট্রিয়ায় একটি চ্যালেঞ্জার প্রতিযোগিতায় ফাইনালে খেলার পরে তিনি এই টাইয়ে নামছেন। তিনি ভারতকে সিঙ্গলসে দু’পয়েন্ট এনে দেবেন এটা আশা করা হচ্ছে। শশী কুমার মুকুন্দের অভিষেক হতে পারে। সঙ্গে দিগ্বিজয় প্রতাপ সিংহও আছেন। ডাবলসে বোপান্না খেলবেন য়ুকি ভামব্রির সঙ্গে জুটিতে। মরক্কোর খেলোয়াড়দের মধ্যে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়তে পারেন শুধু এলিয়ট বেনচেরিত। তবে তিনি সদ্য চোট কাটিয়ে উঠেছেন বলে প্রথম দিন তাঁকে নাও খেলাতে পারে তাঁর দল।
২৪ বছরের ছ’ফুট চার ইঞ্চির এই খেলোয়াড়ের সিঙ্গলসে বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৪৬৫, তবে ২০২০ সালে ১৯৮ নম্বরে উঠেছিলেন। র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম একশো এবং প্রথম পঞ্চাশে থাকা খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে জয় রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)