Advertisement
E-Paper

পরিকাঠামোর অভাবে শ্রীকান্ত নেই বাংলায়

হায়দরাবাদ বা বেঙ্গালুরুতে যখন আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণ পেয়ে কিদম্বি শ্রীকান্ত, বি সাই প্রণীত, পিভি সিন্ধু, সাইনা নেহওয়ালরা বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের মঞ্চে ভারতকে ক্রমশ উপরের দিকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন এটাই বাংলার ব্যাডমিন্টন চিত্র।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০৪:১৯
কিদাম্বি শ্রীকান্ত। ছবি: এপি।

কিদাম্বি শ্রীকান্ত। ছবি: এপি।

কাঠের উপর কার্পেট মোড়া কোর্ট (হোভা) রয়েছে নাম মাত্র কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। যেখানে অনুশীলন না করে ম্যাচে নামলে সমস্যা হবেই। কাঠের কোর্টেও পরিচর্যার অভাব।

শাটল কক-এর অভাবে স্ম্যাশ মারতে ভয় পান খেলোয়াড়রা। শুরুর দিন থেকে তাই শেখেন ডিফেন্সিভ খেলা। যা আজকের আগ্রাসী ব্যাডমিন্টনের যুগে অচল।

হায়দরাবাদ বা বেঙ্গালুরুতে যখন আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণ পেয়ে কিদম্বি শ্রীকান্ত, বি সাই প্রণীত, পিভি সিন্ধু, সাইনা নেহওয়ালরা বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের মঞ্চে ভারতকে ক্রমশ উপরের দিকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন এটাই বাংলার ব্যাডমিন্টন চিত্র। ফলে ঋতুপর্ণা দাস, জিষ্ণু সান্যাল, শুভঙ্কর দে, বরুণ কপূর-রা পাড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে। বাংলা থেকে উঠে আসছে না ব্যাডমিন্টনের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।

সব দেখে রাজ্য ব্যাডমিন্টন সংস্থার প্রেসিডেন্ট উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় হতাশ গলায় বলে ওঠেন, ‘‘এ রাজ্যে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবটাই বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাতটা আধুনিক কোর্ট-সহ পুরোদস্তুর অ্যাকাডেমি করার জন্য মাত্র ১৬ কাঠা জায়গা চেয়ে আবেদন করেছি আট বছর আগে। কিন্তু সেটা এখনও পেলাম না। প্র্যাকটিস না করতে পারলে ঋতুপর্ণা তো বাংলা ছাড়বেই। এখন উৎসবা পালিত জাতীয় স্তরে দুর্দান্ত খেলছে। জানি না ওকে কত দিন ধরে রাখতে পারব!’’

ব্যাডমিন্টনে প্রাক্তন জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা রিয়া এখন নামেন উত্তর প্রদেশের হয়ে। ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী রিয়া সিঙ্গলসে দেশের এগারো নম্বর খেলোয়াড়। মেয়ের সম্পর্কে ইন্দ্রজিৎবাবু বলেন, ‘‘বাংলায় ব্যাডমিন্টন খেলার জায়গা কোথায়? মেয়েকে বাধ্য হয়ে বাইরে পাঠাতে হয়েছে।’’ হায়দরাবাদে গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে খেলে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ঋতুপর্ণা দাসের বাবা মহানন্দবাবুও বলছেন, ‘‘সিমেন্টের কোর্টে খেলে মেয়েটার হাঁটু নষ্ট হচ্ছিল। তাই হায়দরাবাদে যেতে হয়েছে।’’ ১৪ বছরের বরুণ কপূর সম্প্রতি বাংলা ছেড়ে মহারাষ্ট্রে গিয়েছেন। কেন? জানতে চাইলে পুণে থেকে তাঁর বাবা রোহিত কপূর বলে দেন, ‘‘বাংলায় পরিকাঠামোই নেই। একই ছাদের তলায় সব না পেলে হারিয়ে যাবে ছেলের খেলাটা।’’

এখানেই শেষ নয়। রাজ্য ব্যাডমিন্টন সংস্থার শীর্ষ কর্তা এর পরে যে ফিরিস্তি দেন তা শুনলে চোখ কপালে উঠবে। সংস্থার অনুমোদিত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ১৭০০। সেখানে কোচের সংখ্যা মাত্র তিরিশ! অর্থ্যাৎ একজন কোচকে গড়ে সামলাতে হয় পঞ্চাশের বেশি ছাত্রকে। পুরো সময়ের কোচ কোথাও নেই। ফলে একজন গোপীচন্দ তাঁর ছাত্রী সিন্ধু বা ছাত্র কিদম্বির পিছনে যে সময় দেন, তা বাংলায় কে দেবেন?

হায়দরাবাদ থেকে শ্রীকান্তরা যখন অসাধ্য সাধন করে ফেলছেন, তখন বাংলা থেকে কেউ সেই স্তরের কাছাকাছি যেতে পারছেন না কেন?

জানতে চাইলে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তিন বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন বঙ্গসন্তান দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে খেলার জায়গা কোথায়? চাকরি সূত্রে যখন দূর্গাপুরে থাকতাম তখন সেখানে ব্যাডমিন্টন কোর্ট তালাবন্ধ হয়ে থাকত। আর সিমেন্টের কোর্টে খেলা শেখাব না। শূন্যে লাফিয়ে স্ম্যাশ করে বেকায়দায় নামলে হাঁটুর চোট হবে। এখন নবি মুম্বইতে অ্যাকাডেমি করছি। আধুনিক অ্যাকাডেমি থাকলে বাংলা থেকেও ভাল খেলোয়াড় উঠে আসতে পারে। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে সেই সুযোগ আছে বলেই সেখানে সবাই যাচ্ছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘হায়দরাবাদে গোপীর অ্যাকাডেমি বা বেঙ্গালুরুতে দেখেছি একটি বাচ্চাকে একই সঙ্গে চারটি জায়গা থেকে শাটল কক ছুড়ে শুরু থেকেই প্র্যাকটিস করানো হয়। ফলে প্রথম থেকেই দক্ষিণে প্রশিক্ষণ পাওয়া একটি খেলোয়াড় গতি এবং ফুটওয়ার্কে অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রশিক্ষণ বাংলায় হয় কি?’’

এক বছর আগেও ডাবলসে ভারতের এক নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন এ রাজ্যের জিষ্ণু সান্যাল। যিনি বাংলা ছেড়ে দীর্ঘদিন এয়ার ইন্ডিয়ার হয়ে খেলছেন। বলেন, ‘‘পরিকাঠামো, কোচিং ছেড়ে দিন। ভাল ফিজিও, থাকার জায়গা, রিহ্যাব-এর জন্য সুইমিং পুল—একই ছাদের তলায় এ রকম ট্রেনিং-এর জায়গা বাংলায় নেই বলেই মহারাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলাম।’’

শাটল কক-এর গল্পও কম আকর্ষণীয় নয়। বাজারে আধুনিক একটি শাটল কক-এর দাম একশো টাকা। ঠিক মতো অনুশীলনে একজন খেলোয়াড়ের দিনে তিনটে কক লাগার কথা। কিন্তু সেই খরচ বাংলায় বিলাসিতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খেলোয়াড় বললেন, ‘‘সিন্ধুকে গোপী স্যারের অ্যাকাডেমিতে প্র্যাকটিস করতে দেখেছি। শুনেছি দিনে নাকি তিন ব্যারেল কক লাগে। প্রতি ব্যারেলে ১২ টি কক থাকায় খরচ সাড়ে তিন হাজার টাকার উপরে। এটা সম্ভব অ্যাকাডেমি রয়েছে বলেই। বাংলায় কক বাঁচাতে অনুশীলনে লাফিয়ে স্ম্যাশ না করে ডিফেন্স করে বেশিরভাগ খেলোয়াড়। এর পরে ভাল খেলোয়াড় আশা করবেন কী ভাবে?’’

Kidambi Srikanth West Bengal badminton কিদাম্বি শ্রীকান্ত
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy