ইস্ট-মোহন ডিফেন্সে কোনও জন জনসন ছিলেন না।
বেঙ্গালুরু এফসি-কে অভিনন্দন। জন্মের তিন বছরের মধ্যে দুটো আই লিগ জেতা শুধু কৃতিত্বের নয়, গর্বেরও। এখন হয়তো সাফল্যের ঝলমলে আলোর আড়ালে পিছনে তাকানোর সময় নেই। কিন্তু আমি জানি, এমন শৃঙ্গ জয়ের নেপথ্যে কী ধরনের নিখুঁত পরিকল্পনা সযত্নে করা হয়েছে।
খুব একটা আগের কথা নয়। যখন আমার সঙ্গে সজ্জন জিন্দলের দেখা হয়েছিল। দেশের একদম প্রথম সারির শিল্পপতিদের একজন হওয়া সত্ত্বেও ওনার সরলতা এবং সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ফুটবল আর নিজের ক্লাবের প্রতি অন্ধ ভালবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
সেই ভালবাসার গভীরতা এমনই যাকে আমরা ছোঁয়াচে বলে থাকি! আই লিগের রেজাল্টেও সেটা স্পষ্ট। সজ্জনবাবুর প্রবল আবেগ বাষ্পাকারে বেঙ্গালুরু এফসি ক্লাবের প্রশাসনিক কর্তাদের থেকে গোটা টিমে ছড়িয়ে পড়েছে। এটাই মাঠে ওদের গোটা টিমের ধারাবাহিকতার আসল রহস্য! বেঙ্গালুরু বিশাল বাজেটের টিম। যদিও কখনওই ওরা তা নিয়ে শো-অফ করেনি। এমনকী টিমে বড় বড় নাম থাকা সত্ত্বেও কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড প্রত্যেক নতুন ফুটবলারের দিকে সমান নজর দিয়েছেন।
রোটেশন-নীতিও দারুণ হিট তাঁর দলে। আই লিগের পাশাপাশি এএফসি কাপ খেলতে গিয়ে দলের সব সম্পদকে কোচ এমন বুদ্ধি করে ব্যবহার করেছেন যাতে সবাই তরতাজা থাকে, ভাল খেলার খিদেও না কমে। ফলে ফুটবলাররা কিছু বাড়তি করে দেখাতে মরিয়া।
নিটফল— বেঙ্গালুরু আবার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন।
এই নিয়ে টানা তিন মরসুম কুর্তো ওসানো আর জন জনসন একসঙ্গে খেলছে। এবং ম্যাচ শুরু হতে না হতে ওদের দু’জনকে দেখে মনে হয়, টেলিপ্যাথি চলছে নিজেদের মধ্যে! মাঠে ওরা এত সুন্দর ভাবে একে অপরকে সাহায্য করে যে, বেঙ্গালুরুর জন্য সেটা নিঃসন্দেহে একটা বড় বোনাস। ওয়েস্টউডও তাতে শান দিতে ছিটেফোঁটা ঢিলেমি দেননি।
আসলে ফরোয়ার্ডরা একটা ম্যাচ জেতাতে পারে। কিন্তু একটা টুর্নামেন্ট জিততে হলে আর সেটা যদি খুব লম্বা হয়, তা হলে ডিফেন্সই প্রধান ভরসা। পরিসংখ্যানও এ ব্যাপারে বেঙ্গালুরুর পাশে— জনসনরা আই লিগে নয় দলের মধ্যে সবচেয়ে কম গোল হজম করেছে।
খুব সূক্ষ্ম বিচার করলে এ বারের ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান দলে ভারসাম্যের অভাব ছিল। কলকাতার দুই প্রধানই অ্যাটাকিং থার্ডকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছিল। আর সেটাই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এল ওদের দিকে। নির্ভর করা এক কথা, কিন্তু র্যান্টি মার্টিন্স আর সনি নর্ডির উপর যে ভাবে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল ইস্ট-মোহন, তাতে কিছু ম্যাচ জিতলেও শেষরক্ষা হয়নি।
খুব তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেঙ্গালুরু ফুটবলারদের দারুণ সাপোর্ট করেছে দলের সাপোর্ট স্টাফও। জিপিএস সিস্টেমের ব্যবহার ফুটবলারদের কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে। এখনকার যুগে কেউ স্পোর্টস বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করতে পারে না। তুমি ফিট থাকলে সব যুদ্ধে জিতবে।
ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ বেঙ্গালুরুর কাছে নিশ্চয়ই আরও তৃপ্তির। তবে এ বার ওদের ঘিরে সমর্থকদের প্রত্যাশা আরও বেড়ে যাবে। ফেড কাপ কিন্তু দরজায় কড়া নাড়ছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy