Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Euro 2020

বিশ্বজয়ীদের হারালে ফিরবে চেনা জার্মানি

কোচ ওয়াকিম লো-ও নিজেকে অনেক বদলে ফেলেছেন। ইউরো কাপের পরেই জার্মানির জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়বেন তিনি।

প্রস্তুতি: ইউরোয় প্রথম ম্যাচেই মহারণ। সোমবার ট্রেনিংয়ে হাল্কা মেজাজে জার্মানির থোমাস মুলারেরা।

প্রস্তুতি: ইউরোয় প্রথম ম্যাচেই মহারণ। সোমবার ট্রেনিংয়ে হাল্কা মেজাজে জার্মানির থোমাস মুলারেরা। ছবি রয়টার্স।

অরুণাভ চৌধুরী
রেমশায়েড (জার্মানি) শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৭:৩০
Share: Save:

এ বারের ইউরো কাপে নতুন ভাবে আবিষ্কার করলাম জার্মানিকে! সর্বোচ্চ পর্যায়ের যে কোনও প্রতিযোগিতার আগে সব সময় এই দেশের ছবিটা বদলে যায়। রাস্তায়, গাড়িতে, বাসে জার্মানির জাতীয় পতাকা ও ফুটবলারদের ছবি দেখা যায়। কিন্তু এ বারই ব্যতিক্রম।

কোলনের কাছে রেমশায়েড শহরে যেখানে আমি থাকি, সেখানে এই মুহূর্তে শুধু ইটালি ও তুরস্কের জাতীয় পতাকা চোখে পড়ল। কে বলবে আজ, মঙ্গলবার ইউরো কাপে জার্মানি প্রথম ম্যাচ খেলবে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। এবং খেলা হবে মিউনিখেই!

জার্মানির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও করোনা অতিমারির জন্য ফুটবল কিছুটা হলেও যেন মানুষের মনে চলে গিয়েছে পিছনের সারিতে। গত শীতে মারণ ভাইরাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তরঙ্গের ধাক্কায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। মে মাস থেকেই ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। গত নভেম্বর থেকে যে বর্ধিত লকডাউন শুরু হয়েছিল, তা মে মাসের শেষে তুলে নেওয়া হয়েছে। যদিও পুরোপুরি বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়নি এখনও। জিম, ক্লাবগুলো বন্ধই রয়েছে।

বিশ্বকাপ ও ইউরো কাপের সময় বরাবর দেখেছি, খোলা জায়গায় একসঙ্গে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়ে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখেন। এ বার সবই বন্ধ থাকবে। তবে পানশালাগুলির বাইরে খোলা জায়গায় রাত বারোটা পর্যন্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু মানুষকে খেলা দেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও তা নিয়ে সাধারণের মধ্যে খুব একটা উৎসাহ নেই। তার অন্যতম কারণ, জার্মানি এমনিতেই খুব একটা ছন্দে নেই। গত এপ্রিলেই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার কাছে ২-১ হেরে গিয়েছিল। স্পেনের কাছে ০-৬ চূর্ণ হয়েছিল। তার উপরে এ বারের ইউরো কাপে মারণ গ্রুপে পড়েছেন ম্যানুয়েল ন্যয়ার-রা। ফ্রান্স, পর্তুগালের সঙ্গে লড়তে হবে নক-আউট পর্বে যাওয়ার জন্য। গ্রুপে রয়েছে হাঙ্গেরিও। জার্মানির অধিকাংশ মানুষের আশঙ্কা, গ্রুপ পর্ব থেকেই না বিদায় নিতে হয় থোমাস মুলারদের!

জার্মানিতেই জন্ম ও বড় হয়ে ওঠার সুবাদে দেখেছি, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, জার্মানদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকে। কারণ, জার্মানির সম্পদই হল হার-না-মানা মনোভাব। সাধারণ মানুষের মানসিকতাও তাই। এ বারে যেন সেই বিখ্যাত জার্মান মানসিকতাটাই চোখে পড়ছে না। অবশ্য জাতীয় দল নিয়ে স্বপ্ন দেখার অভ্যাসটা ধাক্কা খেতে শুরু করেছে ২০১৮-তে রাশিয়া বিশ্বকাপে বিপর্যয়ের পর থেকেই। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে না, ইউরোতেও নিজেদের ফুটবল দল নিয়ে খুব উচ্চাশা রয়েছে কারও। ফ্রান্স বা পর্তুগাল শুধু নয়, হাঙ্গেরিকে নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ফেরেঙ্ক পুসকাসের দেশের অনেক ফুটবলারই বুন্দেশলিগায় খেলেন। হাঙ্গেরি দলটা তারুণ্যে ভরপুর।

সংখ্যায় কম হলেও কিছু সংখ্যক মানুষ অবশ্যই জার্মানিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। আর তার কারণ, মুলার ও ম্যাটস হুমেলস জাতীয় দলে ফিরে এসেছেন। সদ্য সমাপ্ত বুন্দেশলিগায় রবার্ট লেয়নডস্কি ৪১ গোল করে কিংবদন্তি গার্ড মুলারের রেকর্ড ভাঙলেও তাঁর সাফল্যের নেপথ্যে থোমাস মুলারের অবদানও কম নয়। নিজে ১১টি গোল করেছেন। করিয়েছেন ১৮টি। এখনও জার্মানি ফুটবলে মুলারের মতো চতুর স্ট্রাইকারের কোনও বিকল্প নেই। এ ছাড়াও রয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন চেলসির কাই হাভার্ৎজ়, টিমো ওয়ের্নার ও আন্তোনিয়ো রুডিগার, ইপিএল-জয়ী ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ইকেই গুন্দোয়ান। বায়ার্ন মিউনিখের জোশুয়া কিমিখ, রিয়াল মাদ্রিদের টোনি খোসের মতো একঝাঁক অসাধারণ ফুটবলার রয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এঁদের জন্যই জার্মানি ঘুরে দাঁড়াবে।

কোচ ওয়াকিম লো-ও নিজেকে অনেক বদলে ফেলেছেন। ইউরো কাপের পরেই জার্মানির জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়বেন তিনি। শেষ প্রতিযোগিতায় যে কোনও মূল্যে জিততে চান লো। ২০১৮ বিশ্বকাপে জার্মানি দলের প্রধান সমস্যা ছিল ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব। চার বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যদের সঙ্গে নতুন ডাক পাওয়া ফুটবলারদের মধ্যে একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। লো সেই সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বিশ্বকাপের পরেই প্রকাশ্যে বলে দেন, মুলার-হুমেলসদের জাতীয় দলে কোনও জায়গা নেই। পরিস্থিতির চাপে হোক বা দলের স্বার্থে, তিনি সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রায় আড়াই বছর পরে ফিরিয়ে এনেছেন মুলার ও হুমেলসকে।

রাশিয়ায় বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ছে চলেছে জার্মানি, তা নিয়ে কারও মনে সন্দেহ নেই। কিলিয়ান এমবাপে, আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যানের সঙ্গে এ বার রয়েছেন করিম বেঞ্জেমাও। স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ স্ট্রাইকার। এই তিন ফরাসি তারকাই যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে জার্মানি যদি ফ্রান্সকে হারাতে পারে, তা হলে কিন্তু ছবিটাই বদলে যাবে। ফের জার্মানি সেজে উঠবে পতাকা ও তারকাদের ছবিতে। ফিরে আসবে ফুটবল নিয়ে চেনা উন্মাদনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

france germany Euro 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE