ম্যাঞ্চেস্টারে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে। শনিবার।
ওয়ান-টু-থ্রি। ওয়ান-টু-থ্রি।
রাইট-লেফট-রাইট। তিনটে বিষাক্ত ছোবল। সনি উইটিংয়ের পা দুটো টলে গেল। শরীরটা আস্তে আস্তে এলিয়ে পড়ল দড়ির উপর।
তিন রাউন্ড। ৪৯৪ সেকেন্ড। দু’হাতটা উঁচু করে তিনি দাঁড়িয়ে। চোখ দুটো জ্বলছে। প্রতিপক্ষের দিকে তাকিয়ে আজ তিনি কিছু বললেন না। বলার দরকারও ছিল না। বিজেন্দ্র সিংহ দশ মিনিটের কম সময় পেশাদার বক্সিংয়ের দুনিয়াকে বুঝিয়ে দিলেন, ভারতীয় বক্সিং কী জিনিস। সনি আগের দিন বলেছিলেন, ওকে নরক দেখাব। বিজেন্দ্রর তিনটে ঘুসি তো নরক দেখিয়ে দিল সনিকেই। বক্সিংয়ের নিয়ম অনুযায়ী হয়তো বলতে হবে, টেকনিক্যাল নক আউট। কিন্তু গোটা ভারতের কাছে এটা তো নক আউটের থেকেও বড়। যার ক্যাচলাইন একটাই হতে পারে। মেরে পাট করে দেওয়া।
আগের দিন সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ভারতের প্রথম পেশাদার বক্সার বলেছিলেন, আমার রুটিনটা এখন দাঁড়িয়েছে ঘুম থেকে ওঠা-ট্রেনিং-ঘুমিয়ে পড়া। বলেছিলেন, অপেশাদার বক্সিং থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। তাই এ বার আরও উঁচুতে উঠতে চাই। বলেছিলেন, রিংয়েই সনিকে জবাব দেবেন।
বিজেন্দ্র কথা রেখেছেন।
পেশাদার হওয়ার পর অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন একটা সময়। শুনতে হয়েছে, এই ছেলেটার আর কিছু হবে না। ও ফুরিয়ে গিয়েছে। বিজেন্দ্রর তিনটে ঘুসি কিন্তু এ সবেরও জবাব দিয়ে গেল।
সনি উইটিংও কি একটু হাল্কা ভাবে নিয়েছিলেন ভারতীয় চ্যাম্পিয়নকে? নিলেও খুব সম্ভবত ভুলটা টের পেয়ে যান প্রথম বেল বাজার কিছু পরেই। বিজেন্দ্র যেন তখন রিংয়ে ভেসে বেড়াচ্ছেন। সনি আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাঁকে ছুঁতে পারছেন না। কখনও মাথাটা সামান্য সরিয়ে সনির ঘুসিটাকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন উপর দিয়ে। কখনও স্টেপিংয়ের সামান্য কারিকুরিতে চলে যাচ্ছেন সনির নাগালের বাইরে।
বিজেন্দ্র যেন তখন একটা ছায়া। যেন এক অশরীরী। রিংয়ে তাঁকে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু ছোঁয়া যাচ্ছে না। তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে সনির যে ক’টা ঘুসি বিজেন্দ্রকে ছুঁতে পেরেছে, তার বেশির ভাগই লেগেছে বিজেন্দ্রর গ্লাভসে বা শরীরে। যা থেকে বড় পয়েন্ট আসে না।
বিজেন্দ্রর এ দিন অবশ্য পয়েন্টের দরকার পড়েনি। রিংয়ের দড়িটা না থাকলে মাটিতেই পড়ে যেতেন সনি। জীবনের প্রথম পেশাদার বাউটে টেকনিক্যাল নক আউট। বিজেন্দ্র বোধহয় এতটা আশা করেননি। গোটা দেশও কি ভেবেছিল এমন একটা দৃশ্য দেখতে পাবে? যেখানে বিলেতের মাটিতে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ বক্সারকে মেরে পাট করে দিচ্ছেন এক ভারতীয়।
বাউট শেষে বিজেন্দ্র বলছেন, ‘‘আমার লড়াই তো সবে শুরু হল। অনেক দূর যেতে হবে আমাকে।’’ রাত দশটার পর থেকে ভারতের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ট্রেন্ড হতে থাকেন বিজেন্দ্র। এবং তার কিছু সময় পরে ভেসে আসতে থাকে একের পর এক অভিনন্দন বার্তা। বিজেন্দ্রও ধন্যবাদ দিচ্ছেন তাঁর সমর্থকদের। বলছেন, ‘‘পেশাদার বক্সিংয়ের জগতে আমি ভারতকে চেনাতে চাই। আমার সামনে এখন একটাই লক্ষ্য। জেতা, জেতা আর জেতা।’’ অভিনন্দন চলে এসেছে দেশের ক্রীড়ামন্ত্রীর তরফেও। সর্বানন্দ সোনোওয়াল টুইট করেন, ‘‘আরও অনেক দূর যেতে হবে চ্যাম্প।’’ বিজেন্দ্রর এর পরের লড়াই ৩০ অক্টোবর। কিন্তু সে তো পরের কথা। ভবিষ্যৎ।
বর্তমান একটা কথাই বলছে। তিনটে ঘুসিতে বিজেন্দ্র বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, তিনি ফুরিয়ে যাননি। তিনটে ঘুসিতে বিজেন্দ্র সম্ভবত বদলে দিয়ে গেলেন ভারতীয় বক্সিংয়ের ছবিটাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy