এক ফ্রেমে তিন প্রজন্ম। বিজয়, সানিয়া ও জয়দীপ। নিজস্ব চিত্র
তিনি পা রাখতেই মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল পরিবেশ।
অপেক্ষমান জনতা ছেঁকে ধরল তাঁকে। সেলফি, সই শিকারি, খুদে টেনিস ভক্ত, সংবাদমাধ্যম— কে নেই সেই ভিড়ে। সল্টলেকে জয়দীপ মুখোপাধ্যায় টেনিস অ্যাকাডেমিতে শনিবার প্রেমজিৎ লাল টেনিস টুর্নামেন্টে তাঁর অতিথি হয়ে আসার কথা আগেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। আগের দিনই ভারতীয় টেনিসের কিংবদন্তি বিজয় অমৃতরাজ চলে এসেছিলেন। এ বার তাঁর উপস্থিতিতে কলকাতার টেনিস উৎসবের জৌলুস এক লহমায় আরও রঙিন হয়ে উঠল। তিনি— সানিয়া মির্জা।
দু’বছর পরে কলকাতায় আসার চার দিন আগেই তাঁর দুই বন্ধু গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। ইতালিতে বিয়ে করে। বিরাট কোহালি, অনুষ্কা শর্মা যে সত্যিই বিয়ে করতে চলেছেন তিনিও কি জানতেন না?
আরও পড়ুন: লি দক্ষ হলে থাকা উচিত ভারতীয় দলে
আনন্দবাজার-কে সানিয়া বললেন, ‘‘জানতাম না। আমি ওদের দু’জনকেই ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। ওদের বিয়ের খবরটা খুব মিষ্টি একটা চমক ছিল আমার জন্য। ওরা দু’জনেই খুব ভাল মানুষ। আমি ওদের জন্য খুব খুশি। ওদের বিবাহিত জীবন খুব সুখের হোক।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ওরা যে বিয়ে করবে সেটা তো ঠিকই ছিল। দেশে বিয়ে করলে প্রচুর হইচই হবে। অনেক কিছু সামলাতে হবে। সেটা ধরে নিয়েই ওরা ইতালিতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে যাই হোক না কেন মিডিয়ার মুখোমুখি এক দিন তো হতেই হবে ওদের।’’ তবে ২১ ডিসেম্বর দিল্লিতে বিরুষ্কার বিয়ের রিসেপশনে হয়তো থাকতে পারছেন না তিনি। বললেন, ‘‘জানি না থাকতে পারব কি না। আমি ২১ ডিসেম্বরই দুবাইয়ে যাচ্ছি।’’
বীরুষ্কার ব্যক্তিগত জীবনের মতো সানিয়ার কেরিয়ারেরও এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় চলছে। মাস দুয়েক চোটের জন্য খেলেননি। সামনেই তো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। সেখানে খেলবেন? ভারতীয় টেনিসের রানি বললেন, ‘‘আমার ডান পায়ের হাঁটুতে চোট রয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, মাস দুয়েক বিশ্রাম নিতে। কিন্তু বিশ্রাম নিয়েও ব্যথা কমেনি। আমি সোজা হাঁটতে পারছি। কিন্তু খেলতে গেলে ব্যথা হচ্ছে। তাই অস্ত্রোপচার বা, কয়েকটা ইঞ্জেকশন নিয়ে ব্যাথাটা কমানোর চেষ্টা করতে হবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘তবে যাই হোক, মাস দুয়েকের আগে আমি কোর্টে ফিরতে পারছি না। তাই অস্ট্রেলীয় ওপেনে নিশ্চিত ভাবেই নামতে পারব না।’’
তবে ২০১৮-র এপ্রিলে, কমনওয়েলথ গেমস আর অগস্টে এশিয়ান গেমসে নামার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। ‘‘টেনিস প্লেয়ার হিসেবে কখন কেমন থাকি সেটা তো আগাম বলা সম্ভব নয়। তবে আশা করছি ততদিনে ফিট হয়ে যাব।’’
কথা বলতে বলতেই খুদে ভক্তদের হাসতে হাসতে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন সানিয়া। ভক্তদের ক্রমাগত আবদারেও এতটুকু বিরক্তি নেই। নিজের প্রথম টেনিস র্যাকেট ধরার কথাও কি কোথাও মনে পড়ে যাচ্ছিল? ভারতীয় টেনিসের ‘গ্ল্যামার গার্ল’ বললেন, ‘‘তখন আমার ছ’বছর বয়স। কোচ তো নিতেই চাইছিলেন না আমাকে। বলছিলেন আমি খুবই ছোট। মা-কে রীতিমতো জোর করতে হয়েছিল। অনেক করে বলার পরে তিনি রাজি হলেন। তার এক মাস পরে উনি মা-কে ফোন করে আমার খেলা দেখতে আসতে বলেন। উনি বলেছিলেন, ছ’বছর বয়সে কাউকে এত ভাল টেনিস খেলতে দেখেননি।’’
সেই খুদে সানিয়া থেকে আজকের ভারতীয় টেনিসের রানি, পথটা সোজা ছিল না, বহু বাধা পেরোতে হয়েছে তাঁকে। এ বার চোটের ধাক্কা পেরিয়ে রজার ফেডেরারের মতো প্রত্যাবর্তন ঘটাতে চান তিনি কোর্টে। সানিয়া বলেন, ‘‘কেরিয়ারে ১৫ বছর কাটানোর পরে কোর্ট থেকে কয়েক মাস দূরে থাকাটা বড় ব্যাপার নয়। ফেডেরারকে দেখুন। ছ’মাস পরে কোর্টে ফেরার পর থেকে একটাও ম্যাচ কিন্তু হারেনি। আশা করছি আমার ক্ষেত্রেও সে রকমই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy