Advertisement
E-Paper

ফাইনাল নিয়ে সতীর্থদের আগাম সতর্ক করছেন ‘আগ্রাসী’ কোহালি

এই বার্মিংহামেই পাক ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান শুরু হয়েছিল বিরাটদের। বৃহস্পতিবারের বাংলাদেশের মতো সে দিনও পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০৪:৫৩
উৎসব: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ ধরে বিরাট কোহালির উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার এজবাস্টনে। ছবি: টুইটার

উৎসব: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ ধরে বিরাট কোহালির উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার এজবাস্টনে। ছবি: টুইটার

বাংলাদেশ বধ করে পাকিস্তানকে হুঙ্কার নয়। বরং পাকিস্তান নিয়ে প্রশংসা শোনা গেল বিরাট কোহালির মুখে।

এই বার্মিংহামেই পাক ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান শুরু হয়েছিল বিরাটদের। বৃহস্পতিবারের বাংলাদেশের মতো সে দিনও পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। প্রথম ম্যাচে হারের পরে পাকিস্তানকে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেনি। রামিজ রাজার মতো প্রাক্তন অধিনায়ক দাবি তুলেছিলেন, পাক ক্রিকেটে আমূল পরিবর্তন দরকার। এ দিন শোনা গেল, ফাইনালে উঠে পাকিস্তানের ক্রিকেটারেরা নাকি ড্রেসিংরুমে বলেছেন, শাট আপ রামিজ রাজা।

কিন্তু সরফরাজ আমেদ-দের ফাইনালের প্রতিপক্ষের মধ্যে কোনও রামিজ রাজা নেই। বরং যে ভাবে পাকিস্তান দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে টুর্নামেন্টে ফিরে এসেছে, তাতে মুগ্ধ ভারত অধিনায়ক। প্রথমে পাক ম্যাচ নিয়ে তিনি মুখ খুলতে চাননি। সাংবাদিক সম্মেলনের শেষের দিকে ফের প্রশ্ন হওয়াতে কোহালি বলে দিলেন, ‘‘আমি পাকিস্তানের পারফরম্যান্স দেখে খুবই প্রভাবিত। দারুণ একটা টুর্নামেন্ট খেলছে ওরা!’’

কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার আগে ক্রিকেটীয় সৌজন্য কখনও হারাননি। রবিবারের ফাইনালও মনে হচ্ছে ব্যতিক্রম হবে না। ‘‘পাকিস্তান আমাদের চ্যালেঞ্জ জানাবে,’’ বলে দিচ্ছেন তিনি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হাত ধরে আইসিসি ইভেন্টের এক দিনের টুর্নামেন্টে যে বিবর্তন শুরু হয়েছিল, সেই পরম্পরা অধিনায়ক কোহালিও ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দেখালেন। এ বার নিয়ে গত সাত বছরে সাতটি আইসিসি-র বিশ্বমানের ইভেন্টের চারটিতে ফাইনাল খেলছে ভারত।

বাংলাদেশ তেমনই উপমহাদেশের নতুন শক্তি হিসেবে উত্থান ঘটিয়েও আইসিসি ইভেন্টে সেই পিছিয়েই থাকল। ২০১৫ বিশ্বকাপের মতোই ভারতের বিরুদ্ধে ভাল শুরুর প্রতিশ্রুতি জাগিয়েও রাস্তা হারিয়ে ফেলল। ২৫তম ওভারে ১৪২-২। দেখে মনে হচ্ছিল, তামিম ইকবাল এবং মুশফিকুর রহিম ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে চলে যাবেন। কিন্তু কোহালির ভারত মাটি কামড়ে পড়ে রইল। পার্টটাইম বোলার কেদার যাদবের স্পিনের বিরুদ্ধে অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে ডুবলেন তামিম-রা। যে ভারতকে একটা সময় বেশ নেতিয়ে পড়া মনে হচ্ছিল, তারাই চনমনে হয়ে উঠল তামিম এবং মুশফিকুরের উইকেট তুলে। আগ্রাসী হয়ে উঠলেন অধিনায়ক কোহালি। এর পর বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরফি মর্তুজা ব্যাট করতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বাউন্সার বৃষ্টিতে ভরিয়ে দিলেন দুই পেসার যশপ্রীত বুমরা এবং ভুবনেশ্বর কুমার। এক বার মাশরফির সঙ্গে কোহালির তর্কাতর্কি হল। দ্রুতই অবশ্য দুই অধিনায়ক মিটমাট করে নিলেন।

গত কাল সন্ধের দিকে বার্মিংহামের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছিল রবীন্দ্র জাডেজা-কে। দেশের মতো এখানে তাঁকে ধাওয়া করারও কেউ নেই। এ দিন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহালি-রা যেন সেই মেজাজে রানটা তুলে দিলেন। এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম আট হাজার রান হয়ে গেল বিরাটের।

অস্ত্রোপচারের পরে রোহিত শর্মাকে নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় তৈরি হয়েছিল। তিনি পুরোপুরি ফিট নেই। সেই কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে। সংশয় ছিল, আগের সেই ছন্দময় রোহিতকে এই টুর্নামেন্টে দেখা যাবে কি না। যাবতীয় সংশয়ের অবসান ঘটল ১২৯ বলে ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে। ‘‘আমি ভাল টাচে ছিলাম। লক্ষ্য ছিল বড় একটা ইনিংস। টিম যে ম্যাচ জিতল তাতে অবদান রাখতে পেরেছি বলেই আমি খুশি,’’ বললেন রোহিত।

অধিনায়ক কোহালি ফিরে গেলেন তাঁর পুরনো ওয়ান ডে মেজাজে। ৭৮ বলে ৯৬ নট আউট। স্ট্রাইক রেট ১২৩.০৭। ম্যাচের সেরা রোহিতও সেটাই বলে গেলেন। ‘‘দেখে মনে হচ্ছিল, বিরাট যেন আগের রাত থেকে ব্যাট করছিল। অসাধারণ নেতৃত্বও দিল।’’ ২৬৪ তাড়া করতে নেমে ওপেনিং জুটিতেই উঠে গিয়েছিল ৮৭। তখনই ম্যাচের ভবিতব্য ঠিক হয়ে যায়।

এজবাস্টনে এ দিন চড়া রোদ আর গরম ছিল। কিছুটা উপমহাদেশীয় আবহাওয়া। আদর্শ ব্যাটিং উইকেট। বাংলাদেশ যে ব্যাটিংয়ের জন্যই ডুবল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কোহালিও বলে গেলেন, ‘‘এই পিচে ২৬৪ রান তুলে জেতা কঠিন।’’ শিখর আউট হওয়ার পরে তিনি এবং রোহিত দেখিয়ে গেলেন, এই পিচে সেট হয়ে উইকেট দেওয়াটাই ক্রাইম।

মাশরফি মর্তুজা বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুবই সম্মানীয় এক চরিত্র। তবু হারের পর কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হল। যেমন, ২০১৯ বিশ্বকাপে কি আপনি খেলবেন? নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন? মাশরফি বললেন, ‘‘এটা নিয়ে এখনও ভাবার সময় পাইনি। ভাবলে জানাব।’’

অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হেরে একই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। রান না পেয়ে কোহালিকে দেখতে হয়েছিল, দেশের জনতা তাঁর বান্ধবীর পোস্টার পোড়াচ্ছে। উপমহাদেশের ক্রিকেট। জিতলে যেমন ফুলের মালা পরাবে, হারলে তেমনই কাঁটায় রক্তাক্ত করবে!

Virat Kohli Final Pakistan বিরাট কোহালি সরফরাজ আমেদ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ICC Champions Trophy 2017 Champions Trophy Cricket Champions Trophy Final India vs Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy