শিখর ধবন
টিমকে যে ভাল স্টার্ট দিচ্ছে তা-ই নয়, মিডল অর্ডারের উপর চাপটাও একেবারে পড়তে দিচ্ছে না। বহু দিন পর শিখরকে দেখে মনে হচ্ছে ও যতটা আগ্রাসী, ততটাই মজবুত ওর টেকনিক। ওপেনার রান না পেলে কী হয়, সেটা গত ত্রিদেশীয় সিরিজের স্কোরকার্ড খুললেই বোঝা যাবে। ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টির অলিখিত নিয়মই হল, টিমের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের একজনকে সেট হয়ে প্রায় পুরো পঞ্চাশ ওভার টানতে হবে। তা হলেই টিম শেষ পর্যন্ত তিনশো-সাড়ে তিনশোর কথা ভাবতে পারবে। সেখানে বিশ্বকাপের শুরু থেকে পরপর সেঞ্চুরি আর বড় রান করে প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই টিমকে তিনশো তুলে ফেলার জমিটা দিয়ে যাচ্ছে।
বিরাট কোহলি
নামটা তুলতে দেখে অনেকেই ভাববেন, ছেলেটা কাপে এখনও তেমন দুর্ধর্ষ কিছু করেনি। তা হলে হঠাৎ ছয় নায়কের মধ্যে কেন? আসলে বিরাট নিজের ক্রিকেটকে এমন উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছে যে, ও সেঞ্চুরি করলে মনে হয় ঠিক আছে। এটা ওর করারই কথা ছিল। ষাট বা সত্তর হলে সেটা চলনসই। আর তিরিশ করলে ফ্লপ। এটা ঠিক যে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির চেয়ে বেশি তিরিশ-চল্লিশ করছে। হাফসেঞ্চুরিও করছে মাঝেমধ্যে। কিন্তু তাই বলে খারাপ ফর্মে, এমনটা মোটেই নয়। বরং খুবই ভাল ব্যাট করছে ও। যতক্ষণ উইকেটে থাকছে, প্রতিপক্ষ ভয়ে-ভয়ে থাকছে যে এই বোধহয় ঠ্যাঙানো শুরু করল! আর শুধু ওর ব্যাটিংকে দেখলে তো হবে না। ওর ফিল্ডিং, ওর সহ-অধিনায়কত্ব সব বিচার করতে হবে। বিরাট ছাড়া ছয়ে ছয়ের ছয় নায়ক নির্বাচন কখনও সম্ভব নাকি?
মহম্মদ শামি
বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিং নয়, টিমের বোলিং নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল আমার। আসলে ওয়ান ডে-র নিয়ম বদলে যা দাঁড়িয়েছে, তাতে শুরুতে উইকেট না বার করতে পারলে আপনি গেলেন। প্রতিপক্ষ প্রথম দিকটা দেখে দেখে খেলে দেবে। উইকেট হাতে রাখবে। তার পর শেষ পনেরো ওভারে এমন মারবে যে ম্যাচ হাতের বাইরে চলে যাবে। শামি সেটা হতে দিচ্ছে না। ভাল গতিতে বলটা করছে। উইকেট নিচ্ছে। ভারতের পারফরম্যান্সকে যে এত ঝকঝকে দেখাচ্ছে, তার কারণ শামির নেতৃত্বে ভারতীয় বোলিংয়ের এমন অসাধারণ হয়ে ওঠা। টুর্নামেন্টের এখনও পর্যন্ত সেরা দু’টো টিম— নিউজিল্যান্ড আর ভারত দু’টো টিমই কিন্তু নতুন বলে শুরুর দিকে পরপর উইকেট তুলে বিপক্ষকে ঘায়েল করছে।
মোহিত শর্মা
দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেনে ওর প্রসঙ্গে ঢুকব। দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে স্টেইন-মর্কেল আছে। ওরা বেশির ভাগ সময়ে রান সে ভাবে দিচ্ছে না। উইকেটও তুলছে। কিন্তু তার পরেও দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিংকে অতটা ঝাঁঝালো মনে হচ্ছে না কারণ ভাল তৃতীয় সিমারের অভাব। আর এখানেই ভারতীয় টিমে মোহিতের গুরুত্ব। শামি-উমেশ প্রথমে যে চাপটা তৈরি করছে প্রতিপক্ষ ব্যাটিংয়ের উপর, মোহিত সেটা থার্ড সিমার হিসেবে ধরে রাখছে। বৈচিত্র আছে, মাঝেমধ্যে বাউন্সার দিয়ে ব্যাটসম্যানকে চমকে দিচ্ছে। আর হ্যাঁ, উইকেটটাও তুলছে নিয়ম করে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন
সম্ভবত ক্রিকেটজীবনের সেরা ফর্মে। নিজের বোলিং অনেকটাই পাল্টে ফেলেছে অশ্বিন। আগে ক্যারম বল বা দুসরার দিকে যেত। এখন দেখছি অফস্পিনটাই মন দিয়ে করছে শুধু। বলের গতিটাও কমিয়ে ফেলেছে। মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট নেওয়ার ওকেই সেরা লোক ধরা হয়। সেই আস্থার মর্যাদা দিচ্ছে অশ্বিন।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
কাপ শুরুর আগে কয়েকটা আড্ডায় একটা কথা বারবার বলতাম। ভারত বিশ্বকাপে কেমন করবে, সেটা দাঁড়িয়ে থাকবে ফিনিশার ধোনি কেমন করে, তার উপর। টিমে আরও ফিনিশার আছে, কিন্তু ওর মতো একজনও নেই। আরও একটা কথা বলতাম, কাপ সেই টিমই জিতবে যার অধিনায়ক আক্রমণাত্মক। আর ক্যাপ্টেন হিসেবে আগ্রাসনটা কোন পর্যায়ে এখন নিয়ে গিয়েছে ধোনি! বোলিং চেঞ্জ থেকে শুরু করে চাপের মুখে ব্যাট হাতে টিমের কাছে উদাহরণ হিসেবে নিজেকে পেশ করা— কোনটা করছে না ধোনি? সোজা কথায়, ভারত যেমন পুরনো ফিনিশার ধোনিকে পাচ্ছে, আবার মারাত্মক আগ্রাসী ক্যাপ্টেন ধোনিকেও পাচ্ছে। যে ডেথে কী হবে না ভেবে, বিপক্ষকে বেকায়দায় দেখলেই তার ঘাড়ে ক্লোজ ইন ফিল্ডার তুলে আরও একটা স্পেলে নিয়ে আসবে টিমের সেরা বোলারকে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে নতুন নিয়মে এখন আর বাঁচার কথা ভাবলে চলে না। বিপক্ষকে মারার কথা ভাবতে হয়। দশটা উইকেট তোলার কথা ভাবতে হয়।
পরিষ্কার বলছি, কাপ জিততে গেলে এই দুই ধোনিকেই এমন আগুনে ফর্ম রেখে যেতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy