Advertisement
২১ মে ২০২৪
ইউরোতেও হয়তো লো-র সংসারে হর্ন

গম্ভীরদের মন থেকে হার শব্দটা মুছতে চেষ্টা করব

জীবনে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় যাঁদের, ভদ্রলোকের পরিচয় তাঁদের কাছে নতুন করে বলার দরকার পড়বে না। বিশ্বের সমস্ত দুর্গম জায়গা, দারুণ সব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মালিক তিনি। পাশাপাশি আবার বিভিন্ন টিমকে মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করার কাজটাও করে থাকেন। সেটা গ্যারি কার্স্টেনের বিশ্বজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট টিমই হোক, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি-ই হোক বা কেকেআর। এহেন মাইক হর্ন আসন্ন আইপিএলে কেকেআর সহ নানা ব্যাপারে শুক্রবার যা বললেন আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে...জীবনে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় যাঁদের, ভদ্রলোকের পরিচয় তাঁদের কাছে নতুন করে বলার দরকার পড়বে না। বিশ্বের সমস্ত দুর্গম জায়গা, দারুণ সব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মালিক তিনি। পাশাপাশি আবার বিভিন্ন টিমকে মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করার কাজটাও করে থাকেন। সেটা গ্যারি কার্স্টেনের বিশ্বজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট টিমই হোক, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি-ই হোক বা কেকেআর। এহেন মাইক হর্ন আসন্ন আইপিএলে কেকেআর সহ নানা ব্যাপারে শুক্রবার যা বললেন আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে...

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

প্রশ্ন: কেকেআর সংসারে আপনার একটা নতুন নাম চালু হয়েছে জানেন?

হর্ন: নো, নো, নো। জানি না (হাসি)। কী বলছে?

প্র: আপনাকে বলা হচ্ছে, মিস্টার চ্যাম্পিয়ন্স লাক। আপনি যে বছর টিমের সঙ্গে থাকেন, কেকেআর জেতে। যে বছর থাকেন না, টিম পারে না।

হর্ন: ওহ। তা আমি সত্যিই জানি না লাক-টাক আমি আনি কি না। আসলে ভাগ্যকে তো খুঁজে বার করতে হয়। খুঁজতে হয় খাটনির মধ্য দিয়ে। আমি কেকেআরের ছেলেদের কাছে শুধু নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। অমানুষিক পরিশ্রমের কথা বলি। বলি, আমি পারলে যে কোনও লোক পৃথিবীতে পারবে। আর ওটা ভাল বোঝাতে পারি বলে, ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা দিতে পারি বলে হয়তো সবাই ভাবছে আমি টিমের চ্যাম্পিয়ন্স লাক!

প্র: প্লেয়ারদের আপনি কী বলেন যে, গোটা বিশ্বজুড়ে সর্বত্র আপনার ডাক পড়ে?

হর্ন: বললাম যে, নিজের জীবনটাকে প্লেয়ারদের সামনে তুলে আনি। নিজের নানা মারাত্মক অভিজ্ঞতার গল্প শোনাই। আসলে আমি কখনও কোনও খেলাধুলোর মধ্যে ঢুকি না। পাঁচ বছর আগে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী টিমটার সঙ্গে যখন আমি ছিলাম, সচিন তেন্ডুলকরকে আমি ক্রিকেট শেখাতে যাইনি। বরং ক্রিকেটের বাইরে একটা বিকল্প খুঁজে দিতে চেয়েছি। ক্রিকেটারকে ক্রিকেট কী শেখাবেন আপনি? বরং তাকে জীবন শেখানো যায়। নিজের জীবনের কথা বলা যায়। শেষ যেখান থেকে ঘুরে এলাম, ইচ্ছে আছে তার কিছুটা কেকেআরের ক্রিকেটারদের সঙ্গে এ বার শেয়ার করার। আসলে কী জানেন, মানুষের পারফরম্যান্সের সঙ্গে যদি জীবনকে মেশানো যায়, তবেই জেতা সম্ভব। আমি ঠিক সেটাই করার চেষ্টা করি।

প্র: কেকেআরে আপনি দু’দিন আছেন? কী বললেন? এ বারের সেশনে কী রাখছেন?

হর্ন: কেকেআরে একটা সুবিধে হল, টিমটার উপর চাপ এমনিই খুব কম। শাহরুখ (খান), বেঙ্কি (মাইসোর), কালিস মিলে একটা অসাধারণ টিম পরিবেশ তৈরি করে রেখে দিয়েছে। যা কখনওই টিমের উপর চাপ নামক আতঙ্ককে ঘেঁষতে দেয় না। কেকেআরের ক্রিকেটাররা খেলে উপভোগ করার জন্য। আমিও এখানে এলে তাই ওই লাইনে হাঁটি। দেখতে চেষ্টা করি যে, ওরা যেন জয়কে উপভোগ করে। আর আমি যদি ক্রিকেটারদের মনে জেতার এই আনন্দকে ইনজেক্ট করে দিতে পারি, তা হলে বলব ঠিকঠাক দিকে এগোচ্ছি।

প্র: একটু সহজ করে বলুন।

হর্ন: সহজে বললে, আমি এ বার চেষ্টা করব প্লেয়ারদের মন থেকে হার নামক অপশনটাকেই মুছে দিতে!

প্র: সেটা সম্ভব নাকি?

হর্ন: কে বলল সম্ভব নয়। টিমটাকে দেখুন। গোতির (গৌতম গম্ভীর) মতো দারুণ লিডার আছে। মণীশ পাণ্ডে, রবিন উথাপ্পার মতো গেমচেঞ্জার আছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, টিমটার ট্রফি জিততে কোনও মহাতারকা দরকার পড়ছে না। এরা পারবে না তো আর কে পারবে? টিমটাকে এখন দারুণ ভাল থেকে অসাধারণ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

প্র: প্লেয়াররা গত দু’দিনে কী কী টিপস নিলেন আপনার থেকে?

হর্ন: অনেক কিছু। ক্রিকেটাররা যে সব কথা কোচ বা অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারে না, সেগুলোই করছে আমাকে। যেমন চাপ কী ভাবে সামলাব? নিরাপত্তাহীনতা কী ভাবে ম্যানেজ করব? আমি নিজেকে দেখাচ্ছি। বলছি, অন্য কাউকে দেখতে হবে না। তোমার সামনের দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখো। সে পেরেছে। কারণ সে ভেবেছে যে পৃথিবীতে একমাত্র সে-ই কাজগুলো করতে পারে।

প্র: আপনি তো জার্মানি টিমের সঙ্গে ছিলেন গত বিশ্বকাপে। ইউরোয় আবার যোগ দিচ্ছেন নাকি?

হর্ন: মোস্ট প্রোব্যাবলি। ইউরোতে হয়তো টিমটার সঙ্গে থাকছি। তবে একশো শতাংশ বলতে পারছি না। কারণ আমার একটা অভিযানে যাওয়ার আছে। কবে, শিওর নয়। আগামী দু’বছর আমাকে পাওয়া যাবে না।

প্র: জার্মান টিমেও আপনি, এখানেও। জোয়াকিম লো-র টিমের কোন জিনিসটা আপনি কেকেআরে আমদানি করতে চান?

হর্ন: ওদের দর্শনটা যদি আমদানি করা যায়, কেকেআর কেন যে কোনও টিমের পক্ষে দুর্দান্ত হবে। ওরা বলত, উইনিং ইজ নট দ্য এভরিথিং, বাট দ্য ওনলি থিং। জার্মান টিমে সবাই জানত কার কোনটা কাজ। কার থেকে কতটা প্রত্যাশা। লো দেখতাম, কারও থেকে প্রত্যাশার চেয়ে একফোঁটা বেশি চাইত না। আবার কমও নয়। এটা হলে, প্লেয়ারের উপর থেকে চাপ এমনিই চলে যাবে। তুমি যদি প্লেয়ারকে বলো, তুমি ততটাই পারফর্ম করো যতটা তুমি পারবে, তা হলে চাপ অনেক কমে গেল। চ্যাম্পিয়ন টিম এ ভাবে ভাবে। চ্যাম্পিয়ন টিম কখনও প্লেয়ারের থেকে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করে না। কারণ তাতে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা ছড়ায়।

প্র: আর কোনও মিল? বাড়াবাড়ি শোনালেও দু’টো টিমে কোনও মিল চোখে পড়েছে?

হর্ন: চোখে পড়েছে মানে? কেকেআরকে দেখলে তো আমার লো-র জার্মানির কথা মনে পড়ে! জার্মান টিমে কোনও মেসি-রোনাল্ডো আছে? ওরা ও সব এক ব্যক্তিত্বের ব্যাপারস্যাপারে বিশ্বাসই করে না। ওরা মনে করে, ব্যক্তি একটা ম্যাচ জেতাতে পারে। কিন্তু টুর্নামেন্ট বার করে টিম। ওরা এই টিম সংস্কৃতিটা সব সময় ধরে রাখে। যেখানে যায় একসঙ্গে। খাওয়াদাওয়া, সেটাও। কেকেআরেও কিন্তু এগুলো আছে। জার্মানির যেমন কাপ জিততে মেসি-রোনাল্ডো লাগে না, কেকেআরেরও কিন্তু দু’টো আইপিএল জিততে কোনও গেইল-কোহালি-এবির দরকার পড়েনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ipl 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE