উড়ন্ত: মঙ্গলবার রাতে এ ভাবেই দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে উঠেছিলেন হুগো লরিস। বেলজিয়ামের একের পর এক আক্রমণ রুখে দেন তিনি। ছবি: গেটি ইমেজেস
আধুনিক ফুটবলে গোলকিপিংয়ের সংজ্ঞাটাই বদলে গিয়েছে নাটকীয় ভাবে। আগে মনে করা হত, যিনি যত গ্রিপিংয়ে (বল ধরা) দক্ষ, তিনি তত ভাল গোলকিপার। অথচ এখন অধিকাংশ গোলকিপারই গ্রিপ করতে চান না। পাঞ্চ বা ফিস্ট করে কোনও মতে বল বিপন্মুক্ত করার চেষ্টা করেন। ব্যতিক্রম হুগো লরিস।
ফ্রান্সের গোলকিপারকে যত দেখছি, তত মুগ্ধ হচ্ছি। মস্তিষ্ক যেমন আমাদের পরিচালনা করে, গোলকিপারের কাজটাও অনেকটা সে রকম। অনেকের ধারণা, গোলকিপারেরা নাকি একটু পাগলাটে হন। জানি না, এই ভ্রান্ত ধারণার কারণটা কী। আমি গোলকিপার ছিলাম। তাই খুব ভাল করেই জানি, মাথা ঠান্ডা না থাকলে তিন কাঠির নীচে দাঁড়িয়ে সফল হওয়া যায় না। কারণ, অন্যান্য পজিশনের ফুটবলারেরা ভুল শোধরানোর তা-ও একটা সুযোগ পান। গোলকিপারের সেটা নেই। একটা সামান্য ভুল মানেই সব শেষ। নিজের দলের সতীর্থরাই ভুল হলে অনেক সময়ে ছেড়ে কথা বলবেন না।
আমি বরাবরই ডাকাবুকো ধরনের। মাঠের বাইরে কেউ আমাকে অপমান করলে কখনও ছেড়ে কথা বলিনি। কিন্তু মাঠে নামলেই আশ্চর্যজনক ভাবে বদলে যেতাম। গ্যালারি থেকে যতই গালাগালি করুক সমর্থকেরা, আমি কখনও প্রতিবাদ করিনি। এই বিশ্বকাপে গোলকিপার হিসেবে যাঁরা নজর কেড়েছেন, ম্যাচের সময় তাঁদের প্রত্যেকের মাথা বরফের মতো ঠান্ডা থাকে দেখছি।
আমি অবশ্য সবার চেয়ে এগিয়ে রাখছি লরিসকে। কারণ— এক) গ্রিপিং অসাধারণ। দুই) একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে রীতিমতো দুর্ভেদ্য। তিন) পিছন থেকে পুরো দলটা উদ্বুদ্ধ করেন। মঙ্গলবার রাতে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ফ্রান্স বনাম বেলজিয়াম ম্যাচের পরে পরিসংখ্যান ঘাঁটছিলাম। দেখলাম, বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচে লরিস নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন ১১টি। বল বাঁচানোর ক্ষেত্রে সাফল্যের হার ৭৩.৩ শতাংশ। শেষ দু’টো ম্যাচে গোল না খেয়ে মাঠ ছেড়েছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে পরিসংখ্যানের বিচারে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন কলম্বিয়ার গিজেরমে ওচোয়া। তিনি চার ম্যাচে ২৫টি সেভ করেছেন। সাফল্যের হার ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে বেলজিয়ামের থিবো কুর্তোয়া। পাঁচ ম্যাচে সেভ ২২টি। সাফল্যের হার ৭৮.৬ শতাংশ।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তা হলে কেন এগিয়ে রাখছি লরিসকে? কুর্তোয়া অসাধারণ গোলরক্ষক। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের ম্যাচে স্যামুয়েল উমতিতি ওঁর ভুলেই গোল করে এগিয়ে দেন ফ্রান্সকে। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যানের ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করেন ফরাসি ডিফেন্ডার। কুর্তোয়ার উচিত ছিল ছয় গজ বক্সের সামনে উমতিতি হেড করার আগেই বলটা ধরে নেওয়া। অথচ অবাক হয়ে গেলাম দেখে, বেলজিয়াম গোলকিপার এগোলেনই না। ঠিক উল্টো ছবি দেখলাম ফ্রান্সের পেনাল্টি বক্সে। বেলজিয়ামের অধিকাংশ কর্নারই গোললাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসে ধরার চেষ্টা করেছেন লরিস। ওঁর উচ্চতা কিন্তু কুর্তোয়ার চেয়ে কম। লরিসের উচ্চতা ছয় ফুট এক ইঞ্চি। বেলজিয়াম গোলকিপার সাড়ে ছয় ফুটের উপরে। কিন্তু দুর্দান্ত অনুমান ক্ষমতা ও গতিতে এগিয়ে ছিলেন লরিস। গোলকিপারদের তো ফিটনেসই আসল। তা হলে কেন গতির কথা বলছি? গতিও গোলকিপারদের অন্যতম অস্ত্র। তার কারণ, একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে আসতে হয় গোলকিপারদের। মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে জায়গা বদলাতে হয়। সব গোলকিপারই গতি বাড়ানোর জন্য বিশেষ অনুশীলন করেন। আমি নিজেও করতাম। যদি শুনি, এখনকার গোলকিপারেরা গতি বাড়ানোর জন্য ব্যক্তিগত ট্রেনার রেখেছেন, অবাক হব না। আর ফিটনেস তো সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকতেই হবে।
৩১ বছর বয়সি লরিসের ফিটনেস নিয়ে কোনও কথাই হবে না। যে ভাবে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে শরীর শূন্যে ভাসিয়ে একের পর এক নিশ্চিত গোল বাঁচালেন, অনবদ্য। তাই উমতিতি সেরার পুরস্কার পেলেও আমার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হুগো লরিস-ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy