Advertisement
E-Paper

টোনির গোলে উৎসব কলকাতার জার্মানদের

শনিবার রাতে চলে গিয়েছিলাম টালিগঞ্জে। রিজেন্ট ফ্রেন্ডস ক্লাবের লনে বসে জার্মানি বনাম সুইডেন ম্যাচটা দেখার জন্য। বিশাল পর্দা টাঙিয়ে গোটা পাড়াকে খেলা দেখাচ্ছে ওই ক্লাবের ছেলেরা। সঙ্গে টিভির ধারাভাষ্যও চলছে মাইকে। যা শুনছে গোটা পাড়া। বিশ্বকাপ জ্বর পাড়া জুড়ে।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ০৬:১২
উচ্ছ্বাস: টালিগঞ্জের ক্লাবে চলছে জার্মানি ম্যাচ। হাজির সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

উচ্ছ্বাস: টালিগঞ্জের ক্লাবে চলছে জার্মানি ম্যাচ। হাজির সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

বিশ্বকাপে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে পানামা, ইরান প্রতিটি দলের খেলাই মন দিয়ে দেখছি। গত বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি মেক্সিকোর বিরুদ্ধে হারার পরে মনে হয়েছিল, ওয়াকিম লো-র দলের সেই হার না মানা মনোভাবটাই উধাও। কিন্তু শনিবার রাতে সুইডেনের বিরুদ্ধে ম্যানুয়েল নয়্যাররা পিছিয়ে গিয়েও শেষ মুহূর্তে যে নাটকীয় জয় ছিনিয়ে আনলেন, তা দেখে বুঝলাম, জার্মানি আছে জার্মানিতেই।

শনিবার রাতে চলে গিয়েছিলাম টালিগঞ্জে। রিজেন্ট ফ্রেন্ডস ক্লাবের লনে বসে জার্মানি বনাম সুইডেন ম্যাচটা দেখার জন্য। বিশাল পর্দা টাঙিয়ে গোটা পাড়াকে খেলা দেখাচ্ছে ওই ক্লাবের ছেলেরা। সঙ্গে টিভির ধারাভাষ্যও চলছে মাইকে। যা শুনছে গোটা পাড়া। বিশ্বকাপ জ্বর পাড়া জুড়ে।

কলকাতা ময়দানে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ‘জার্মান’ বলা হয়। আর টালিগঞ্জের এই পাড়াও গিজগিজ করছে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকে। কয়েক জন জার্মান সমর্থকও পেয়ে গেলাম এখানে। যাঁরা ম্যাচটা দেখতে বসেছিলেন জার্মানির পতাকায় নিজেদের মুড়ে রেখে। ম্যাচের আগে তাঁরাই বলছিলেন, বায়ার্ন মিউনিখের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে জার্মানির থোমাস মুলারের ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলে যাওয়া ম্যাচটার কথা। যে ম্যাচ দেখেছিলাম ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে বসে।

নিজে ক্রিকেট খেললেও ফুটবলটা আমার দ্বিতীয় পছন্দের খেলা। স্কুলে আমি ফুটবলও খেলতাম। চার বছর ধরে তাই অপেক্ষা করি, বিশ্বসেরা ফুটবলারদের কাপ জেতার লড়াই দেখতে। বিশ্বকাপ আর বাঙালি তো বরাবরই মিশে গিয়েছে।

মনে পড়ে যাচ্ছে, ১৯৮৯-৯০ মরসুমে বাংলার হয়ে সেই ঐতিহাসিক রঞ্জি জয়ের একটা স্মৃতি। সেবার অধিনায়ক হিসেবে ফাইনালের আগের দিন বাংলা ড্রেসিংরুমে নিয়ে এসেছিলাম ফুটবল কোচ প্রদীপ (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়কে। উদ্দেশ্য, দলের উৎসাহ, অনুপ্রেরণার বাড়ানো। প্রদীপদা আমাদের ঘণ্টাখানেক নানা গল্প বলে গোটা দলকে তাতিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। যার বেশির ভাগটাই ছিল জার্মান ফুটবলের সব হার না মানার উদাহরণ। সুইডেনের বিরুদ্ধে জার্মানরা তাঁদের সেই চরিত্রটাই তুলে ধরলেন সোচির মাঠে।

সুইডেনের বিরুদ্ধে জার্মানদের লড়াই দ্বিতীয়ার্ধে দেখে মনে হচ্ছিল কোনও ‘থ্রিলার’ দেখছি। ওয়াকিম লো-র দলের বিরুদ্ধে স্ক্যান্ডানেভিয়ার এই দেশটির রণকৌশল ছিল প্রতি-আক্রমণভিত্তিক। ৪-৪-২ ছকে নিজেদের গোলের সামনে আট জনকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছিল সুইডরা। সামনে দুই আক্রমণ ভাগের ফুটবলার সেবাস্টিয়ান লারসেন এবং মার্কাস বার্গ। সুইডেনের ‘হলুদ প্রাচীরে’ (জার্সির রঙের জন্য) জার্মান আক্রমণ ধাক্কা খেলেই সেই বল ধরে প্রতি-আক্রমণে যাচ্ছিলেন লারসেনরা। এ ভাবেই শুরুতে জার্মান গোলমুখ খুলে ফেলেছিলেন মার্কাস বার্গ। যাঁকে বক্সের মধ্যেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন জার্মান ডিফেন্ডার আন্তোনিয়ো রুডিগার। কিন্তু রেফারি বা প্রযুক্তি এ ক্ষেত্রে কেন পেনাল্টির নির্দেশ দিলেন না, তা বুঝতে পারিনি। এর কিছু পরেই দুই জার্মান স্টপারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে ওলা তোইভননের সেই বুদ্ধিদীপ্ত গোল। কলকাতার ‘জার্মান’-দের জোশ তখন মিইয়ে গিয়েছে।

সোচির মাঠে শনিবার রাতে প্রথমার্ধটা যদি হয় সুইডেনের, তা হলে দ্বিতীয়ার্ধ পুরোপুরি জার্মানদের। এই ম্যাচ হারলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায়, এটাই যেন তাতিয়ে দিয়েছিল মুলারদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাহিনীর ক্ষিপ্রতা বোঝাতে ‘ব্লিৎজক্রিগ’ শব্দটা ব্যবহার করতেন জার্মানরা। যার বাংলা হতে পারে ঝটিকা আক্রমণ। সে ভাবেই শেষ ৪৫ মিনিট সুইডেনকে দুমড়ে দিলেন মারিয়ো গোমেজরা। এই আগ্রাসী ফুটবল খেলেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মার্কো রয়েসের গোল। আর ১-১ হতেই জার্মানির ‘প্রেসিং’ ফুটবলের সামনে পড়ে বড় বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়লেন সুইডরাও।

ম্যাচ শেষ হতে আট মিনিট বাকি। ঠিক তখনই চমক। জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে গেলেন জার্মান ডিফেন্ডার জেহোম বোয়াটেং। ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ড্র হচ্ছে ভেবে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছিলেন টালিগঞ্জের ক্লাবের সদস্যরাও। কিন্তু সংযুক্ত সময়ের একদম শেষ মুহূর্তে টোনি খোসের সেই অনবদ্য ফ্রি-কিক। যা রামধনুর মতো বাঁক খেয়ে গোলে ঢুকে গেল।

গোলটা এ দিন জার্মানি খেয়েছিল টোনি খোসের জন্য। শেষ বেলায় সেই টোনিই বিশ্বকাপে ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন জার্মানদের। অসাধারণ এক ‘থ্রিলার’ শেষ হল অনবদ্য এক গোল দেখে। কলকাতার জার্মানরাও উৎসব শুরু করে দিলেন ভোর রাতে।

Football FIFA World Cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ Germany
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy