স্যামুয়েল উমতিতির গোলে যখন ফ্রান্স ফাইনালে উঠছে তখন প্রেসবক্সে বেলজিয়ামের এক সাংবাদিক তীব্র ক্ষোভে বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘ক্যামেরুনের লোকটা দিদিয়ে দেঁশকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল এ বার।’’
ইংল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ চলার সময় লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ভাসমান প্রেস সেন্টার থেকে এক ইংরেজ সাংবাদিক রেডিওতে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন নাগাড়ে। হঠাৎ তাঁকে বলতে শুনলাম, ‘‘লুকা মদ্রিচ ফাইনালে তুলে দিল দলটাকে। ও দৌড়োচ্ছে ক্রোয়েশিয়া সমর্থকদের কাছে। যারা ওকে জেলে পুরতে চেয়েছিল।’’ ইংল্যান্ডের সমর্থক ওই ধারাভাষ্যকার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় যা বলে ফেললেন সেটা তো সত্যিই। স্লাভদের গৃহযুদ্ধের সময় ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান অধিনায়ককে চুক্তিতে ভুল তথ্য দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। দিনের পর দিন আদালতে গিয়ে নিজের বক্তব্য পেশ করতে হত লুকা মদ্রিচকে। যা ছিল যন্ত্রণার। অপমানের। তাঁকে জেলে পাঠানোর চেষ্টা হয়েছিল। ম্যাচের পর ইংল্যান্ডের এক সাংবাদিক প্রসঙ্গটা তুলতে গিয়েছিলেন মিক্সড জোনে। এমন কড়া চোখে তাকিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের মিডিয়ো যে, ওই সাংবাদিক চুপসে যান।
অলিম্পিক্সে প্রতিযোগী দেশগুলোর বাইরেও একটা দল থাকে। সম্বলহীন আধপেটা বা দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের টিম। জাতি দাঙ্গা, দেশ বনাম দেশের যুদ্ধে প্রাণ বাঁচিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসা প্রতিভাবানদের বঞ্চিত করে না অলিম্পিক্স সংগঠকরা। সেই প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া বস্তিতে যান কোচেরা। যোগ্যদের তুলে এনে ট্রেনিং দেন। নামান বিভিন্ন ইভেন্টে। ব্রাজিলের রিয়ো অলিম্পিক্সের সময় কথা বলতে গিয়ে দেখেছি তাঁদের যন্ত্রণা। অজানার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ার জীবন-মৃত্যু ছবি। কেউ চার-পাঁচ দিন সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে ভেলায় ভাসতে ভাসতে বেঁচে ফিরেছেন। রাস্তায় হারিয়েছেন স্বামী, সন্তান বা বাবা-মাকে। কারও চোখের সামনে তাঁর বাবাকে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। কঙ্গো, সিরিয়া, সার্বিয়া, ইজরায়েল, মায়ানমারের মতো দেশ থেকে অন্ধকারে থাকা মানুষগুলোকে অলিম্পিক্সের চোখ ধাঁধানো আলোর জগতে এসে বিব্রত, লাজুক দেখায়।