ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সিডনিতে এ বার পিঙ্ক টেস্ট। শনিবার নেটে ওয়াটসনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন পেসার। ছবি: গেটি ইমেজেস
প্রধান পেস অস্ত্রের চোট, আসন্ন টেস্টে অনিশ্চিত।
আর এক পেসার নিজের দেশের পিচ-চরিত্র নিয়ে নিজেই ধন্ধে।
অন্যতম অলরাউন্ডার ডুবে প্রয়াত সতীর্থের শোকে।
সব মিলিয়ে সিডনি টেস্ট শুরুর দিনতিনেক আগে ব্যাগি গ্রিনের রং যেন বেশ কিছুটা ম্লান।
কয়েক দিন আগেই মিচেল জনসন বলেছিলেন, টানা তিনটে টেস্টে লম্বা স্পেলে বল করে করে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। বলেছিলেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এবং কোচ ডারেন লেম্যান দু’জনকেই অনুরোধ করবেন, সিডনি টেস্টে যদি ছোট ছোট স্পেলে বল করতে পারেন। এ দিন তিনি জানিয়ে দিলেন, তাঁর হ্যামস্ট্রিংয়ের অবস্থা খুব ভাল নয়। বিশ্রাম দরকার। টিমের সঙ্গে এ দিন সিডনি মাঠে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ট্রেনিং সেশনেও যাননি জনসন। ৬ জানুয়ারি টেস্ট শুরুর কাছাকাছি সময়ে তাঁর হ্যামস্ট্রিং পরীক্ষা হবে। আপাতত অস্ট্রেলীয় শিবির জানিয়েছে, সিডনি টেস্টে জনসন অনিশ্চিত।
তবে জনসন নিয়ে অস্ট্রেলিয়া খুব বেশি চিন্তিত নয়। কারণ শেষ টেস্টের স্কোয়াডে মিচেল স্টার্ক এবং পিটার সিডল, দু’জনই রয়েছেন। তা ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে শুরু বিশ্বকাপের আগে দেশের প্রধান পেসারকে বিশ্রাম দিতে চাইবেন জাতীয় নির্বাচকেরাও। চলতি সিরিজে জনসন যে তাঁর চেনা গতিতে বল করতে পারছেন না, সেটাও একটা সূচক যে তাঁর বিশ্রাম দরকার।
জনসন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় তাঁর জায়গা নিতে মুখিয়ে রয়েছেন সিডল এবং স্টার্ক দু’জনেই। মেলবোর্ন এবং ব্রিসবেন টেস্ট থেকে বাদ পড়ে সিডল বিগ ব্যাশ খেলছিলেন। শুক্রবার তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সিডনিতে খেলার ডাক পেলে তিনি তৈরি আছেন। স্টার্ক আবার ২০১৩ ভারত সফরের পরে নিয়মিত টেস্ট দলে জায়গা পাননি। তিনিও বিগ ব্যাশ খেলছেন বলে ক্রিকেটের মধ্যেই আছেন। “জানি না বাকিরা কতটা ফিট। আমি সব সময়ই খেলার জন্য তৈরি। বিগ ব্যাশে আমি ভাল ফর্মেই ছিলাম। হালফিলে লাল বল হাতে পাই না, কিন্তু কুকাবুরা বল তো, তাই নিশ্চয়ই প্রথম দিকে সুইং করবে। পরের দিকে রিভার্সও করতে পারে,” বলেছেন স্টার্ক।
কুকাবুরা বল নিয়ে স্টার্ক যতটা নিশ্চিত, চলতি সিরিজে অস্ট্রেলীয় পিচ নিয়ে তাঁর সতীর্থ রায়ান হ্যারিস ঠিক ততটাই দুশ্চিন্তায়। গত গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড সিরিজে যে রকম উত্তেজক উইকেট পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, তার তুলনায় এ বারের পিচগুলো বড্ড বেশি ‘নিরীহ’ মনে হচ্ছে হ্যারিসের। চলতি সিরিজের সব পিচই ব্যাটিং সহায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছে, এমনকী গাব্বাও। যা নিয়ে অসন্তোষ দেখিয়েছেন জনসন। এ দিন হ্যারিসও বললেন, “পিচে গতি আর বাউন্স বেশি ছিল না। তিনটের মধ্যে দুটো টেস্টে রেজাল্ট হয়েছে, কিন্তু বোলার হিসেবে আমাদের একটু বেশি গতি আর বাউন্স পেলে ভালই হত। গত বছর তো সে রকমই উইকেট পেয়েছিলাম। এ বার সেটা না পাওয়া বেশ হতাশাজনক।” গত বার ভারত সফরে অস্ট্রেলিয়ার জন্য যে রকম পিচ তৈরি হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি আরও বলেছেন, “বলছি না প্রচণ্ড বাউন্সি উইকেট চাই। কিন্তু গত বার ভারতে যে রকম শকিং উইকেট পেয়েছিলাম, তাতে ওদের জন্য গ্রিন টপ রাখতে পারলে ভাল হত।”
তবে নিজেদের বোলিং নিয়ে বেশ খুশি হ্যারিস। বলেছেন, “আমাদের বোলিং আক্রমণ দারুণ। সিডনি টেস্টে সিডলকে পেলে ভাল হয়, কারণ ওই কম্বিনেশনটা সফল। জশ হ্যাজলউডও খুব ভাল খেলছে। অভিষেকেই পাঁচটা উইকেট পেয়েছে। মেলবোর্ন টেস্টের পরের দিকে বেশ ভাল গতিতে বল করছিল জশ। ভাবছিলাম, আমি যদি ওর মতো লম্বা হতাম, খুব ভাল হত। জশ লম্বা স্পেলে খুব কার্যকরী। এর সঙ্গে সিডলের অভিজ্ঞতা জুড়ে গেলে বোলিং আক্রমণ আরও ধারালো হয়ে যাবে।”
শেন ওয়াটসনের অবশ্য অত কিছু নিয়ে ভাবার অবস্থা নেই। তাঁর চিন্তার বেশির ভাগটা জুড়েই ফিল হিউজের ছায়া। এ দিন এসসিজিতে ঢোকার সময়ই দেখতে হয়েছে মাঠের ধারে রাখা সেই স্ট্রেচার, মাসখানেক আগে যাতে করে চিরতরে মাঠ ছেড়েছিলেন হিউজ। ম্যাচের সময় গ্যালারিতে থাকবেন হিউজ পরিবারও। শেফিল্ড শিল্ডের যে ম্যাচ হিউজের শেষ ম্যাচ ছিল, সেখানে ব্র্যাড হাডিন, ডেভিড ওয়ার্নার, নাথন লিয়ঁর সঙ্গে মাঠে ছিলেন ওয়াটসনও। “ফিলের শেষকৃত্যের আগে এক বার সিডনি এসেছিলাম। তার পর এই প্রথম এই মাঠে আসা। এখানে ফেরার একটুও ইচ্ছে ছিল না। জানি, মাঠে নামলেই সে দিনের দৃশ্যগুলো আবার চোখের সামনে ভেসে উঠবে,” বলছেন তিনি। শর্ট বল নিয়ে তাঁর যে একটা ভীতি তৈরি হয়েছিল, সেটা নিজেই স্বীকার করেছেন ওয়াটসন। তবে তাঁর বিশ্বাস, মেলবোর্ন টেস্টে হাডিন যে ভাবে পরপর বাউন্সারের মোকাবিলা করেন, সেই দৃষ্টান্ত তাঁকে সাহায্য করবে। তবে মাঠের পাশে রাখা ওই স্ট্রেচারে চোখ পড়লে কী হবে, জানেন না ওয়াটসন।
কে জানত, ২-০ সিরিজ জয়ের পরের টেস্টটাই যে অস্ট্রেলিয়ার কাছে সবচেয়ে কঠিন হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy