Advertisement
১১ মে ২০২৪
সৌরাশিসকেও দুসরা শেখাবেন মুরলী

আগ্রাসন-মন্ত্রে পেসারদের দীক্ষা দেবেন ওয়াকার

লর্ডসের ব্যালকনিতে জার্সি খুলে ওড়ানোর কালজয়ী দৃশ্যটা দেখতে দেখতে লজ্জায় হেসে ফেললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই। পাশে বসা ওয়াকার ইউনিস তখন বেশ সিরিয়াস।

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৪:১৭
Share: Save:

লর্ডসের ব্যালকনিতে জার্সি খুলে ওড়ানোর কালজয়ী দৃশ্যটা দেখতে দেখতে লজ্জায় হেসে ফেললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই। পাশে বসা ওয়াকার ইউনিস তখন বেশ সিরিয়াস।

বিজয় হাজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে লক্ষ্মীরতন শুক্লর সেই বিখ্যাত ‘মা কসম’ বলে চেঁচিয়ে আউটের আবেদন করার দৃশ্যটা পাক মহাতারকাকে বেশ আলোড়িত করল বলেই মনে হল। এ বার তিনি হেসে উঠলেন লক্ষ্মীর কাণ্ড দেখে।

‘ভিশন ২০২০’-র ঝাঁ-চকচকে উদ্বোধনের মঞ্চে বসে যা বললেন, সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে কড়া রোদে দাঁড়িয়ে বাংলার প্রতিভাবান পেসারদেরও একই কথা শোনালেন ওয়াকার, “এখানকার উইকেট পেস-বন্ধু না হলেই বা কী? তাই বলে পাকিস্তান থেকে বিশ্বসেরা পেসার উঠে আসেনি? ভারতের পেসাররাও কি বিশ্ব মাতায়নি? উইকেটটা আসল কথা নয়। পেস বোলিংয়ে আসল ব্যাপার হল, খিদে আর আগ্রাসী মানসিকতা। এই দুটো থাকলেই হাত থেকে বল বেরোয় গোলার মতো।” বাংলায় পেসার তৈরি করে তাঁদের এই মন্ত্রেই দীক্ষিত করতে চান ওয়াকার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তিন বছর হল অবসর নিলে কী হবে, মুরলীধরনের হাত থেকে বেরনো বলের ঘূর্ণি দেখে নেটের পিছনে দর্শকদের মধ্যে থেকে ‘উ-হ-হ’, ‘আ-হ-হ’ আওয়াজ ভেসে আসছিল। ১৫ বছর ধরে যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে আসছেন, সেই সৌরাশিস লাহিড়ীও তাঁর কাছে তালিম নেওয়ার আবদার করে বসলেন। উঠতিদের পাশাপাশি, সৌরাশিসকেও দুসরার টেকনিক শেখাতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই টেস্টে আটশো উইকেটের মালিকের। বললেন, “এখানে প্রচুর প্রতিভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের মাজা-ঘষা করলেই হিরে বেরিয়ে আসতে পারে। যা জানি ও যেটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা এখানকার উঠতিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। ভারতীয় দলের হয়ে খেলার মতো কয়েকজন স্পিনার তৈরি করে যায় কি না, দেখা যাক।”

তালিম চলছে বঙ্গ বোলারদের। শনিবার।

আগের রাতে ইডেনে বিপক্ষের ব্যাটিংকে সামলাতে না পারার জ্বালায় ছটফট করা লক্ষ্মীরতন শুক্ল আবার অন্য কথা ভেবে রেখেছেন। বলছিলেন, “মুরলী, ওয়াকারভাই তো ফের সেপ্টেম্বরে শহরে আসবে। তার মাস খানেক পরই আমাদের রঞ্জি অভিযান শুরু। তখন ওদের কাছে আমাদের বোলারদের পাঠালে কিন্তু দলের বেশ উপকারই হবে।” যে সাপ্লাই লাইন তৈরির জন্য সিএবি ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ, ‘ভিশন ২০২০’, সেই সাপ্লাই লাইন তো লক্ষ্মী এখন থেকেই দেখতে পাচ্ছেন। দুপুর থেকে বিকেল সল্টলেকের মাঠে সৌরভ, ওয়াকার, মুরলীদের সঙ্গে কড়া রোদে পোড়ার পর বাংলা অধিনায়ক বললেন, “আজই তো পেসারদের নেটে দুটো ভাল ছেলেকে দেখলাম। দারুণ বল করছে। ওদের বাংলার নেটে ডেকে দেখা যেতেই পারে। কে বলতে পারে, এই ক্যাম্প থেকেই মুস্তাক আলি ট্রফিতে (জাতীয় টি টোয়েন্টি) কারও অভিষেক হবে না? এ রকম অনবরত ক্রিকেটারের সাপ্লাই পেতে থাকলে বাংলার ক্রিকেট আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। আমি নিশ্চিত।”

ভিশন ২০২০... স্বপ্নের কান্ডারি। শনিবার সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের
মাঠে তিন কিংবদন্তি মুরলীধরন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও ওয়াকার ইউনিস।

কেন ‘ভিশন ২০২০’? সকালে তারকাখচিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৌরভ বললেন, “তেমন নির্দিষ্ট কারণ নেই। একটা নাম দিতে হবে বলেই দেওয়া। তবে ছ’বছরে আমরা একটা ভাল জায়গায় আসতে পারব বলেই আমার আশা। তারপরও চলবে এই প্রকল্প। কলকাতার বুকে ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স অ্যাকাডেমি’ গড়ার পথে এই তো প্রথম ধাপ। সব ঠিকঠাক চললে, তাও হয়ে যাবে হয়তো।” সৌরভ যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে কথাগুলো বলছেন, তখন তাঁর সামনে চাঁদের হাট। বাংলার ক্রিকেটের ‘হু’জ হু।’ রাজু, সম্বরণ, প্রণব, অশোক, অরুণলাল, দীপ, বরুণ, অরূপরা তো ছিলেনই, চার জাতীয় নির্বাচক রজার বিনি, বিক্রম রাঠৌড়, রাজিন্দর সিংহ হন্স ও সাবা করিমও ছিলেন সেখানে। তাঁদের আবার ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন লক্ষ্মী, দিন্দারাই। বার্তাটা অনেকটা ‘মেরেছ কলসির কানা...’-র মতো। এর মধ্যে অবশ্য মনোজ তিওয়ারি, উৎপল চট্টোপাধ্যায়দের অনুপস্থিতি সিএবি-র কর্তাদের অস্বস্তি বাড়াল।

ওয়াকার ও মুরলীর নেটে এ দিন ১০৪জন উঠতি প্রতিভা এসেছিল। তাদের মধ্যে দশজন পেসার ও পনেরো জন স্পিনারকে পছন্দ করলেন দুই কিংবদন্তি।

বাংলা, শেখো

ওয়াকার ইউনিস

• ছেলেদের বুঝতে হবে, পিচটা বড় কথা নয়। উইকেট যে রকমই হোক পারফর্ম করতে হবে।
উইকেট নেওয়ার খিদে থাকলে হাত থেকে গোলা বেরোবে...

• কোথা থেকে তুমি এসেছো, সেটা বড় কথা নয়। আমি এমন একটা জায়গা থেকে উঠে এসেছি,
যেটা মানচিত্রেও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তেমন অঞ্চলের ছেলেদের মধ্যেও যে লুকনো প্রতিভা থাকে,
সেটা বুঝতে হবে। এই প্রকল্প সেটাই হয়তো তুলে ধরবে...

• এ রকম প্রকল্প থেকেই প্রতিভা উঠে আসে। বাংলার ক্রিকেট প্রশাসন সঠিক রাস্তায় হাঁটছে।

মুথাইয়া মুরলীধরন

• এই প্রকল্পে স্থানীয় কোচেদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ওঁদের উপর নির্ভর করছে প্রকল্পের সাফল্য।
সারা বছর যাতে ছাত্রদের উন্নতিতে নজর রাখতে পারি, সেই ব্যবস্থাও চাইব সিএবি-র কাছে...

• বাংলায় স্পিন-প্রতিভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের খুঁজে নিয়ে ঘষে-মেজে ভারতের হয়ে খেলার মতো স্পিনার তৈরি করব।

প্রথম দিনের নির্ঘণ্ট

শিক্ষার্থী সংখ্যা: ১০৪

বাছাই পেসার ১০

বাছাই স্পিনার ১৫

(আর ১৫ পেসার, ১০ স্পিনার বাছার কথা)

শিবির শেষ মঙ্গলবার

“বাংলার ক্রিকেটারদের সঠিক রাস্তা দেখাতে হবে। সে জন্যই এই ‘ভিশন ২০২০’।
এই কাজটা ওয়াকার ইউনিস, মুরলীধরনের চেয়ে ভাল কে আর করতে পারবে?”

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cab bengal cricket waqar younis muralidharan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE