Advertisement
০৭ মে ২০২৪

আজ আর্জেন্তিনা বনাম আর্জেন্তিনা

রিও থেকে সাও পাওলো, সালভাদর থেকে রিও গ্রান্দে, লুই ফিলিপ স্কোলারির দুটো নাম আছে। যে নামদুটো তাঁর দুই সত্ত্বার পরিচয়। ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইডের মতো।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

রিও থেকে সাও পাওলো, সালভাদর থেকে রিও গ্রান্দে, লুই ফিলিপ স্কোলারির দুটো নাম আছে। যে নামদুটো তাঁর দুই সত্ত্বার পরিচয়। ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইডের মতো।

শ্রদ্ধার ডাকটা ‘ফিলিপাও’। নামটা বোঝায় লুই ফিলিপ স্কোলারি এক জন নির্বিবাদী ভদ্রলোক। মাথা গরম করেন না। প্রতিপক্ষ তাঁর ‘ছোট ভাই’।

রগচটা নামটা বহু দিনের। ‘বিগ ফিল’। যা শুনলে সাম্বার লাতিন লাবণ্য ভুলে মনে পড়ে উগ্র একটা চেহারা। যিনি এত হার্ড ট্যাকল করতেন যে, বিপক্ষ ভয়ে বলত, ট্রাক আসছে! মনে পড়ে দুটো পা, যাকে ব্রাজিল বলে ‘পার্না দে পাও’। মানে রক্তমাংসের নয়, কাঠের পা! মনে পড়ে এক জঙ্গি কোচকে যিনি ছাত্রদের নির্দ্বিধায় বলে দেন, এত কড়া ট্যাকল করো যাতে বিপক্ষের পাগুলো গুঁড়িয়ে যায়।

কলম্বিয়া ম্যাচের আগে ব্রাজিল বলতে শুরু করেছে, ফিলিপাও আর নয়। এ বার টিম বিগ ফিল দেখুক বিশ্বকাপ। তার একটা কারণ হয়তো চিলি ম্যাচ জিতে উঠে স্কোলারি হুঙ্কার ছেড়েছেন, মাঠে ভদ্রসভ্য ব্যবহার বন্ধ। ব্রাজিলের ভাল ব্যবহারে লোকে পেয়ে বসেছে। এমনিতেই ফাউলের বিচারে তাঁর প্লেয়ারদের যা ‘নামযশ’, তাতে কলম্বিয়া ম্যাচ থেকে মারকুটে ব্রাজিলকে দেখা যেতেই পারে। রামিরেজ, ফার্নান্দিনহো, আলভেজ, হাল্ক, দাভিদ লুইজ— প্রত্যেকে যে যাঁর লিগে ব্যাড বয় এবং একই সঙ্গে প্রতিপক্ষ ঠ্যাঙানোয় এক নম্বরে। হামেস রদ্রিগেজ নিয়ে ঠান্ডা গলায় ফার্নান্দিনহো শুনিয়ে রেখেছেন, “ও আগে জায়গা পাক, তার পর দেখব।” আগুনে ঘৃতাহুতি স্কোলারির মন্তব্যে, “আগ্রাসন কাকে বলে, এ বার দেখাব!”

ফোর্তালেজায় শুক্রবার ব্রাজিল ডাগআউটের অন্য প্রান্তে সাদা চুলের যে ভদ্রলোক থাকবেন, তাঁর আবার এ সব আগুন-টাগুন নেভানোর ওষুধ ভালই জানা! হোসে পেকেরম্যান মাথা গরম করেন না। কূটবুদ্ধিতে ম্যাচ জেতেন। লোকেও তাঁকে ডাকে ‘এল প্রোফেসর’ বলে। ব্রাজিলের ফিলিপাওয়ের মতো আর্জেন্তিনার প্রোফেসরের জীবনেও প্রচুর ওঠানামা আছে, বাহবা-অপমান দুটোই সহ্য করেছেন, তাঁরও বোধহয় শরীরের কোনও কোনও অংশ কাঠের! নইলে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য এক দেশে গিয়ে এমন এক সোনালি প্রজন্ম তুলে আনতে পারতেন কি?

“মাঝে মাঝে নিজেই খুব চাপে পড়ে যাই। কিন্তু ছেলেদের সামনে

তা ঘুণাক্ষরে প্রকাশ করি না। না হলে ওরাই চাপে পড়ে যাবে।”

লুই স্কোলারি

“টুর্নামেন্টটা জমে গিয়েছে। কারণ, কম তারকা নিয়েও

একটা টিম অন্য টিমের ব্যালান্স নষ্ট করে দিচ্ছে।”

হোসে পেকেরম্যান

আর্জেন্তিনা তাঁকে ২০০৬ সালে বিশ্বকাপের দায়িত্ব দিয়েছিল। তার পর কী ভাবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে তাঁর টিম ছিটকে গিয়েছিল, আজও ভাবলে জার্মান সমর্থকরা তৃপ্তি পান। সেই ম্যাচে রিকেলমেকে বসিয়ে উনিশ বছরের একটা বাচ্চাকে নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আজও ক্ষমা করতে পারেনি আর্জেন্তিনা। মিরোস্লাভ ক্লোজে সেই ম্যাচকে টাইব্রেকারে নিয়ে যান, পেকেরম্যানেরও চাকরি যায়। আর্জেন্তিনা ছেড়ে প্রোফেসর আসেন কলম্বিয়ায়। ভালদেরামা, হিগুয়েতা, এসকোবারের পর যাদের দেশ থেকে ফুটবল হারিয়েই গিয়েছিল। সেখান থেকে প্রোফেসরের একটা রদ্রিগেজ তুলে আনা, রাদামেল ফালকাও ছাড়াই বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে দেওয়া। এবং চিলির মতো গনগনে নয়, ব্রাজিল ম্যাচ নিয়ে প্রোফেসর যেন দার্শনিক। বলছেন, “বড় টিম যখন জিততেই হবে ভেবে নামে আর গোল পায় না, তখন ভাল খেলতেও পারে না। ছোট টিমগুলো ওদের ডিসটার্ব করে।” পেকেরম্যান বলতেই পারেন। ‘জিততেই হবে’ ভাবনাটা তাঁর টিমে নেই। বরং আছে বিপক্ষকে গুলিয়ে দেওয়ার অঙ্ক।

শুক্রবারের ক্যাচলাইনটা তাই খুব সহজ। ব্রাজিলের স্কোলারি। আর্জেন্তিনার পেকেরম্যান। ব্রাজিল-কলম্বিয়া তো নামেই। আসলে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্তিনা।

ভুল। শুক্রবারের ক্যাচলাইন সহজ হয়েও কঠিন। রিও গ্রান্দে দো সুলের জাতকদের ব্রাজিলীয় বলে মনে করে না ব্রাজিল। কারণ এলাকাটার সংস্কৃতি, আদবকায়দা সবই আর্জেন্তিনা-প্রভাবিত। যে এলাকার জাতক লুই ফিলিপ স্কোলারি। ছোটবেলা থেকে যাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘তুমি আর্জেন্টাইন’।

ফোর্তালেজায় তাই আজ আর্জেন্তিনা বনাম আর্জেন্তিনা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

argentina vs argentina fifaworldcup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE