Advertisement
০৪ মে ২০২৪
বাংলার বিরুদ্ধে জেহাদ ব্রাত্য বাঙালিদের

ইডেনে ‘ডিজাইনার ঘূর্ণি’ বেছে ফাটকা

ক্রিকেট পিচ, না ডব্লিউ ডব্লিউ ই-এর রিং? ইডেনের প্রায় সাদা বাইশ গজ জমিটার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক ‘বারুদের গন্ধ’টা মেশালে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।

পিচ পরীক্ষা মনোজ তিওয়ারিরও। বুধবার। ছবি শঙ্কর নাগ দাস

পিচ পরীক্ষা মনোজ তিওয়ারিরও। বুধবার। ছবি শঙ্কর নাগ দাস

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫০
Share: Save:

ক্রিকেট পিচ, না ডব্লিউ ডব্লিউ ই-এর রিং?

ইডেনের প্রায় সাদা বাইশ গজ জমিটার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক ‘বারুদের গন্ধ’টা মেশালে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।

অর্ধেক মাঠ জুড়ে নীলপোশাকের আধিপত্য। সিনিয়ররা তো বটেই, অনূর্ধ্ব ২৩-এর ক্রিকেটাররাও নেমে পড়েছেন সেখানে। এই দুই দলের মধ্যে দেওয়া-নেওয়া করেই তো চলছে বাংলার রঞ্জি ট্রফি অভিযান। কখনও জুনিয়র টিম থেকে ক্রিকেটার আসছে সিনিয়র টিমে, কখনও সে সব ক্রিকেটারদের আবার পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জুনিয়র দলে। তাতে যে খুব ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে, তা নয়। ছ’ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে বাংলা লিগ টেবলে শেষ তিনে। শেষ দু’ম্যাচে সরাসরি জিততে না পারলে প্রথম তিনে ওঠার কথা ভাবাও অসম্ভব।

মুরলী কার্তিক না থাকলেও বিপক্ষে এ সেই রেলওয়েজ, যাদের সঙ্গে গত বার তৈরি হওয়া অম্ল-মধুর সম্পর্কের রেশ এখনও রয়েছে। তার মধ্যে আবার রেল দলে ব্রাত্য বাঙালির সংখ্যা এক থেকে বেড়ে হয়েছে তিন। গত বার পর্যন্ত ছিলেন অরিন্দম ঘোষ। এ বার যোগ দিয়েছেন অর্ণব নন্দী-অনুষ্টুপ মজুমদার। নিজেদের প্রমাণ করার বাড়তি তাগিদ অবশ্যই রয়েছে এই ত্রয়ীর। অর্ণব যেমন বলেই ফেললেন, “বাংলায় থাকতে তো ইডেনে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে নামার সুযোগ হয়নি। তাই নিজের মাঠে প্রথম রঞ্জি ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই।”

অনুষ্টুপ মজুমদার, যাঁকে বাংলার সম্ভাব্য দলেই রাখা হয়নি, তিনি এ বার রেলের হয়ে চারটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। যদিও কোনওটাই বড় ইনিংস নয়। এ বার সুযোগ পেলে মরসুমের প্রথম বড় ইনিংসটা চেনা ইডেনেই খেলতে চান। আর বাংলাকে শত্রু হিসেবে দেখার তো অভ্যাসই হয়ে গিয়েছে অরিন্দমের। তিনি আর নতুন করে কিছু বলতে চাইলেন না। রেলের ক্যাপ্টেন মহেশ রাওয়াতও বলে দিলেন, “বাংলা সম্পর্কে অনেক খবরই এই তিনজনের কাছ থেকে পেয়েছি। এতে আমাদের বিপক্ষ সম্পর্কে হোমওয়ার্কটা করতে সুবিধা হয়েছে।”

‘যুদ্ধং দেহি’ এই মেজাজের মাঝেও বন্ধুত্বের হাওয়া যে একেবারে ছিল না, তা নয়। বদলার মনোভাব নিয়ে আসা ব্রাত্য বাঙালিদের সঙ্গে তাঁদের পুরনো বন্ধুদের দেখা হতেই চলল একটা ছোট আড্ডার সেশন। যেখানে ঋদ্ধিমান, সৌরভ (সরকার), সুদীপদের সঙ্গে প্র্যাকটিসের পর গল্পে মাতলেন রেলের তিন বাঙালি। ইডেনে যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে সেই দৃশ্য অনেকটাই যেন একটা মরুদ্যান।

ইডেনে যে পিচ তৈরি হয়েছে, তাকে বলা যেতে পারে ‘ডিজাইনার ঘূর্ণি’। বাংলার বেছে নেওয়া ‘র্যাঙ্ক টানার্র’। তাতেই বৃহস্পতিবার থেকে রঞ্জির ক্রিকেট-যুদ্ধ। যে বাইশ গজের দিকে তাকিয়ে লালায়িত দুই দলের স্পিনাররাই। দুই দলের ক্যাপ্টেনও বলছেন, এ একেবারে ছ’পয়েন্টের উইকেট। বাংলার অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলছেন, “আমরা এই ম্যাচে ছ’পয়েন্টের জন্যই নামছি।” রেলের ক্যাপ্টেনেরও বিশ্বাস, “এই উইকেটে ম্যাচের ফয়সালা হবেই হবে।” কিন্তু পাশাপাশি রেলওয়েজ ক্যাপ্টেনের হুঁশিয়ারি, “ওরা হোম আডভান্টেজ পাওয়ার জন্য এমন স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়েছে ঠিকই। কিন্তু মনে রাখবেন, চেন্নাইয়ে এমনই উইকেটে আমার স্পিনাররা কাঁপিয়ে দিয়েছিল।”

কথাটা ঠিক। সেই ম্যাচে বাঁ হাতি স্পিনার আশিস যাদব একাই আধ ডজন উইকেট নিয়েছিলেন। দলকে তিন পয়েন্ট এনে দিতে বাকি চার উইকেট ভাগাভাগি করে নেন অর্ণব ও আর এক বাঁ হাতি অবিনাশ যাদব। তার উপর রয়েছেন অ্যাডিলেড টেস্টে চার উইকেট নিয়ে সদ্য দেশে ফেরা কর্ণ শর্মা। যিনি ফর্ম ধরে রাখতে মরিয়া। এ দিন ইডেন থেকে বেরনোর সময় বলছিলেন, “এমন উইকেটে তো আমাদের (স্পিনারদের) ভাল বল করা উচিত।”

রাতে বাংলা টিম ম্যানেজমেন্ট মোটামুটি ঠিক করে ফেলল, তিন স্পিনার হবে সৌরাশিস-অমিত-ইরেশ। পেস অ্যাটাক সামলাবেন দিন্দা-লক্ষ্মী। আর রেলের বাঁ হাতি স্পিনারদের সামলাতে থাকবেন শ্রীবৎস।

বাংলার অবস্থা এখন অনেকটা সাপ-লুডোর বোর্ডের মাঝখানে থাকার মতো। দুই ছক্কা পড়লে বেশ খানিকটা উপরে উঠে যেতে পারে। আবার খারাপ চাল পড়লে একেবারে নীচে। দুই ম্যাচে ১২ পয়েন্ট পেলেও যে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা যাবে, তার কোনও মানে নেই। বরোদা শেষ দুই ম্যাচে তিন পয়েন্ট করে পেলেই তো প্রথম তিনে ঢুকে পড়বে। তাই লক্ষ্মীর আফসোস, “আগের কোনও ম্যাচে ছ’পয়েন্ট পেয়ে থাকলে এই চাপটা থাকত না।” তবে বেশি হিসেব-নিকেশে ঢুকতে চান না তিনি। বললেন, “এই ম্যাচে ছ’পয়েন্ট আর ভাল ক্রিকেট। ব্যস, আগামী চার দিন এটাই চাই। উপরে ওঠা বা নীচে নামা নিয়ে বেশি ভাবছি না।”

বাংলা শিবিরের এখন এই মন্ত্রই সম্বল। ছ’পয়েন্ট ও ভাল ক্রিকেট। পরেরটা পরে বুঝে নেওয়া যাবে।

পিচ নিয়ে ম্যাচ রেফারির কাছে অভিযোগ রেল অধিনায়কের

ম্যাচ শুরুর আগেই ম্যাচ রেফারির কাছে ইডেনের বাইশ গজ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে রাখলেন রেল অধিনায়ক মহেশ রাওয়াত। বুধবার ম্যাচ রেফারি প্রকাশ ভট্টের সঙ্গে মিটিংয়ে রাওয়াত নাকি বলেছেন, এই পিচ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ম্যাচ রেফারিও জানিয়েছেন, উইকেট কোনও রকম উল্টোপাল্টা আচরণ করলে তিনি কড়া সিদ্ধান্ত নেবেন। উইকেটের ভিডিও রেকর্ডিংও এ দিন করা হল। পরে রাওয়াত ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি এও বলেছেন, পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠলে তিনি টিম তুলে নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajib ghosh bengal ranji trophy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE