Advertisement
১০ মে ২০২৪
গোয়ায় ম্লান লাল-হলুদ, কলকাতায় ফুটল সবুজ-মেরুন ফুল

করিমের টিমকে হারিয়ে বাগানে বসন্ত

ক্রসবারের উপর দিয়ে বলটা বুলেটের গতিতে উড়ে যেতেই মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লেন সনি নর্ডি। এ রকম ফাঁকা গোল নষ্টের উদাহরণ অবশ্যই আই লিগে কোনও অভিনব ঘটনা নয়। তবে গোল নষ্টের পরে নর্ডিকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ফুটবলারদের যে ভিড় দেখা গেল, ইদানীং কালে বোধহয় সেই উষ্ণতা দেখেনি বাগান! ডিফেন্স থেকে বেলো রাজ্জাক পর্যন্ত ছুঁটে এসে নর্ডির পিঠ চাপড়ে দিলেন।

নায়কের উচ্ছ্বাস। সঙ্গী কাতসুমি। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উত্‌পল সরকার

নায়কের উচ্ছ্বাস। সঙ্গী কাতসুমি। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উত্‌পল সরকার

প্রীতম সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

মোহনবাগান-১ (প্রীতম)
পুণে এফসি-০

ক্রসবারের উপর দিয়ে বলটা বুলেটের গতিতে উড়ে যেতেই মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লেন সনি নর্ডি। এ রকম ফাঁকা গোল নষ্টের উদাহরণ অবশ্যই আই লিগে কোনও অভিনব ঘটনা নয়। তবে গোল নষ্টের পরে নর্ডিকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ফুটবলারদের যে ভিড় দেখা গেল, ইদানীং কালে বোধহয় সেই উষ্ণতা দেখেনি বাগান! ডিফেন্স থেকে বেলো রাজ্জাক পর্যন্ত ছুঁটে এসে নর্ডির পিঠ চাপড়ে দিলেন।

বাগানের উইং ধরে দুই বিদেশির দৌড়, বল ডিস্ট্রিবিউশন এবং বোঝাপড়া দারুণ উপভোগ করলেন গ্যালারির হাজার ষোলো দর্শক। তবে কাতসুমি-নর্ডির একে ওপরের পরিপূরক হয়ে ওঠার দৃশ্য অবশ্যই সঞ্জয় সেনকে আলাদা তৃপ্তি দেবে!

পুণে এফসি-র বিদেশি স্ট্রাইকারদের বিরুদ্ধে এ দিন বাগানের অ্যাটাকিং থার্ডে পরীক্ষা দিতে নেমেছিলেন স্বদেশি জুটি সাবিথ-জেজে। ম্যাচের রিপোর্ট কার্ডে হয়তো তাঁদের খুব ভাল নম্বর দেওয়া যাবে না। তবু বাগান কোচ সঞ্জয় সেন যেভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন, তাতে পরের ম্যাচে ওদের আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই বেড়ে যাবে। ম্যাচের পরে ড্রেসিংরুমে দু’জনকেই আলাদা করে ডেকে তিনি বলেন, “কিপ ইট আপ। আরও ভাল করতে হবে। গোল করাটাই শেষ কথা নয়।”

যুবভারতীর টুকরো টুকরো ছবিগুলো দিয়ে যদি একটা কোলাজ তৈরি করা যায়, তা হলে বোঝা যাবে টিম গেম ও টিম স্পিরিটের কী সুন্দর ঝরনা বইছে মোহনবাগানে। গত চার বছরে যা প্রায় নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল সবুজ-মেরুনের সংসার থেকে! স্কোরলাইন দেখে তাই মোহনবাগানের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। শনিবার পুণের বিরুদ্ধে যে ফুটবল খেলল বাগান, তাতে ফুটবলাররা তো বটেই, কোচের স্ট্র্যাটেজিরও প্রশংসা করতে হবে। বাগান-কোচ শুরুতেই মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিলেন পুণের সুয়োকা ও আরাতাকে মার্কার দিয়ে বন্দি করা। প্রীতম কোটাল আর শৌভিক ঘোষ দুই সাইড ব্যাকের মাধ্যমে। পুণের দুই মিডিওর অভ্যাস সাইড থেকে কাট করে দ্রুত গতিতে ভিতরে ঢুকে আসা। কিন্তু সঞ্জয়ের দুই বঙ্গসন্তান সুয়োকাদের এমন ভাবে চেপে ধরলেন যে, ঠিক করে বল পর্যন্ত ধরতে পারলেন না। বিক্রমজিত্‌ সিংহের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেকেন্ড বল ধরার। বাগানের ডিফেন্সিভ ব্লকার সেই কাজটা তো নিখুঁত ভাবে করলেনই, বল ডিস্ট্রিবিউশনেও সবার প্রশংসা কুড়োলেন। মাঠে খেলা দেখতে আসা ডগলাস ডি’সিলভা তো বলেই ফেললেন, “ওই জায়গায় এত ভাল ফুটবলার অনেক দিন বাদে দেখছি। যে গতিতে উঠছে, সেই গতিতেই আবার নেমে আসছে। ম্যাচের সেরা বেলো হলেও, আমার কাছে বিক্রমজিত্‌-ই ম্যান অব দ্য ম্যাচ।”

সব বিভাগেই পুণেকে ছাপিয়ে গিয়েছে সঞ্জয়ের দল। করিম বেঞ্চারিফার দল এ দিন এতটাই বেসামাল হয়ে পড়েছিল যে, আই লিগের শীর্ষে থাকা দল মনেই হচ্ছিল না। গোটা ম্যাচে মোহনবাগান গোলকিপার দেবজিত্‌ ক’টা বল ধরেছেন, হাতে গুনে বলা যাবে। তবু করিম তো করিমই। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে তাঁর অজুহাত, “বেলো ম্যাচের সেরা হয়েছে মানে এটাই প্রমাণ করে যে, আমরা কত অ্যাটাকিং খেলেছি।” করিমচাচা আংশিক ঠিক। বেলোর নেতৃত্বে বাগান ডিফেন্সের এখনও পর্যন্ত এটাই সেরা ম্যাচ। তা বলে নাইজিরিয়ান স্টপারের সেরা হওয়ার সঙ্গে পুণের অ্যাটাকিং ফুটবলের কোনও সম্পর্ক নেই। কেন না, বল পজেশনও যে ৭০-৩০ বাগানেরই। বরং বলা যেতে পারে, পুণের ‘হাইপ্রোফাইল’ ফরোয়ার্ড লাইনের সঙ্গে ডিফেন্সটাও বেশ দুর্বল। ম্যাচের সাতাত্তর মিনিটে নর্ডির ক্রস থেকে যখন প্রীতম হেডে আই লিগে নিজের প্রথম গোল করছেন, তখন করিমের কোনও ডিফেন্ডারই আশেপাশে নেই। তবে উত্তরপাড়ার বাসিন্দাও বলটা সেকেন্ড পোস্টে নিখুঁত ভাবে রেখেছেন।

শনিবার ম্যাচ শেষে দেখা গেল, মোহনবাগান জোড়া জয় ও দ্বিগুণ আনন্দে ভাসছে। আই লিগের শীর্ষে থাকা পুণেকে হারানোর সন্তুষ্টি তো আছেই। তার চেয়েও বেশি স্বস্তি যেন করিম বেঞ্চারিফাকে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসার আনন্দ! স্বয়ং বাগান কোচ বললেন, “ফেড কাপে যখন পুণের কাছে এক গোলে এগিয়ে শেষে ড্র করি, করিম আমাকে বলেছিল, ফার্স্ট হাফ প্লেয়ারদের। সেকেন্ড হাফ কোচদের। আজ বিরতিতে আমি ফুটবলারদের বলি, সেকেন্ড হাফটা কার সেটা তোমরাই বুঝিয়ে দাও। করিম শুধু কাগজের বাঘ।” সঞ্জয়ের কথাতেই স্পষ্ট, টিম পুণেকে নয়, করিম বেঞ্চারিফাকে হারানোর তৃপ্তিই বেশি মোহনবাগানে!

মোহনবাগান: দেবজিত্‌, কিংশুক, প্রীতম, বেলো, শৌভিক, ডেনসন, কাতসুমি, নর্ডি, বিক্রমজিত্‌ (ভার্গব), সাবিথ (বলবন্ত), জেজে (শেহনাজ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE