Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কড়া ক্রিকেট যুদ্ধের প্রার্থনায় মন্দিরেও ছুটছে শৈলশহর

মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বরফে ঢাকা ধৌলাধার পর্বত। তাঁর কোলে সবুজ প্রাকৃতিক গালিচায় চলছে ক্রিকেট যুদ্ধের প্রস্তুতি। ধর্মশালা স্টেডিয়ামের দিকে যাওয়ার সময় উপরের রাস্তা থেকে দেখলে মনে হয় মেরুন রঙের কোনও বাটি বসানো রয়েছে। তার নীচটুকু সবুজ।

রবি শাস্ত্রীর ক্লাসে শিখর ধবন। বৃহস্পতিবার। ধর্মশালায়। ছবি: পিটিআই

রবি শাস্ত্রীর ক্লাসে শিখর ধবন। বৃহস্পতিবার। ধর্মশালায়। ছবি: পিটিআই

রাজীব ঘোষ
ধর্মশালা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বরফে ঢাকা ধৌলাধার পর্বত। তাঁর কোলে সবুজ প্রাকৃতিক গালিচায় চলছে ক্রিকেট যুদ্ধের প্রস্তুতি। ধর্মশালা স্টেডিয়ামের দিকে যাওয়ার সময় উপরের রাস্তা থেকে দেখলে মনে হয় মেরুন রঙের কোনও বাটি বসানো রয়েছে। তার নীচটুকু সবুজ।

শুক্রবার এই মেরুণ বাটির মতো দেখতে ধর্মশালা স্টেডিয়াম গমগম করবে সকাল থেকে। কিন্তু হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা হঠাত্‌ ইন্দ্রনাগের মন্দিরে দৌড়লেন কেন?

হিমাচল প্রদেশের এই শৈলশহরে যেমন দলাই লামা বলতে সবাই অজ্ঞান, তেমনই আরও এক জনের কথা না উল্লখে করে থাকতে পারেন না কেউই। তিনি এই ইন্দ্রনাগ। যাঁকে ঝড়-বৃষ্টির দেবতা হিসেবে শুধু শ্রদ্ধাই করেন না স্থানীয় বাসিন্দারা, রীতিমতো সমীহও করেন। উনি চটে গেলে সব কাজ পণ্ড, এমনই ধারণা এখানকার মানুষের। তাই বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ধর্মশালা থেকে সাত-আট কিলোমিটার দূরে খানিয়ারা রোডে ইন্দ্রনাগের ছোটখাটো মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে আসেন। এটাই এখানকার রেওয়াজ। তাই শোনা গেল এ দিনও হিমাচল ক্রিকেটের কয়েক জন কর্তা গিয়ে পুজো দিয়ে এলেন সেই মন্দিরে। আর প্রার্থনা করে এলেন, শুক্রবার ম্যাচ যেন বৃষ্টিতে পণ্ড না হয়।

এ তো গেল ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা। বিজ্ঞান কিন্তু ভাল খবর শোনাচ্ছে না। এমনিতেই পাহাড়ের বৃষ্টি যখন-তখন আসে। পাহাড়ি বাসিন্দারাই প্রবাদ তৈরি করেছেন, পাহাড়ের আবহাওয়া ও মেয়েদের মেজাজ, একই রকমের। কখন যে কেমন থাকবে, বলা মুশকিল। তা সত্ত্বেও স্থানীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, শুক্রবার দুপুরে, বিকেলে বৃষ্টি আসতে পারে। বৃষ্টি এলেই যে সারা দিন চলবে, তার কোনও মানে নেই। কিছুক্ষণ হওয়ার পর ফের আকাশ কাচের মতো পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে। পাহাড়ি বৃষ্টি এমনই। তবে এই মাঠে জল দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনাই নেই, দাবি হিমাচল ক্রিকেট কর্তাদের।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় ক্রিকেটারদের শরীরি ভাষা দেখে অবশ্য একবারও মনে হল না ব্যাপারটা নিয়ে তাঁরা চিন্তায় আছেন। দিল্লির তুমুল গরম আর গা জ্বালানো রোদে কয়েক দিন প্র্যাকটিসের পর এ দিন হিমাচলের এই শৈলশহরে এসে অনুশীলন যতটা না কাজে লাগাতে চাইলেন তাঁরা, তার চেয়ে যেন বেশি উপভোগ করতে চাইলেন কোহলি, রায়না, শামি, জাডেজারা। সবাই দিব্য ফুরফুরে মেজাজে। ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়া আর মন খারাপ করা হালকা রোদ, দুটোই যেখানে ভরপুর, সেখানে তা করবেন না-ই বা কেন? কিন্তু আবহাওায়া যেমন উপভোগ করছেন ধোনিরা, তেমন এই আবহাওয়াই শুক্রবারের ম্যাচে তাঁদের কাছে সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে না তো?

দেশের অন্যান্য অংশের চেয়ে এখানে একেবারে উল্টো পরিবেশ যখন, তখন তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন তো অবশ্যই থাকে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভারতীয় দলকে শুধু শুধু দিল্লিতে বসিয়ে না রেখে তিন দিন আগে ধর্মশালায় নিয়ে আসা হল না কেন? দিল্লি থেকে যেখানে মাত্র এক ঘন্টার বিমানযাত্রা, সেখানে ম্যাচের আগের দিনই দুপুরবেলায় দুই দলকে এখানে নিয়ে আসার মানে কী? বিকেলে প্র্যাকটিসে নামার আগে বিরাট কোহলি অবশ্য বলে দিলেন, “ওটা কোনও সমস্যা হবে না। এখানে তো আগেও খেলেছি। তা ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলতেই হয়। এগুলো মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় না।”

নিজের ঘরের মাঠের ম্যাচকে ব্লকবাস্টার হিট করে তুলতে যিনি সর্বক্ষণ প্রায় দৌড়ে বেড়াচ্ছেন, সেই ভারতীয় বোর্ডের যুগ্মসচিব অনুরাগ ঠাকুর এর ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, “চার্টার্ড বিমানের দিনক্ষণ এক বার ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আর বিমানসংস্থা তা পাল্টাতে রাজি হল না।” এমনিতেই বিমানসংস্থার আপত্তিতে দলাই লামার শহরে ম্যাচ না হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তাদের বহু কষ্টে রাজি করিয়ে ম্যাচটা করতে হচ্ছে অনুরাগদের। তাই আর এই নিয়ে বেশি খোঁচাখঁুচি নয়। তবে ইন্দ্রনাগের কৃপায় ম্যাচ যে নির্বিঘ্নে ও সফল হবেই এবং দলাই লামা থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও যে এসে ম্যাচে ভিড় জমাবেন, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই অনুরাগের। বলে দিলেন, “ম্যাচটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই আমরা। এই নিয়ে কোনও আপস করতে চাই না।” ম্যাচটা যাতে সব দিক থেকে সুপারহিট হয়, সে জন্য দিল্লি, চন্ডীগড় থেকে এক ঝাঁক পেশাদারকেও এনে বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত সবের পরেও মাঠ যে ভরবে এমন কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কর্তারা। কারণ পুরো টিকিট নাকি বিক্রি হয়নি।

ওঁদের মতোই অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন এখানকার কিউরেটর সঞ্জয় চৌহ্বান। তাঁর তৈরি বাইশ গজে যাতে একটা ‘ঘামাসান’ ক্রিকেট যুদ্ধ হয়, তার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেননি বলেই জানালেন তিনি। বললেন, “এখানকার উইকেটে যেমন গতি থাকবে, তেমন বাউন্সও কম থাকবে না। পেসাররা বলে বলে যেমন কাঁধের উপর বল ওঠাতে পারবে, তেমন উইকেটে ভাল ক্যারি থাকায় ব্যাটসম্যানরাও ভাল শট খেলতে পারবে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে যা হওয়া উচিত, ব্যাটসম্যান ও বোলারদের তুমুল যুদ্ধ, আশা করি, কাল তা-ই হবে।”

প্র্যাকটিসের ফাঁকে উইকেট দেখে নিলেন ভারতীয় ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। হালকা সবুজের আভা রয়েছে। উমেশ, ভুবনেশ্বরদের দিয়ে নেটে সমানে বল করিয়েও গেলেন। তবে ইশান্ত নন। শামি তো ইদানীং ম্যাাচের আগের দিন নেটে বল করছেন না। উইকেট পেসারদের পক্ষে বললেও হয়তো তিন পেসারেই খেলতে দেখা যাবে ভারতকে। সম্ভবত সেই শামি, ভুবি ও উমেশ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে ঠান্ডাও যেমন বাড়ে, তেমন শিশিরও পড়ে যথেষ্ট। তবে তা মারাত্মক পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানালেন চৌহ্বান।

খাতায় কলমে ক্যারিবিয়ানদের এই মাঠে অ্যাডভান্টেজ। কারণ, তাঁদের অলরাউন্ডারের সংখ্যা বেশি। এই উইকেটে যে বিপদে ফেলার মতো পেসার রয়েছে ব্রাভোর দলে, তা স্বীকার করে নিলেন কোহলিও। আইপিএলের জন্য এখানে খেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে অনেকের। হয়তো সে জন্যই ক্যারিবিয়ানরা প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে সোজা ম্যাচে নেমে পড়ার সাহসও দেখাল।

সিরিজের ফয়সালা যে ইডেনেই হবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই ম্যাচে কারা এগিয়ে থেকে নামবেন, তার ফয়সালা শান্তির দূত দলাই লামার শহরেই হবে। কিন্তু এই ক্রিকেট যুদ্ধে কতটা শান্তি বজায় থাকে, কে জানে। ইঙ্গিত তো খুব কিছু পাওয়া গেল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajib ghosh cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE