Advertisement
০২ মে ২০২৪
ফরাসি ওপেন ফাইনালের দুই মুখ

খেতাবের যুদ্ধে শারাপোভার সামনে হালেপ

বাছাই পতনের ফরাসি ওপেনে মেয়েদের ট্রফির জন্য লড়াইটা শেষ পর্যন্ত দাঁড়াল মারিয়া শারাপোভা বনাম সিমোনা হালেপ! এ পর্যন্ত যাঁদের তিন বারের কোর্ট সাক্ষাতে শেষ হাসি প্রতি বারই ফুটেছে শারাপোভার ঠোঁটে।

ফাইনালে ওঠার উচ্ছ্বাস শারাপোভার। বৃহস্পতিবার রোলাঁ গারোয়।

ফাইনালে ওঠার উচ্ছ্বাস শারাপোভার। বৃহস্পতিবার রোলাঁ গারোয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

বাছাই পতনের ফরাসি ওপেনে মেয়েদের ট্রফির জন্য লড়াইটা শেষ পর্যন্ত দাঁড়াল মারিয়া শারাপোভা বনাম সিমোনা হালেপ! এ পর্যন্ত যাঁদের তিন বারের কোর্ট সাক্ষাতে শেষ হাসি প্রতি বারই ফুটেছে শারাপোভার ঠোঁটে।

বৃহস্পতিবার ফিলিপ শাতিয়ের কোর্টে দুই ফাইনালিস্ট অবশ্য জিতলেন দু’ভাবে। কানাডার উদীয়মান তারকা ইউজিন বোচার্ডের কড়া চ্যালেঞ্জ সামলে রোলাঁ গারোয় টানা তৃতীয় ফাইনাল নিশ্চিত করতে ২০১১-র চ্যাম্পিয়ন শারাপোভাকে যুদ্ধ চালাতে হল তিন সেট। সেখানে পরের সেমিফাইনালে আন্দ্রিয়া পেটকোভিচকে স্ট্রেট সেটে হারিয়ে হালেপ শুধু জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালেই উঠলেন না। চৌত্রিশ বছরে রোমানিয়ার প্রথম মেয়ে হিসাবে ফরাসি ওপেন ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে ইতিহাসও গড়ে ফেললেন!

“এই মুহূর্তটা আমার কাছে ঠিক কতখানি আবেগের, বলে বোঝানো কঠিন,” দেড় ঘণ্টায় পেটকোভিচকে ৬-২, ৭-৬ (৭-৪) হারিয়ে উঠে বলেন বাইশ বছরের হালেপ। যিনি এই মুহূর্তে শারাপোভা আর তাঁর দ্বিতীয় ফরাসি ওপেন জয়ের স্বপ্নের মাঝে দাঁড়িয়ে। অন্য দিকে, শারাপোভা ৪-৬, ৭-৫, ৬-২ জিতে ফের বোঝালেন অ্যান্ডি মারের মা জুডি কেন তাঁকে ‘কড়া চা’ নাম দিয়েছেন। জুডির ভাষায় যা ‘ফুটন্ত জল’, সেই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে শারাপোভা ইদানীং ঘুরে দাঁড়ানোটাই অভ্যাস করে ফেলেছেন। এবং আজকের পর ক্লে কোর্টে তিন সেটের ম্যাচে টানা ১৯ নম্বর জয়টা পেলেন।

ফাইনালে শারাপোভার মুখোমুখি হালেপ। বৃহস্পতিবার রোলাঁ গারোয়।

বোচার্ড বেশ কয়েকটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে টেনিস খেলার প্রেরণা তিনি নাকি শারাপোভাকে দেখেই পান। এ হেন ‘আদর্শ’কে কিন্তু কোর্টে নেমে এতটুকু রেয়াত করলেন না। বরং প্রথম সেটে কানাডার মেয়ের দাপটে অঘটনেরই ইঙ্গিত ছিল। প্রথম গেমেই শারাপোভাকে ভেঙে শুরু করেছিলেন। তার পরে ৪-৪ থেকে প্রতিপক্ষকে আবার ভেঙে প্রথম সেট জিতে নেন ৬-৪। শারাপোভার আবার সার্ভিসটাই ঠিকঠাক পড়ছিল না। অবশ্য একাধিক ডাবল ফল্ট সত্ত্বেও দ্বিতীয় সেট থেকে লড়াইয়ে ফেরেন। বোচার্ডকে বেস লাইনের পিছন থেকে খেলতে বাধ্য করিয়ে ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ম্যাচের। শারাপোভা অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বললেন, “আজ ও অবিশ্বাস্য খেলল। খুবই উঁচুদরের প্লেয়ার। মেনে নিচ্ছি আমার ভাগ্য ভাল ছিল বলেই জিতেছি।”

এ দিকে, রাফায়েল নাদালের লাল মাটির দুর্গে ফাটল ধরানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন অ্যান্ডি মারে। বুধবার পাঁচ সেটের নাটকীয় লড়াইয়ে ছোটবেলার বন্ধু গেইল মঁফিসকে ৬-৪, ৬-১, ৪-৬, ১-৬, ৬-০ হারানোর পর সপ্তম বাছাই জানিয়ে দিয়েছেন, গত সাতাত্তর বছরে প্রথম ব্রিটিশ হিসাবে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে পৌঁছনোই এখন তাঁর লক্ষ্য।

২০১১-য় এখানেই নাদালের কাছে স্ট্রেট সেটে হেরেছিলেন সেমিফাইনালে। মুখোমুখি যুদ্ধে নাদাল এগিয়ে ১৪-৫। তার থেকেও বড় কথা, লাল মাটিতে আজ পর্যন্ত এক বারও আট বারের ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়নকে সমস্যায় ফেলতে পারেননি। তবু বলছেন, “২০১১-র প্রভাব শুক্রবারের ম্যাচে পড়বে না। কী করে এই ধরনের বড় ম্যাচ জিততে হয়, সেটা তিন বছর আগে জানা ছিল না। এখন জানি।” চলতি মরসুমে নাদালের কাছে লাল মাটিতে শেষ হেরেছেন রোমে, এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর মাস্টার্সে। তবে মারে বলেছেন, “রোমের ম্যাচ থেকে কয়েকটা শিক্ষা নিয়েছি। আমার কোন চালগুলো রোমে কাজে দিয়েছিল আর কোনগুলো খাটেনি, সেটা মাথায় রেখেই রণকৌশল তৈরি করছি।”

মারের চ্যালেঞ্জ হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না নাদালও। স্বদেশি ডেভিড ফেরারের বিরুদ্ধে ৪-৬, ৬-৪, ৬-০, ৬-১ জিতে এই মুহূর্তে টানা ৩৩টি ম্যাচ জিতে রোলাঁ গারোয় জেতা-হারার হিসেবটা ৬৪-১-এ নিয়ে যাওয়া নাদাল মেনে নিচ্ছেন, মারের হাবভাব এক্কেবারে ভাল ঠেকছে না তাঁর। বলেছেন, “ক্লে কোর্টে অ্যান্ডি যে দাপট দেখাচ্ছে, সেটা আমার একদম পছন্দ হচ্ছে না। ও সব সারফেসেই ভাল খেলে। তবে এখানে ও এত ভাল খেলায় আমি খুশি নই!” নাদাল আরও বলছেন, “এ বার ট্রফির অন্যতম দাবিদার অ্যান্ডি।”

ভিন্ন মেজাজে আরেক সুন্দরী

পারলেন না ইউজিন। বৃহস্পতিবার।

দ্বিতীয় বাছাই জকোভিচের সামনে সেমিফাইনালে আবার এমন এক প্রতিপক্ষ যিনি টুর্নামেন্ট থেকে রজার ফেডেরার আর ষষ্ঠ বাছাই টমাস বার্ডিচকে ছিটকে দিয়েছেন। এমন ‘অঘটন মাস্টার’ আর্নেস্ট গুলবিসের সামনে দাঁড়িয়ে জকোভিচকে স্বস্তি দিচ্ছে একটাই ব্যাপার। লাটভিয়ার পঁচিশ বছরের চ্যালেঞ্জারের বিরুদ্ধে তাঁর ৪-১ রেকর্ড। ১৮ নম্বর বাছাইয়ের সঙ্গে জকোভিচের পরিচয় পর্বটা অবশ্য দীর্ঘ। মিউনিখের নিকি পিলিচ অ্যাকাডেমিতে দু’জনে টেনিস শিখতেন একসঙ্গে। একটা লম্বা সময় শুধুই টেনিসের ‘দস্যি ছেলে’ তকমা নিয়ে থাকার পর সম্প্রতি নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করা আরম্ভ করেছেন গুলবিস। যিনি জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল খেলবেন টানা চার বার রোলাঁ গারোয় শেষ চারে পৌঁছনো জকোভিচের বিরুদ্ধে। এবং যথেষ্ট সতর্ক শোনাচ্ছে জকোভিচকে। বলেছেন, “ও খুব ভাল খেলে। তার উপর ওর ওই পেল্লায় সার্ভিসটা ঠিকঠাক পড়তে শুরু করলে বিপদ আছে!” যোগ করেছেন, “শুধু সার্ভিসই নয়। কোর্টে ওর নড়াচড়া আর অ্যান্টিসিপেশনও খুব ভাল। কাল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক থাকবে। নিজের শট খেলবে। কারণ ওটাই ওর স্টাইল।” গুলবিসের খেলার ধরন তাঁর চেনা। কিন্তু অঘটন-বিদের আক্রমণের পাল্টা দিতে জকোভিচ কত দূর তৈরি, এখন সেটাই দেখার।

ছবি: রয়টার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

french open sharapova halep
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE