Advertisement
০১ মে ২০২৪

‘খাড়ুশ’ সিমিওনে আর ‘কমপ্লিট’ গুয়ার্দিওলাই এ বার আমার বাজি

শুক্রবার বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে একটা ফিল্মের শুটিং ছিল। যেখানে আমি অভিনয় করছি। বিকেলে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার সময় গাড়িতে বসেই ফোনে শুনে নিলাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ড্র-টা কী হয়েছে। আটলেটিকো বনাম চেলসি। বায়ার্ন বনাম রিয়াল। প্রথমটায় ‘জায়ান্ট কিলার’ দিয়েগো সিমিওনে ভার্সাস ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’ হোসে মোরিনহো। দ্বিতীয়টায় অসংখ্য সুপারস্টার সামলানোয় ওস্তাদ কার্লো আন্সেলোত্তি বনাম ফুটবলের ‘চার্লস ডারউইন’ পেপ গুয়ার্দিওলা।

অ্যালভিটো ডি’কুনহা
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

শুক্রবার বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে একটা ফিল্মের শুটিং ছিল। যেখানে আমি অভিনয় করছি। বিকেলে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার সময় গাড়িতে বসেই ফোনে শুনে নিলাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ড্র-টা কী হয়েছে।

আটলেটিকো বনাম চেলসি। বায়ার্ন বনাম রিয়াল। প্রথমটায় ‘জায়ান্ট কিলার’ দিয়েগো সিমিওনে ভার্সাস ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’ হোসে মোরিনহো। দ্বিতীয়টায় অসংখ্য সুপারস্টার সামলানোয় ওস্তাদ কার্লো আন্সেলোত্তি বনাম ফুটবলের ‘চার্লস ডারউইন’ পেপ গুয়ার্দিওলা।

যাঁদের নিকে নজর। সবিস্তার...

ইউরোপ সেরা চার কোচের এই ডুয়েল ক্রীড়াপ্রেমীদের জিভে জল আনা ম্যাচ। আমি তো এখন থেকেই আমার ডায়রিতে ওই চারটে তারিখ নোট করে ফেলেছি। ২২, ২৩, ২৯ ও ৩০ এপ্রিল— এই চারটে দিন বাকি সব কিছু ভুলে ফুটবলে ডুবে যাওয়ার দিন। যাই হোক, ড্রয়ের কথায় আসি। সিমিওনে-মোরিনহো লড়াই যদি এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ‘স্পেশ্যাল ম্যাচ’ হয়, তা হলে পেপ-কার্লো লড়াইটা এই টুর্নামেন্টের ‘দ্য ম্যাচ’।

স্পেশ্যাল ম্যাচ: আটলেটিকো মাদ্রিদ বনাম চেলসি

এই ম্যাচটায় আমার বাজি দিয়েগো সিমিওনের আটলেটিকো মাদ্রিদ। আর্জেন্তিনীয় কোচ সিমিওনের ‘খাড়ুশ’ মনোভাবটা খেলোয়াড়-জীবন থেকেই ওঁকে ফুটবলের ‘পাওয়ার হাউস’ করে দিয়েছে। ’৯৮-এর ফ্রান্স বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-আর্জেন্তিনা ম্যাচটা আমার এখনও মনে আছে। ব্রিটিশ মিডিয়ার দৌলতে ডেভিড বেকহ্যাম তখন ফুটবলের রাজপুত্র। তা সে দিন মাঠে সিমিওনে সেই বেকহ্যামের এমন অবস্থা করে ছেড়েছিল যে বেচারা বেকহ্যাম শেষ পর্যন্ত লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরেই চলে যায়। কোচিং করাতে এসেও সেই ‘জায়ান্ট কিলার’ ইমেজটা ধরে রেখেছেন সিমিওনে। এখনও কী ইনভলভমেন্ট! কোয়ার্টার ফাইনালে বেঞ্চ থেকে যখন ফুটবলারদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তখন ওঁর চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, পারলে বুঝি এখনই নিজে মাঠে নেমে পড়েন! কোচ সিমিওনের জন্যই কিন্তু আটলেটিকোকে এই মরসুমে এত কনফিডেন্ট লাগছে।

তবে কোস্তা-মিরান্দারা যদি কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনাকে ছিটকে দেওয়ার আনন্দে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ে, তা হলে কিন্তু মুশকিল। কারণ উল্টো দিকের কোচের নাম হোসে মোরিনহো। যিনি দু’তিনটে চালেই মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যে কোনও ম্যাচের। রিয়াল ছেড়ে চেলসিতে এসেছেন এক বছরও হয়নি। সুতরাং স্প্যানিশ ফুটবলটা ভাল করেই জানেন। বিশ্ব ফুটবলের খবরাখবর রাখার ভিত্তিতে বলতে পারি, দর্শনীয় নয়, মোরিনহো সর্বদা ভালবাসেন কার্যকরী ফুটবল। বিশেষ করে জানেন আটলেটিকোর প্রেসিং ফুটবল ঘরানার কথা। রিয়াল কোচ থাকার সময় আটলেটিকোর বিরুদ্ধে মোরিনহোর রেকর্ডও বেশ উজ্জ্বল। এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালেও প্যারিস সাঁ জাঁ-র কাছে অ্যাওয়ে ম্যাচে ১-৩ হেরেও ঠিক দু’গোল মেরে ম্যাচটা বের করে নিলেন। পরিস্থিতি বুঝে এই চটজলদি সিদ্ধান্ত প্রয়োগের জন্যই উনি মোরিনহো।

তবে চেলসি থেকে লিয়েনে আসা গোলকিপার থিবাও কুর্তোয়াকে সিমিওনে পাবেন। এটা ওঁর জন্য প্লাস পয়েন্ট। ছেলেটা বেশ ভাল ফর্মে রয়েছে এই মুহূর্তে উল্টো দিকে তোরেস ওর প্রথম ক্লাবের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠতে পারে কি না, সেটাও দেখতে চাই। আটলেটিকোর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স তাদের কাউন্টার অ্যাটাক, বল পজেশন। দিয়েগো কোস্তা, দাভিদ ভিয়ার সঙ্গে আবার জুড়বে ‘নতুন জাভি’ কোকে। এই ত্রিভুজ মোরিনহোর রক্ষণে জন টেরি এবং গ্যারি কাহিলের কাছে কিন্তু একটা বড় চ্যালেঞ্জ। রাউল গার্সিয়া, আদ্রিয়ান লোপেজরাও কিন্তু মুখিয়ে থাকবে লিসবনে ফাইনাল খেলার জন্য। এই মরিয়া মনোভাবটা আটলেটিকোর একটা বড় সম্পদ।

আমার ভবিষ্যদ্বাণী, আটলেটিকোর পক্ষে ৫৫-৪৫।

দ্য ম্যাচ: রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বায়ার্ন মিউনিখ

এটা এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা ম্যাচ হতে চলেছে। আলিয়াঞ্জ এরিনায় বুধবার রাতে বায়ার্ন-ম্যান ইউ ম্যাচে দেখছিলাম বায়ার্ন ফ্যানরা গ্যালারিকে সাজিয়েছিল ‘কিং অব দ্য কাপ’ কথাটি লিখে। গুয়ার্দিওলার দল বুন্দেশলিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যে ফর্ম দু’মরসুম ধরে রেখেছে, তাতে রবেন-রিবেরিদের দলকে ‘কিং’ বলা যেতেই পারে। অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, কিন্তু স্রেফ পেপ-এর দলের কমপ্লিট ফুটবলের জন্যই আমি এই ম্যাচটায় এগিয়ে রাখছি বায়ার্নকে। দুই কোচই এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন দু’বার করে। তা-ও বলব, আন্সেলোত্তির যতই বেল-বেঞ্জিমা-রোনাল্ডো থাকুক না কেন, হালফিলে ওদের যত বিক্রম কিন্তু ঘরের মাঠ বের্নাবাওয়ে। আর একটা ব্যাপার হল, রোনাল্ডো খেললে দলটা একটা ছন্দে খেলে। ও বাইরে থাকলে যে ছন্দটা দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়।

তবে এ বার লড়াইটা কিন্তু ‘ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটানস’। এখন থেকেই ভাবা শুরু করে দিয়েছি, রোনাল্ডোদের আটকাতে কি ফের ফিলিপ লামকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ফিরিয়ে আনবেন পেপ? নাকি রাফিনহা সেই ‘সুপার সাব’-এর ভূমিকা নেবে? টনি ক্রুজ যদি খেলে, তা হলে আন্সেলোত্তিকে সবার আগে বায়ার্নের জার্মান তিকিতাকার এই পাওয়ার হাউসের সুইচটা অফ করতে হবে। রিয়াল ডিপ ডিফেন্সে পেপে-র্যামোসরা বিপক্ষের টানা আক্রমণের সামনে জিব্রাল্টারের পাহাড় হয়ে দাঁড়াতে পারেনি এখনও। মদরিচ, দি’মারিয়া, জাবি আলোন্সো রিয়ালে থাকলেও এই মুহূর্তে ওদের চেয়ে বায়ার্ন অনেক পরিপূর্ণ দল। যেমন গতি, তেমন পাওয়ার, তেমন পাসের ফুলঝুরি। মান্ডজুকিচ, টমাস মুলার, জাভি মার্টিনেজ, কাকে ছেড়ে কাকে রাখব! এই ম্যাচের ইউএসপি-টা অবশ্য দু’দলের উইংয়ে। এক দিকে রবেন-রিবেরি। অন্য দিকে বেল-রোনাল্ডো। সুতরাং, মিডফিল্ডে শুরু থেকে যারা কর্তৃত্ব করবে, ম্যাচ তাদের। অর্থাৎ মাঝমাঠ যার ম্যাচ তার।

আমার ভবিষ্যদ্বাণী, বায়ার্নের পক্ষে ৫২-৪৮।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

champions league alvito d'cunha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE