Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘুমপাড়ানি ফুটবলে আরও ম্লান দেখাচ্ছে ওডাফাকে

সাংবাদিক সম্মেলন সেরে উঠে যাওয়ার মুখে নিজের দু’হাত মাথায় রাখলেন করিম বেঞ্চারিফা। হাসতে হাসতে বললেন, “রাতে বার্সেলোনা ম্যাচটা দেখে আমাদের ম্যাচটা ভুলে যেতে চাইব। খুব খারাপ হয়েছে খেলাটা।” মোহনবাগানের একের পর এক ব্যর্থতার পর নানা অজুহাত শোনা যায় যাঁর মুখে, সেই করিমের মুখেও উলটপুরাণ!

বলের নাগাল পেতে। শনিবার ওডাফা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

বলের নাগাল পেতে। শনিবার ওডাফা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০২:১৩
Share: Save:

মোহনবাগান ০

মহমেডান ০

সাংবাদিক সম্মেলন সেরে উঠে যাওয়ার মুখে নিজের দু’হাত মাথায় রাখলেন করিম বেঞ্চারিফা। হাসতে হাসতে বললেন, “রাতে বার্সেলোনা ম্যাচটা দেখে আমাদের ম্যাচটা ভুলে যেতে চাইব। খুব খারাপ হয়েছে খেলাটা।”

মোহনবাগানের একের পর এক ব্যর্থতার পর নানা অজুহাত শোনা যায় যাঁর মুখে, সেই করিমের মুখেও উলটপুরাণ!

কিন্তু সঞ্জয় সেনও তো একই কথা বলছেন। “খেলাটা ভাল হয়নি। একেবারেই উচ্চমানের হয়নি। তবে আমাদের একটা পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যেটুকু খেলেছি কিন্তু আমরাই খেলেছি,” হতাশ শোনায় মহমেডান কোচের গলা।

অথচ শনিবার দুপুরে যুবভারতীর মিনি ডার্বি হাইভোল্টেজ হওয়ার রসদের অভাব ছিল না। চোট সারিয়ে বহু দিন পর গোলের খিদে নিয়ে পুরো নব্বই মিনিট মাঠে ছিলেন ওকোলি ওডাফা। জোসিমারের সামনে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার সোনালি দৌড়ে টিকে থাকার যুদ্ধ ছিল। সবথেকে বড় কথা, ম্যাচ জিতলে অবনমনের কঠিন লড়াইয়ে অন্তত একটা বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে ফেলতে পারতেন দুই কোচ-ই।

কিন্তু সে সব যুদ্ধ-টুদ্ধ তো বাক্সবন্দি করে রেখে মাঠে নেমেছিলেন দুই কোচকরিম বা সঞ্জয় কেউই তো ম্যাচটা হারতে চাননি! চাননি হয়তো জিততেও। নিট ফল, ম্যাচ ড্র। পয়েন্ট ভাগাভাগি। এই মরসুমের আগের তিনটি ম্যাচের মতোই।

যে ম্যাচে কোনও উইং প্লে থাকে না। ভরে থাকে অজস্র মিস পাস। সেট পিসের চূড়ান্ত দৈন্য বারবার সামনে এসে পড়ে। মাঝমাঠ ভরে যায় পায়ের জঙ্গলে। অ্যাটাকিং থার্ডে ফেলে দেওয়া হয় বিপক্ষের গোল আটকানোর জন্য নিজেদের রক্ষণের লক-গেট। সেই ম্যাচ কখনও প্রাণবন্ত হয় না। হতে পারে না। বরং দেখতে দেখতে মাথা ধরে যায়। স্যারিডন কিনে নিয়ে বসতে হয় গ্যালারিতে। চৌম্বকে এ দিনের করিম বনাম সঞ্জয়ের যুদ্ধের নির্যাস এটাই।

ম্যাচের আগে ভাবা গিয়েছিল, ওডাফা হবেন করিমের টেক্কা। শেষ পর্যন্ত কী হলেন? চূড়ান্ত আনফিট দু’কোটির গোলমেশিন পুরো নব্বই মিনিট কার্যত জোর করে থাকলেন মাঠে। দুটো ভাল পাস করলেন, একটা গড়ানে শট। বাকি সময়টা শুধুই বৈকালিক ভ্রমণ! এ দিনের ওডাফাকে দেখে সাংসদ-ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধায়ের মন্তব্য, “মোহনবাগান তো দশ জনে খেলল। ওডাফা শুধু হাত-পা ছুঁড়ে গেল। ওকে বয়ে বেড়ানোর কোনও মানে হয় না।”

ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচ ড্র করলেও, ওই ম্যাচে মোহনবাগান কিন্তু বেশ পরিকল্পিত ফুটবল খেলেছিল। ছন্দে ছিল গোটা টিমই। এ দিন মোহন-অধিনায়ক নামার সঙ্গে সঙ্গেই পুরনো চেহারায় ফিরল করিমের টিম। যে বল পাচ্ছে সেই ওডাফাকে তা তুলে দিচ্ছে। ফলে হল কী, বাগানের খেলাটাই ছন্নছাড়া হয়ে গেল। সাদা-কালো কোচ স্বীকার করলেন “ওডাফাকে আটকানোর জন্য আমার ফুটবলারদের কোনও কষ্ট করতে হয়নি।” রাতে ফোনে ধরা হলে ওডাফাও বলে ফেললেন, “আমি নিজেই হতাশ।”

অনেক অন্ধকারের মধ্যে আলো খুঁজতে গেলে অবশ্য তা কিছুটা হলেও প্রাপ্য মহমেডানের। মাঝেমধ্যে ডুরান্ড-শিল্ড বিজয়ীদের দেখে মনে হয়েছে, টিমটার মধ্যে কিছুটা হলেও একাত্মতা আছে। জোসিমার, মণীশ মৈথানিরা ম্যাচের শুরু করেছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজেই। বল তুলে খেলার বদলে মাটিতে বল রেখে ছোট-বড় পাসে মোহনবাগানের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গোল করার জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন মহমেডান সমর্থকরা, সেই জোসিমারও তো ওডাফার মতো বিগ জিরো। গুঁতোগুতিই তাঁর একমাত্র সম্বল। কী ভাবে যে এই ব্রাজিলিয়ান আই লিগে দশটা গোল করলেন কে জানে? অন্তত দুটো ভাল সুযোগ নষ্ট করলেন জোসিমার।

নব্বই মিনিটে দুটো ব্যাপার ছিল লক্ষণীয়। এক) দু’দলের রক্ষণের জমাট হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। যে জন্য খেলাটা হল বক্স টু বক্স। দুই) মাঝমাঠে বল রেখে দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেন ডেনসন-ইসফাকরা। এতে খেলাটা আরও ক্লিশে হয়ে গেল।

বেঙ্গালুরুর কাছে চার্চিল হেরে যাওয়ায় সামান্য স্বস্তি পেলেও অবনমন বাঁচানোর জন্য বাগানের কাছে পরের রাংদাজিদ ম্যাচটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করিমের টিমের সমস্যা হল, তারা সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। ১৯ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট ইচেদের। সেখানে মহমেডানের পয়েন্ট ১৭ ম্যাচে ১৭। লিগ টেবিলে নীচের দিকের অঙ্কটা তাই ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে। করিম বলে গেলেন, “শিলংয়ে গিয়ে পরের রাংদাজিদ ম্যাচটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

কিন্তু গতবারও কলঙ্কিত ডার্বির জেরে ফেডারেশন পয়েন্ট শূন্য করে দেওয়ার পর অবনমনের লড়াই করে বেঁচে গিয়েছিল বাগান। করিম মানছেন এ বার লড়াইটা আরও কঠিন। “আমি প্রায় ৩৭টি ম্যাচ এ মরসুমে খেলে ফেললাম। তবে চার বিদেশি একসঙ্গে পেয়েছি দশ ম্যাচে।”

ম্যাড়মেড়ে ম্যাচে রেফারিং নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেল। বিতর্ক তুলল সাদা-কালো শিবির। মহমেডানের একটি কর্নার কিক ক্রিস্টোফারের হাতে লাগে বাগান বক্সের মধ্যে। পেনাল্টি দাবি করেছিলেন লুসিয়ানো-ইসফাকরা। কিন্তু গোয়ার রেফারি তেজস নাগভেনকর সেটা গ্রাহ্য করেননি। দু’দল নিজেদের বাঁচানোর খেলা খেলছে দেখে রেফারিও কি তাতে শামিল হলেন? কে জানে!

মোহনবাগান: শিল্টন (সন্দীপ), শৌভিক, কিংশুক, ইচে (রোউইলসন), প্রীতম, ডেনসন, সাবিথ (পঙ্কজ), কাতসুমি, মণীশ ভার্গব, ক্রিস্টোফার, ওডাফা।

মহমেডান: অশোক, নির্মল, লুসিয়ানো, সন্দীপ, ধনরাজন, বসন্ত (অসীম), মণীশ মৈথানি, রাকেশ, ইসফাক (নবি), তারো (পেন), জোসিমার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE