হিউমকে রুখে আটলেটিকোর আক্রমণ এ ভাবেই নির্বিষ করল জন আব্রাহামের দল।
নর্থ ইস্ট ১ : আটলেটিকো ০ (ভেলেজ)
নর্থ ইস্টের কাছে শুক্রবার হারার পর মাথায় হাত দিয়ে বেঞ্চে বসে পড়েছিলেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। চোখে মুখে তখন শুধুই ছিল অসহায়তা।
পর পর দু’ম্যাচে পরাজিত, বিধ্বস্ত আটলেটিকো দে কলকাতা শিবিরে এখন যেন বেজে চলেছে বিজয়া দশমীর করুণ সুর।
হঠাৎ করেই যেন ভেঙে গিয়েছে হাবাসের টিমের লড়াকু মানসিকতা! হিংস্র নেকড়েটা রাতারাতি পাল্টে একেবারে ভিজে বেড়াল হয়ে গিয়েছে!
এফসি পুণে সিটির কাছে হারের পর এত দিন আইএসএল তালিকার লাস্টবয় হয়ে থাকা নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কাছেও হারতে হল হাবাসের ছেলেদের। আর এ দিনের জয়ের ফলে জন আব্রাহমের টিম উঠে এল লিগ তালিকায় ছয়ে। আটলেটিকোর সম সংখ্যক ম্যাচ (পাঁচ) খেলে তাদের সংগ্রহ ছয় পয়েন্ট। আটলেটিকোর সাত।
যে টিমটা শুরু থেকে ভয়ডরহীন মানসিকতা নিয়ে এগোচ্ছিল, তারাই কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে।
কলকাতার এ হেন শোচনীয় পরিস্থিতির কারণ কী?
এ দিনের ম্যাচ দেখে যে কারণগুলো পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বড় কারণ, নর্থ ইস্টকে সে ভাবে আটলেটিকো গুরুত্বই দেয়নি। হাবাস নিজের ৪-২-৩-১ স্ট্র্যাটেজিতেই টিম নামিয়েছিলেন। আক্রমণকে অস্ত্র করেই জন আব্রাহামের টিমকে বধ করতে চেয়েছিলেন কলকাতার কোচ। পাশাপাশি গুয়াহাটি স্টেডিয়ামের নর্থ ইস্ট সমর্থকদের শব্দব্রহ্মের কথা হয়তো ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি হাবাস। এই শব্দব্রহ্ম যে কতটা চাপ তৈরি করতে পারে তা এ দিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে আটলেটিকো। আইএসএলে সব থেকে বেশি সমর্থক আসছে গুয়াহাটিতেই। স্বভাবতই ম্যাচের শুরু থেকে ব্রুনোদের পাশাপাশি নর্থ ইস্টের সমর্থকরাও অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল আটলেটিকোর। যার জেরে শুরুতেই চাপে পড়ে যান বোরহা, জাভি লারা, বলজিৎরা। তবে টিমের খারাপ মুহূর্তে এ দিন ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন গোলকিপার অমরিন্দর সিংহ। তিনি না থাকলে হয়তো বিরতির আগেই এক-দু’টো গোল হজম করে ফেলতে হত অর্ণব মণ্ডল, তিরিদের।
চাপ বাড়াল গ্যালারির চিৎকারও। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা কিছুটা ছন্দে ফেরে। হিউম-জাভি লারা-বলজিতের ত্রিকোণ আক্রমণে সাময়িক কেঁপে যায় নর্থ ইস্টের রক্ষণও। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ হয় আটলেটিকো। বরং গোল না পেয়ে অকারণ ফাউল করতে থাকেন রিনো অ্যান্টো, বোরহারা। এ দিন আটলেটিকোর কোনও ফুটবলার যদি লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়তেন, তবে অবাক হওয়ার কিছুই ছিল না। আটলেটিকো না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে ভেলেজের দুরন্ত গোলে ১-০ করে পাহাড়ের টিমটি। তবে রক্ষণের ভুলেই এ দিন মূলত পিছিয়ে পড়তে হল কলকাতার টিমকে। রক্ষণের দুর্বলতা কিন্তু আটলেটিকোর হারের আরও একটি কারণ। পুণে বা নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে অর্ণবদের পারফরম্যান্স দেখার পর হাবাসের কপালের ভাঁজ গভীর হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এর পাশাপাশি মরসুমের শুরু থেকেই চোট-আঘাত সমস্যায় জর্জরিত আটলেটিকো দে কলকাতা। এটা আবার কলকাতা টিমে গোদের উপর বিষফোঁড়া মতোই যন্ত্রণার। ফুটবলারদের একশো শতাংশ ফিট করতে মাদ্রিদে প্রায় মাস খানেকের আবাসিক শিবিরে কড়া অনুশীলন করিয়েছিলেন হাবাস। কিন্তু তাতে আদৌ কি লাভ হয়েছে? মরসুমের শুরুতেই চোট পেয়ে এখনও মাঠের বাইরে জুয়েল রাজা। মার্কি ফুটবলার পস্টিগাও চোট নিয়ে দেশে ফিরে গিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। চোটের জন্য এ দিনের ম্যাচে ছিলেন না আরাতা, জোসেমির মতো প্রথম একাদশের ফুটবলাররাও। নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে টিমে পাঁচটি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিলেন হাবাস। চোটের জন্যই এখনও পর্যন্ত টিমটাকে ঠিক মতো গুছিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি।
হাবাসের ভাগ্য সহায় বলেই নাকি গত মরসুম থেকে সাফল্য পেয়ে আসছে আটলেটিকো— এ ধরণের কথা বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছেন। এখন দেখার, এত সমস্যার মধ্যেও কোচের ভাগ্যে টিমের ভাগ্য ফেরে কি না!
আটলেটিকো: অমরিন্দর, আগাস্টিন, তিরি, অর্ণব, রিনো, বোরহা, নাতো, গ্যাভিলান, জাভি, বলজিৎ (সুশীল), হিউম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy