শ্রীবৎসকে অভিনন্দন মনোজের।
প্রশ্ন এক, বাংলা-রেলওয়েজ রঞ্জি ম্যাচ দেখতে কেন হাজির প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়?
প্রশ্ন দুই, ভারতীয় দলের নির্বাচক-প্রধান সন্দীপ পাটিল কেন ইডেনে?
প্রশ্ন তিন, তথাকথিত ‘র্যাঙ্ক টার্নার’-এ কি সত্যিই বল ঘুরছে?
বৃহস্পতিবার বিকেলে ইডেনের ক্লাব হাউসে উড়ে বেড়ানো এই তিন প্রশ্নের মধ্যে কোনটা বেশি কঠিন, তা নিয়েও কম জল্পনা হল না।
ঠিক হোক বা বেঠিক, প্রথম দুটোর সোজাসাপটা উত্তর, ক্রিকেট ভালবাসেন, তাই এসেছেন।
কিন্তু শেষ প্রশ্নের উত্তরটা বেশ ঘোলাটে। গত দু’দিন ধরে ইডেনের বাইশ গজকে ‘ডিজাইনার পিচ’ বানানোর চেষ্টার পরেও প্রথম দিনের খেলার পর উত্তরটা এত অস্পষ্ট কেন, সেটাই আসল প্রশ্ন!
এই প্রশ্নে আবার একাধিক উত্তর।
এক, সারা দিনে মাত্র এক ওভারে বল সত্যিই ঘুরেছে।
দুই, বল ঘুরছে, তবে কম। ‘র্যাঙ্ক টার্নার’ একে বলে না। ব্যাটসম্যানরা উইকেটে টিকে থাকতে পারলে বড় রান আসবে।
তিন, বল ঘুরতে শুরু করেছে। কাল থেকে আরও ঘুরবে।
চার, ইডেনের মাটির যা বৈশিষ্ট্য, তাতে এখানে র্যাঙ্ক টার্নার তৈরির চেষ্টা বৃথা। বাইশ গজ জমির কাঠিন্যই তা হতে দেবে না।
ম্যাচে খেলছেন, এমন ক্রিকেটার থেকে মাঠের বাইরে থাকা প্রাক্তন ক্রিকেটার ও মাঠকর্মীদের মতামত থেকে এই চার ধরনের উত্তরই উঠে এল। বোঝাও গেল, কেন ক্রিকেট পিচের সঙ্গে পাহাড়ের আবহাওয়ার তুলনা করা হয়। কোনওটাই ঠিকঠাক ধরতে পারা মুখের কথা নয়।
প্রথমে বাংলার আট রানে চার উইকেট ও পরে ১৩ রানে পাঁচ উইকেট পড়া দেখে যেটা মনে হতে পারে, মনোজ তিওয়ারি ও শ্রীবৎস গোস্বামীর দু’ঘন্টা চল্লিশ মিনিট ক্রিজে থেকে ১২৯ রানের পার্টনারশিপ দেখে সেটা আবার মনে না-ও হতে পারে। আবার শেষ বিকেলে পেসার অনুরীত সিংহের পরপর তিন উইকেট তোলা দেখে বাইশ গজ নিয়ে ধারণাটা আর এক রকম হতে পারে। সঠিক কোনটা, বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছে বিশেষজ্ঞদেরও। এক জন বললেন, “যে রকম হওয়ার কথা ছিল, সে রকম নয় বলেই মনে হচ্ছে। তবে এই উইকেটে রেজাল্ট হবে। বাংলার বোলারদের উপরই নির্ভর করছে সেটা কার পক্ষে যাবে।”
এমন কঠিন, অনুমানহীন উইকেটে দিনের শেষে বাংলার ২৬৮ তুলতে পারাটা সত্যিই কতটা কৃতিত্বের, তা শুক্রবার রেলের ব্যাটসম্যানরা না নামলে বোঝার উপায় নেই। রেলের বাঙালি ব্যাটসম্যান অনুষ্টুপ মজুমদার বললেন, “উইকেটের যা অবস্থা, তাতে টিকে থাকতে পারলে রান আসাটা কঠিন হবে না। ব্যাটসম্যানদের এখানে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।”
মনোজের ৬৮ ও শ্রীবৎসের ৬২ না থাকলে এই রানে পৌঁছনো হত না বাংলার। অভিমন্যুর ৫৭ ও সুদীপের ৪৪ এবং তাঁদের ৯৫-এর পার্টনারশিপ এই ইনিংসের ভিত। বাকিটুকু রেল বোলারদের সাফল্য। যার মধ্যে রয়েছে বাংলায় ব্রাত্য অফ স্পিনার অর্ণব নন্দীর পাওয়া দু’উইকেটও। নিজের সাত রানের মাথায় মনোজ যদি প্রথম স্লিপে কর্ণ শর্মার হাতে জীবন না পেতেন বা খাতা খোলার আগেই শ্রীবৎসের দেওয়া ক্যাচ যদি সেই কর্ণই না ফস্কাতেন, তা হলে অর্ণবের ঝুলিতে আরও দুই শিকার যোগ হত। বাংলাও আরও বড় বিপদে পড়ত। সদ্য অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সফর সেরে ফেরা কর্ণ অবশ্য সেই ভুল শুধরে নেন শ্রীবৎস ও দিন্দাকে ফিরিয়ে। কিন্তু ততক্ষণে বাংলার পুঁজি আয়তনে বেশ বেড়ে গিয়েছে। বাংলা শিবিরের ধারণা, এই পুঁজি যথেষ্ট। তবে একই শিবিরের স্পিনাররা এই উইকেট দেখে সন্তুষ্ট নন বলেই শোনা গেল।
অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজের টিভি বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালনের জন্য মুম্বই উড়ে যাওয়ার আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় লাঞ্চে ইডেনে এসে অরিন্দমদের ব্যাটিং টিপস দিয়ে গেলেন। বোলারদেরও কিছু বলে গেলে বোধহয় ভাল করতেন। যদিও সে জন্য বোলিং উপদেষ্টা রণদেব বসু আছেন। কিন্তু এমন উইকেটে হাতের বলকে কী করে কথা বলাতে হয়, সেই বিদ্যে শেখা উচিত রেলের পেসার অনুরীত সিংহের বোলিং দেখে। অভিমন্যু, মনোজ, সৌরাশিস, অমিতদের ফেরানোর পর অনুরীত বলে গেলেন, “এমন উইকেটে সফল হতে গেলে যে বাড়তি এফর্ট দিতে হবে, তা বুঝতেই পারছিলাম। সেটাই দিলাম। তার সঙ্গে লাইন-লেংথ ঠিক রেখেছি। তাতেই সাফল্য এল।” পাশাপাশি অনুরীত জানাচ্ছেন, উইকেটে ঘূর্ণি আছে। স্পিনাররা সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরই সতীর্থ অর্ণব আবার বললেন, “উইকেটে তেমন বল ঘুরছে কই? স্পিন আদায় করে নিতে হচ্ছে। ক্রমশ ব্যাটিং উইকেট হয়ে উঠছে।”
কী দাঁড়াল? বাংলার তৈরি ডিডাইনার পিচ নিয়ে ধাঁধার সমাধান বিপক্ষের কাছেও অমিল! এখনও!
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা
প্রথম ইনিংস ২৬৮
(মনোজ ৬৮, শ্রীবৎস ৬২, অভিমন্যু ৫৭, সুদীপ ৪৪, অনুরীত ৪-৪৫)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy