গত সন্ধে থেকে রাত, মধ্যবর্তী কয়েক ঘণ্টা বোধহয় আজীবন মনে রাখবেন অশোক দিন্দা। ড্রেসিংরুমের টিভিতে বিশ্বকাপ নির্বাচনের খবর দেখে এতটাই হতাশাবিদ্ধ হয়েছিলেন যে ঠিক করে নিয়েছিলেন, আজ আর মিডিয়ার সামনে নয়। যদি মনোকষ্টে মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ে জ্বলন্ত কিছু!
এখনও মঙ্গলবার দুপুরের পরবর্তী সময়ের ‘মিনিট বাই মিনিট’ বিবরণ বাংলার এক নম্বর পেসারের কাছে যদি কেউ চায়, অশোক দিন্দা নিশ্চিত দিয়ে দিতে পারবেন। ওই সময়ে নিজ ক্রিকেটজীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতের যন্ত্রণা শুধু তো নয়, সামলাতে হয়েছে আর এক সতীর্থকেও। সন্ধেয় নিজের ফ্ল্যাটে বন্ধু মনোজ তিওয়ারিকে নিয়ে গিয়েছেন, চা সহযোগে আড্ডা দিয়েছেন যাতে গুমোট পরিবেশটা হালকা হয়, তার পর মনোজকে ছেড়ে দিয়ে এসেছেন তাঁর ফ্ল্যাট পর্যন্ত। একই কমপ্লেক্সে এখন থাকেন ওঁরা দুই।
গত সন্ধে থেকে রাত, মধ্যবর্তী কয়েক ঘণ্টা মনোজ তিওয়ারিও আজীবন ভুলবেন না। চট করে প্রতিক্রিয়া দেওয়া তাঁর ধাতে নেই, বাদ পড়ার খবরটা শুনে প্রথম প্রথম দেনওনি। খারাপ লাগাটা চেপে রেখেছিলেন, দিন্দার গাড়িতে ফেরার সময় যখন খুঁজতে চাইছিলেন নতুন বিশ্বাসের কোনও খড়কুটো দিন্দার মন্তব্যটা এসেছিল।
ছাড়, বাদ দে। কাল মাঠে পাঁচটাকে তুলব, দেখে নিস!
“দিন্দার ওই একটা কথা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেল গত কাল। একটা লোক টিম থেকে বাদ পড়েও বলছে, তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় ইনিংসে আমি পাঁচটা উইকেট নেব। অসাধারণ লেগেছিল ওর মনোভাব,” ক্লাবহাউসে বসে যখন কথাগুলো বুধবার বলছিলেন মনোজ, দিন্দা পাশেই বসে। সতীর্থের কথা শুনছিলেন আর হাসছিলেন।
“আসলে সুনীল গাওস্কর একটা কথা বলেছিলেন না যে, তোমার জন্য যদি কেউ দরজা না খোলে তা হলে তোমাকে দরজা ভেঙে ঢুকতে হবে? আমিও সেটা চেষ্টা করছি বিশ্বাস করতে,” বলছিলেন মনোজ। একটু থেমে সংযোজন, “খারাপ লেগেছিল তো নিশ্চয়ই। আমি তো ভাল খেলছিলাম। কিন্তু এটাই জীবন। জীবনকে থামিয়ে রাখলে তো চলবে না।” থামেওনি। মনোজ ৯৭ করে গিয়েছেন বিশ্বকাপ টিম থেকে বাদ পড়ার পরের দিন। দিন্দা আবার এখনই অভিনব মুকুন্দকে ফিরিয়েছেন তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় ইনিংসে। আরও আসবে, একটা গোটা দিন এখনও পড়ে।
“ভেবেছিলাম অন্তত অস্ট্রেলিয়ার ত্রিদেশীয় সিরিজের টিমে থাকব। কিন্তু সেখানেও নেই দেখে খুব খারাপ লেগেছিল। মনে হচ্ছিল, তা হলে কি আমাকে আর কখনও কেউ ডাকবে না? কখনও আর ইন্ডিয়া খেলব না?,” ফুরফুরে থাকার প্রাণপণ চেষ্টাতেও মাঝেমধ্যে এখনও দিন্দা যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। “এমন নয় যে আমি পারফর্ম করিনি। কিন্তু কেউ কেউ কিছু না করে ঢুকে গেল। আর আমি পারফর্ম করেও কোথাও ডাক পেলাম না। বোর্ডের চুক্তিতেও আমি নেই।”
মনোজ-দিন্দা দু’জনেই বলে গেলেন, তাঁদের মোটিভেশন এখন বাংলা। বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি। দিন্দা হুঙ্কার দিয়ে গেলেন, বৃহস্পতিবার বোনাস পয়েন্ট সহ সাত পয়েন্ট তুলে মাঠ ছাড়বেন। বাংলাকে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন তিনি দেখতে চান। মনোজ আরও একটা সিঁড়ি উঠলেন। তাঁর মনে হচ্ছে, বাংলার যা টিম আছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরে একটা নয়, দু’তিন বার রঞ্জি আসা উচিত। দুই ব্রাত্য বঙ্গ তারকার কথাবার্তা, শরীরীভাষা একটা কথা নিঃসঙ্কোচে বলে দিল।
উপেক্ষা এখন ওই দুইয়ের প্রত্যাঘাতের বারুদ। যন্ত্রণাই এখন ওঁদের জবাবের জপমন্ত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy